২৬শে মার্চ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
বাংলা ভাষার অন্যতম কবি কামাল চৌধুরীর জন্মদিন আজ । তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোয়েট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি কবি সৌমিত্র দেব ।
কামাল চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৭ সালের ২৮ জানুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিজয় করা গ্রামে। বাবা আহমদ হোসেন চৌধুরী ও মা বেগম তাহেরা হোসেনের ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। কামাল চৌধুরী কর্মক্ষেত্রে ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী নামে পরিচিত । তাঁকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের পদমর্যাদা দিয়েছে সরকার।এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন ।
কবি কামাল চৌধুরী বাবার হাত ধরে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে ছুটে এসেছিলেন রেসকোর্স ময়দানে। বালক বয়সে শোনা সেই ভাষণ কামাল চৌধুরীকে উদ্দীপ্ত করেছিল দেশপ্রেম এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বেড়ে উঠতে। আর পঁচাত্তরের পনের আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেক প্রতিষ্ঠিত কবিও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কবিতা লেখার সাহস পাননি। কিন্তু সব ভয় ভীতি উপক্ষো করে এই নারকীয় হত্যার প্রতিবাদ করে সেই সময়ে কবিতা লেখেন কামাল চৌধুরী। তাই সব পরিচয় ছাপিয়ে কবি কামাল চৌধুরীর সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং বাঙালি ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী উন্নয়নকামী পরিপূর্ণ খাঁটি এক মানুষ।
৭০ দশকের কবি কামাল চৌধুরী। মৌলিক চারিত্রিক স্বভাবজাত সত্তা তিনি একজন কবি- উত্তর আধুনিক এই কবির কবিতার প্রধান বিষয়বস্তু প্রেম ও দ্রোহ। সমাজচেতনা কামাল চৌধুরীর কাব্যপ্রেরণার সূত্র। তাঁর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য গীতিময়তা। এই কবির অন্যতম কাব্যগ্রন্থ টানাপোড়েনের দিন- যাতে মুক্ত ছন্দে নতুন কাব্যভাষার সূত্রপাত করেছেন তিনি। ২০১২ সালে তাঁকে বাংলা কবিতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রদান করা হয়।
১৯৭৩ সালে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মাতাল জীবন- কাব্যলক্ষীর কাছে চিরসমর্পণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও তসলিমা নাসরিনসহ সমসাময়িক কবিদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। এই সময়েই নিজেকে তিনি কবিতা পথিক হিসেবে চিত্রিত করেন। কবিতা লিখতে লিখতেই এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন সমাজবিজ্ঞানে। কিন্তু সেখানেই লেখাপড়ার গণ্ডি শেষ হয়ে যায়নি। এরপরে সরকারি চাকরিতে থেকেই ফাঁকে ফাঁকে নৃবিজ্ঞানে পিএইচ, ডি করেন। পি এইচ, ডি গবেষণা করেছেন গারো জনগোষ্ঠীর মাতৃসূত্রীয় আবাস প্রথা নিয়ে। ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০১৪ সালের মার্চ মাস থেকে জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি তথ্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আর এরপরে তিনি সরকারের সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নের সময় ১৯৮১ সালের বাংলা একাডেমি বইমেলা উপলক্ষ্য করে একদল তরুণ কবি জীবনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কামাল চৌধুরী তাদেরই একজন। এ উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দ্রাবিড় প্রকাশনী। একুশের বইমেলাতেই বেরিয়েছিল কামাল চৌধুরীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ মিছিলের সমান বয়সী। এই বইয়ে কবিতার সংখ্যা ছিল ৪৮টি। এই বইয়ের কবিতার ভাষা ও শৈলী বলে দেয় কবি শামসুর রাহমান তাঁকে প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। কামাল চৌধুরীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মিছিলের সমান বয়সী’ প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। এরপর চাকরি জীবনের ব্যস্ততা তাঁকে কবিতা থেকে কিছুটা দূরে ঠেলে দেয়। ৮১ থেকে ৯০ একটানা নয় বছর কোনো কবিতার বই প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনি তার পক্ষে। এই বন্ধ্যাত্ব কেটে যায় ১৯৯১ সালে। এ বছর প্রকাশিত হয় কামাল চৌধুরীর দ্বিতীয় কবিতা সংকলন টানাপোড়েনের দিন। অতঃপর একে একে আরও আটটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সেগুলো হলো- এই পথ এই কোলাহল, এসেছি নিজের ভোরে, এই মেঘ বিদ্যুতে ভরা, ধূলি ও সাগর দৃশ্য-২, রোদ বৃষ্টি অন্ত্যমিল, হে মাটি পৃথিবীপুত্র, প্রেমের কবিতা এবং পান্থশালার ঘোড়া। ১৯৯৫ সালে তিনি প্রকাশ করেছেন একটি বাছাই সংকলন নির্বাচিত কবিতা। এই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে প্রকাশ করেছেন কবিতা সংকলন। ১১টি গ্রন্থ থেকে ৩০৯টি কবিতা এই গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। এছাড়াও কামাল চৌধুরী ২০০৭ সালে প্রকাশ করেন কিশোর কবিতা সংকলন আপন মনের পাঠশালাতে। ১৯৭৫ সালে আলী রীয়াজ এর সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন সত্তর দশকের কবিদের কবিতা। কাজের স্বীকৃতি হিসাবে ২০০০ সালে পেয়েছেন রুদ্র পুরস্কার, ২০০৩ সালে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সৌহার্দ্য সম্মাননা, ২০০৪ সালে কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৮ সালে পেয়েছেন জীবনানন্দ পুরস্কার, ২০১০ সালে সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার, ২০১০ সালে পান দরিয়ানগর কবিতা সম্মাননা এবং ২০১২ সালে কবি কামাল চৌধুরী লাভ করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার।
তিনি ১৯৮০ দশকের শুরুতে কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর কবিতায় সমসাময়িক প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। তাঁর প্রথম গ্রন্থের নাম ‘মিছিলের সমান বয়সী’, যার মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে তাঁর কবিসত্তার প্রধান প্রবণতা।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com