সংগ্রাম দত্ত
সিলেট বিভাগের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ,ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও সমাজসেবী সত্যেন্দ্র কুমার রায় ( এস কে রায় ) ১৯২৮ সালে শ্রীমঙ্গল থানার মির্জাপুর ইউনিয়নের বৌলাশী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৪৮ সালে মাধবপুর থানার আন্দিউড়া হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং ভূনবীর দশরথ স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।অত:পর তিনি সিলেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে প্রায় ছয় মাস লেখাপড়া করেন । পরে তিনি শিক্ষা জীবনের ইতি টেনে চা ব্যবসায় যোগ দেন ।
শ্রীমঙ্গলের তৎকালীন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অজিত চৌধুরীর সাথে থেকে ব্যবসা শিখে প্রথমত: ফ্লায়িং ব্যবসা করে ও পরে স্থায়ীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন ।
শ্রীমঙ্গলে যে কজন লোক চা ব্যবসা করে বিশিষ্ট ধনীতে পরিণত হয়েছেন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মিষ্টভাষী, সদালাপী ও দানশীলতার জন্য সমাধিক পরিচিত ও জনপ্রিয় ছিলেন। ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে বৃহত্তর সিলেট জেলার সবকটি চা বাগানের মালিক ও ম্যানেজমেন্ট এর কাছে পরিচিত ই শুধু নয়, বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও রাজনীতিবিদদের সাথে সুসম্পর্কিত ছিলেন।
পাকিস্তান আমলে সামরিক একনায়ক ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আইয়ুব খান পাক গভর্নর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জার হাত থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করে দেশের সামরিক শাসন জারি করে রাজনৈতিক দল করার সুযোগ দিলেন এবং নিজে কনভেনশন মুসলিম লীগ নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করলে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দিলে তাঁকে ওই দলের সহ-সভাপতি পদে বরণ করা হয় ।
১৯৬৫ সালে তৎকালীন শ্রীমঙ্গল টাউন কমিটির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ওই পদে বহাল থাকেন ।
১৯৬৮ সালে তিনি ন্যাপ- মোজাফফরের যোগদান করেন এবং শ্রীমঙ্গল থানা ন্যাপের সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ওই দলে থেকে তিনি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে নেতৃত্ব দেন।
১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন ।
১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মিজান গ্রুপ থেকে মই প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তখন আওয়ামী লীগের মালেক গ্রুপের প্রার্থী মোহাম্মদ ইলিয়াস এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি পরাজিত হন । পরে পুনরায় আওয়ামী লীগের মূলধারায় তিনি যোগদান করেন ।
১৯৮৭ সালে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস এর মৃত্যুর পর শ্রীমঙ্গল থানা সভাপতি পদে আওয়ামীলীগের শূন্যতা দেখা দেয় । ফলে সিনিয়র সহ-সভাপতি কমলেশ ভট্টাচার্য ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদে বরিত হন। ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদে নিয়োগের ব্যাপারে গ্রুপিং সৃষ্টি হলে তাকে ঢাকাতে থাকাবস্থায়ই সভাপতি পদে সর্বসম্মত প্রস্তাবে মনোনীত করা হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ শ্রীমঙ্গল থানা কমিটির আহ্বায়ক পদে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন । তাছাড়া সার্বজনীন দুর্গা বাড়ির উচ্ছেদ প্রয়াসের বিরুদ্ধে সফল নেতৃত্ব দিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের কাছে সমধিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম । তাঁর দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি দীর্ঘদিন কিডনি রোগে ভুগে ১৯৯৫ সালের গত ২৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে তিনটায় রাজধানীর ধানমন্ডি রেনেল সেন্টার অ্যান্ড পলিক্লিনিকে মৃত্যুবরণ করেন।
সংবাদটি শেয়ার করুন