কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।দীর্ঘদিন ধরে একই স্টেশনে থাকার কারণে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ। এছাড়াও তাদের অনিয়মকে বাস্তবায়ন করার জন্য অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষদের বাধ্য করান বলে উপজেলার দুইটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুইজন প্রধান শিক্ষক ও একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন উপজেলার বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত একাধিক সহকারী শিক্ষক।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস.এম ইমাম রাজী টুলু।
অভিযোগ দায়ের করেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮ জন সহকারী শিক্ষক। অভিযোগে শিক্ষকরা জানান, বর্তমানে কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসের শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দীর্ঘ দিন যাবত একই কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করার কারণে তাঁরা নানাবিধ অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন।
অভিযোগগুলো হলো, বছরের মাঝামাঝি এসে স্কুল ড্রেস পরিবর্তন, শিক্ষা কর্মকর্তা সপ্তাহে দুই দিন অফিস করেন। ফলে অফিসের কাজগুলো ধীরগতির হয়ে পড়েছে, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা খেয়াল খুশি মত অফিসে আসেন, অফিসের কর্মচারিরাও আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে।
শিক্ষকদের সাথে বিভিন্ন সময় দুর্ব্যবহার করা হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী উপলক্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছে বাধ্যতামূলক শাড়ি ও পাঞ্জাবি বিক্রি করা হয়, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বসার জন্য নিন্মমানের টুল সরবরাহ করে অতিরিক্ত মূল্য ধার্য্য করে টাকা কেটে রাখা হয় এবং খেলনা বাবদ অতিরিক্ত মূল্য প্রদানে বাধ্য করা হয়, কিছু শিক্ষক আছেন যারা অনিয়মের এসব এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। তাদের মধ্যে উপজেলার তিনটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুইজন প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষক মিলে অন্যান্য শিক্ষকদের এসব করতে বাধ্য করেন, স্লিপ ফান্ড ও ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা শিক্ষা অফিসের লোকজন আত্মসাৎ করেন। স্লিপ ফান্ডের টাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০ জনের বেশি হলে (৫৪০০০+৫৪০০০)= ১০৮০০০/- টাকা, প্রাক প্রাথমিক ১০০০০/- টাকা এবং ক্ষুদ্র মেরামতের সর্বনিম্ন ৪০০০০/-টাকা ও সর্বোচ্চ ৭০০০০/- টাকা। এসব খাতে সবচেয়ে দূর্ণীতি গ্রস্থ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়ন ও তুমিলিয়া ইউনিয়নের দুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, যোগ্যদের প্রাপ্ত প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত করা হয়, প্রশ্ন-রেজাল্ট কার্ড-প্রসংশাপত্র ইত্যাদি সরবরাহ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়, শিক্ষা অফিসের লোকজন প্রায় সময়ই শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন, এসবের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তাদেরকে শোকজের ভয় দেখায় বলেও অভিযোগে উল্লেখ্য করা হয়।
বাঙ্গালহাওলা সবুর আশরাফী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাওন হোসেন জানান, অভিযোগের খবর পেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় তিনি বলেন, অভিযোগ দেওয়ার আগে আমাকে জানাতে পারতেন। আমি তো এসব কিছুই জানি না। শিক্ষা অফিসারের কথায় শিক্ষক শাওন বলেন, আপনি হচ্ছেন শিক্ষা অফিসের প্রধান কর্মকর্তা।আপনাকে অবগত না করিয়ে এসব কাজ করে কিভাবে?
অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের মধ্যে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ঘোনাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জেসমিন মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, কারা অভিযোগ করেছেন আমার জানা নাই।আমার জানা মতে কারো সাথে আমার কোন শত্রæতা নেই। তবে আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরার বক্তব্য নিতে অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। অফিসের তথ্য মতে তাঁর ছেলে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে হাসপতালে ভর্তি আছেন।
তিনি অফিসে থেকে ছুটি নিয়ে হাসপাতালে ছেলের সাথে আছেন।তবে তিনি মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। অভিযোগের কপি আগে হাতে পাই, তারপর অফিসে আসেন আপনার সাথে কথা বলবো।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুন্নাহার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অসত্য।শিক্ষকদের সাথে আমার কোন খারাপ সম্পর্ক নেই। শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে মাঝে মধ্যে তাদের সাথে আমার মুখ কালো করতে হয়। আর এটিওর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। আপনার অধীনে এটিও আপনি জানেন না বললে হবে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, অনেক সময় কাজ করার ক্ষেত্রে এটিও আমাকে জানায় না। পরে জানতে পারলে তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেন।
অভিযোগের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস.এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি।
সংবাদটি শেয়ার করুন