২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২১ ইং | ১২ই ফাল্গুন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৫৭ অপরাহ্ণ, জুন ৮, ২০১৮
প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাহার করে আত্মনির্ভরশীল ধারায় প্রগতিশীল বাজেট প্রণয়নের দাবিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ’র উদ্যোগে প্রতিবাদ-সমাবেশে সিপিবি ও বাসদ নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট গণ-প্রতারণামূলক। এ বাজের আয়-ধন বৈষম্য দ্রুত গতিতে বাড়াবে। প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাহার করে গণমুখী বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
আজ ৮ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সিপিবি‘র প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন। সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব জুলফিকার আলী।
উত্থাপিত বাজেট প্রস্তাবকে কমরেড সেলিম চটকদার ও গণপ্রতারণামূলক বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এই বাজেট ১% লুটেরা ধনিকদের আরও ধনী করবে এবং ৯৯% গরিব-মধ্যবিত্তকে আপেক্ষিকভাবে আরও দরিদ্র ও আর্থিকভাবে অসহায় করে তুলবে। তিনি বাজেটকে সাম্রাজ্যবাদ ও লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার গণবিরোধী দলিল হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
সিপিবি সভাপতি আরও বলেন, বাজেট প্রস্তাবের ভিত্তি হলো পুঁজিবাদের নয়া উদারবাদী প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন। এই বাজেটে সমাজতন্ত্রসহ রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির কোনো প্রতিফলন নেই। শুধু তাই নয়, এই বাজেট মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী আদর্শে প্রণীত হয়েছে। প্রস্তাবিত রাজস্ব আয়ে পরোক্ষ কর প্রত্যক্ষ করের দ্বিগুণ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢালাও ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ পরোক্ষ কর থেকে এই বর্ধিত রাজস্ব আদায়ের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা সকল পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে মূল্যস্ফীতির হারকে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে। আর এই দুঃসহ ভারের সবটাই বহন করতে হবে গরিব-মধ্যবিত্তসহ সাধারণ নাগরিককে। অথচ বিত্তবানদের উপর ধার্য্য প্রত্যক্ষ কর একই পর্যায়ে রাখা হয়েছে, কর্পোরেট কর কমানো হয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর রেয়াত অব্যাহত রাখা হয়েছে, অপ্রদর্শিত কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এই বাজেটে এভাবে গরিব জনগণের সম্পদ মুষ্ঠিমেয় লুটেরা ধনিকের হাতে প্রবাহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাজেটে কথার ফুলঝুরি ও মিথ্যা আশ্বাসে ভরা লোক দেখানো মনোতুষ্টির নিস্ফল প্রয়াস চালানো হলেও, এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে বাজেটের আসল লক্ষ্য হলো জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেশি-বিদেশি লুটপাটকারীদের পকেট ভারী করা।
সমাবেশে কমরেড সেলিম আরও বলেন, ধনীকে আরও ধনী এবং গরিবকে আরও গরিব করা, ধন-বৈষম্য ও শ্রেণি-বৈষম্য বৃদ্ধি করা, সামাজিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বৃদ্ধি করা ইত্যাদি হবে এই বাজেটের ফলাফল। এই বাজেট জাতির অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও নাজুকতা বাড়িয়ে তুলবে।
কমরেড সেলিম আরও বলেন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ পর্যাপ্ত পরিমানে বৃদ্ধির দাবি অগ্রাহ্য করা হয়েছে এবং উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে আনুপাতিক বরাদ্দ কমানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য কিছু প্রতীকী পদক্ষেপের ছিটেফোঁটা যুক্ত করা হয়েছে। বাজেট ও সম্পূরক বাজেটের মধ্যে বিপুল পার্থক্য একথাই প্রতিষ্ঠা করেছে যে বাজেট প্রস্তাব নিছক একটি কথার কথা মাত্র। বাজেটকে অনির্ভরযোগ্য ও অবাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবে পরিণত করা হয়েছে। বাজেটের তথ্য-ভিত্তির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তাই, প্রস্তাবিত জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সরকারের আন্তরিকতা ও সেসব বাস্তবায়নে তার সক্ষমতা-যোগ্যতাও মানুষের মনে প্রশ্নবিদ্ধ।
সিপিবি সভাপতি স্থানীয় সরকারের জন্য বাজেটের ৩৩ শতাংশ থোক বরাদ্দ এবং তার ব্যয় স্থানীয় সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করার নীতি গ্রহণের দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে কথামালার ফুলঝুড়িতে ভরা, গতানুগতিক আখ্যা দিয়ে বলেন, এ বাজেট ধনী তোষণের। বাজেট ধনী-দরিদ্র বৈষম্য আরও দ্রুত বৃদ্ধি করবে। বাজেট ২০১৮-১৯ প্রণয়নে বৈচিত্র্যসৃষ্টি ও গণআকর্ষণ তৈরির প্রচেষ্টা থাকলেও তা অতীতের গতানুগতিকতা ও আমলাতান্ত্রিকতার বৈষ্টনী ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারেনি। বাজেট বক্তৃতায় গোটা আর্থিক ব্যবস্থার চলমান বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম-অপচয়, দুর্নীতি, দলীয়করণদুষ্ট স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। তিনি বাজেট প্রণয়নে যেমন সর্বস্তরের জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া অনুপস্থিত তেমনি বাজেট বরাদ্দ বাস্তবায়ন কার্যক্রমও অতীতের মতোই থাকছে স্বচ্ছতা ও জবাবাদিহিতাহীন।
কমরেড খালেকুজ্জামান আরও বলেন, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য যে গতিতে বেড়ে চলেছে বর্তমান বাজেট তা আরও দ্রুতগামী করবে এবং আগামী নির্বাচন ও বাজেট বাস্তবায়ন দুটোই হ-য-ব-র-ল অবস্থায় পতিত হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে।
Corporate Office:
6/A Eskatan Garden
Dhaka, Bangladesh.
Mobile: 017111-66826
Email: mansoumit@yahoo.com
Helpline - +88 01719305766