তৈয়বুর রহমান (কালীগঞ্জ) গাজীপুর)
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারে বদলে গেছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনজুর-এ-এলাহীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় অতীতের যে কোন সময়ের চেয়েও রোগীরা এখন আন্তরিকতার সাথে পূর্ণ সেবা পাচ্ছেন। বিগত দিনের চেয়ে বেড়েছে সরকারী রাজস্বও।
প্রয়োজনীয় জনবল সংকট থাকা সত্বেও এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সমন্বয় করে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নানা সংকট মোকাবেলার মাধ্যমে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগ, আন্তঃবিভাগ এবং বহির্বিভাগের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম এবং সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক কার্যক্রম তদারকির মাধ্যমে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্যখাতের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব অর্জন এবং এক অনন্য সুন্দর সফলতা বলে আখ্যা দিচ্ছে স্থানীয়রা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে আউট ডোর পেসেন্ট (ওপিডি) বেড়েছে কয়েকগুণ। ২০২১ সালে ওপিডি ছিল ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৩২ জন, ২০২২ সালে ওপিডি ছিল ছিল ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ১৭৯ জন ও ২০২৩ সালে ওপিডি ছিল ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৭৩৭ জন। একই সময় বেড়েছে হাসাপতালের জরুরী সার্ভিস, ভর্তি ও ভায়া রোগীর সংখ্যা। বেড়েছে নরমাল ও সিজারিয়ান রোগীর সংখ্যাও। গত তিন বছরে হাসপাতাল ইউজার ফি আদায় বেড়েছে (সরকারী রাজস্ব)। ২০২১ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সরকারী রাজস্ব আদায় হয়েছে ২২ লক্ষ ৫২ হাজার ১০৫ টাকা, ২০২২ সালে ৩০ লক্ষ ৬৫ হাজার ৫৪১ টাকা ও ২০২৩ সালে তা দাঁড়িয়ে ৭২ লক্ষ ৮৪ হাজার ১৫৬ টাকায়। ওই বছর প্রতি মাসে গড় আদায় হয়েছে ৬ লক্ষ ৬২ হাজার ১৯৬ টাকা।
সূত্র আরো জানায়, নিয়মিত করোনাসহ বিভিন্ন টিকাদান কার্যক্রমের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গণটিকা এবং বিশেষ টিকা প্রদান কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়। এ সময় হাসপাতালে খোলা পরিবেশে টিকা প্রদান করা হলেও ডা. মনজুর-এ-এলাহী হস্থক্ষেপে হয়েছে সুবিশাল টিকা প্রদানের সেট।
স্থানীয়রা জানান, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দৃশ্যপট একেবারে পাল্টে দিয়েছেন বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তিনি এখানে যোগদানের পর থেকে হাসপাতালে রোগীদের খাবার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ফুল-ফলাদির বাগান,অফিস স্টাফ ও রোগী এবং স্বজনদের অবসর সময় কাটানোর দর্শনীয় স্থান সৃজনের মাধ্যমে পরিবেশের উন্নয়নসহ নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাছাড়া রাত অবধি এই কর্মকর্তাকে হাসপাতালে কর্মব্যস্ত সময় পার করতেও দেখা গেছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, কিভাবে আরও সহজে প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যায় এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তাদের সঠিক দিক-নির্দেশনা এবং পরামর্শ প্রদান করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনজুর-এ-এলাহী স্যার। এখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের কর্মকর্তার সৃজনশীল ভাবনা এবং উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ সৈয়দ মো. শহিদুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে এক্স-রে মেশিন অচল অবস্থায় ছিল। এখন সেটি চালু করা হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। অপুষ্টিহীন শিশুদের জন্য আলাদা কেবিন, রোগীদের খাবার-দাবারের জন্য সু-ব্যবস্থা, শিশুদের স্থাপানের জন্য কেবিন, রোগীদের সিরিয়াল অনুযায়ী টিকিট ও চিকিৎসার জন্য সারিবদ্ধ লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিশোর-কিশোরীদের জন্য রয়েছে এডোলেসেস সেন্টার।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পারিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনজুর-এ-এলাহী বলেন, আমি এ হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই আমার টিম নিয়ে আমি হাসপাতালটিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করি। প্রথমে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন কর্মপরিবেশ তৈরি, অচল ও অর্ধসচল যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিশ্চিত করা ও মানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার।
সংবাদটি শেয়ার করুন