এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই উপজেলা প্রতিনিধিঃ
কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের অন্যতম ধানের আড়ৎ নুনুজ হাট-বাজার। প্রতি বছর সরকার হাট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় করলেও কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে নি এ হাটে। তবে এ হাটের প্রধান আকর্ষণ ধানের আড়ৎ। স্বনামধন্য ধানের আড়ৎ হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে ধান বিক্রি করতে আসে কৃষক ও ফরিয়া ব্যবসায়ীরা। এক সময় ২০ থেকে ২৫ ট্রাক ধান প্রতিনিয়ত লোড হতো এ হাটে। হাট ইজারাদার সূত্রে জানা যায়, এবছরের চলতি মৌসুমে মাত্র কয়েকদিন ১২-১৫ ট্রাক ধান লোড হয়েছে । মোসলেমগঞ্জ টু কিচক রাস্তার নুনুজ হাট-বাজারের প্রধান সড়ক মোড়ে অল্প একটু বৃষ্টির পানিতেই রাস্তার ওপরে থাকা গর্তগুলো বৃষ্টির পানিতে ভরে যায়। এখন বর্ষাকাল হওয়ায় সমস্যাটি আরো বড় আকার ধারণ করেছে। এতে করে বৃষ্টির পানিতে গর্ত আরো গভীর ও কাঁদার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার উপরের গর্তগুলো ধীরে ধীরে বড় হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে যানবাহন এবং পথচারীরা। যার কারণে অনেক সময় পথচারী ও যান চলাচল অনেক সময় বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। ফলে ধীরে ধীরে ঐতিহ্য হারাচ্ছে এ হাটটি। এ হাট থেকে এতো রাজস্ব আয়ের পরেও নেই কারো কোনো ভূমিকা । কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় দিন দিন থুবড়ে পড়ছে এ হাট-বাজার। ব্যবসায়ীরা জানায় রাস্তাসহ হাটের সকল উন্নয়ন কাজ করা না হলে হাটটি তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলবে। এতে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাবে। দ্রুত রাস্তা সংস্কারসহ হাটের যাবতীয় উন্নয়নের দাবি জানায় এলাকাবাসী।
নুনুজ হাটের সার ডিলার মোস্তাফিজুর ও আঃ কাইয়ুম বলেন, যাবতীয় কৃষিপণ্য নিয়ে বড় ট্রাক এ হাটে আসে এবং হাটের উপর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২০-২৫ টি পূন্য বাহী গাড়ি যাতায়াত করে। হাটের পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তিনমাথা মোড়ের প্রধান ফটকে পানি জমে থাকে। এতে কাদার সৃষ্টি হয় ফলে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চলাচল করে। দ্রুত রাস্তাসহ এ হাটের সার্বিক উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।
নুনুজ হাটের ধানের আড়ৎদার আঃ হাকিম আকন্দ এবং শাহ-আলম বলেন, অনেক দূর থেকে বড় বড় মিলাররা এ হাটে আসে ধান কেনার জন্য। কিন্তু, দুঃখের বিষয় হলো জনপ্রিয় হাটে আমরা তাদের পেশাব-পায়খানা করার জায়গা দিতে পারিনা। যার জন্য বিষয়টি নিয়ে আগত লোকজন অনেক সমালোচনা করে। এখন ধানের মৌসুম চলছে, এমতাবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা মেরামতসহ পুরাতন বাথরুম সংস্কার এবং আরো নতুন বাথরুম করার দাবি জানায় তারা।
এ হাটের সিমেন্ট ব্যবসায়ী আমিনুর ইসলাম মিলন এবং আকিমুদ্দিন বলেন, তিন মাথা মোড়ের অবস্থা খুবই বাজে। তাছাড়া রাস্তার পাশে ড্রেন না থাকায় পানি জমে অনেক জায়গায় কাদার সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষাকাল হওয়ায় দিন দিন সমস্যা আরো বেড়েই চলেছে। এতে আমাদের ভারী ওজনের যানবাহন গুলো অনেক ঝুঁকি নিয়ে বাজারে ঢুকতে হচ্ছে। হাটের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করা না হলে এ হাটের প্রতি ক্রেতা-বিক্রেতা দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ফলে সরকার তাদের রাজস্ব হারাবে ।
হাটের সবজি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজারের ভিতরে ঢোকার তেমন রাস্তা না থাকায় সরাসরি মালামাল নিয়ে ঢোকা যায় না আবার ক্রেতাদেরও অনেক চিপাচাপি অবস্থায় কাঁচা বাজারে ঢুকতে হয় যা অত্যন্ত কষ্টজনক। তাছাড়াও সরকারি ভাবে হাটের জায়গা তেমন না থাকায় নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
নুনুজ হাটে কাঁচা বাজার কিনতে আসা ইসমাইল হোসেন, রুবেল আহম্মেদ, শাহীন মন্ডল, তাজুল ইসলাম, হামিদুল ইসলাম, আইনুল হকসহ অনেকেরই অভিযোগ, এ হাটের প্রবেশ পথের যে অবস্থা তাতে যে কারো বাজারে আসার রুচি হারাবে। তাই হাটের যাবতীয় সমস্যার সমাধান ও উন্নয়ন করা হলে হাট তার ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
নুনুজ হাটের ইজারাদার নাসির হোসেন বলেন, ধানের আড়ৎ নামে পরিচিত এ হাট। ধানের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলার মিলাররা ধান নিয়ে যায় এ হাট থেকে। রাস্তার দুই পাশে দোকানপাট গড়ে উঠায় ড্রেন না থাকায় বাজারের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। শুধু তাই নয় হাটের জায়গার ও বাথরুমের বিভিন্ন কারণে পরিবেশ নষ্ট হয়ে পড়েছে। এসব দ্রুত সংস্কারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার জান্নাত আরা তিথি বলেন, নুনুজ বাজারের রাস্তার সমস্যার বিষয়টি আমার জানা আছে। কিছু দিনের মধ্যে রাস্তার কাজটি শুরু হবে। কাঁচা বাজারে ঢোকার রাস্তা এবং বাথরুমের বিষয়টি পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংবাদটি শেয়ার করুন