কেজি স্কুলের জন্য নীতিমালা করতে যাচ্ছে ডিপিই

প্রকাশিত: ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩

কেজি স্কুলের জন্য নীতিমালা  করতে যাচ্ছে  ডিপিই

কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)।

রাজধানীর অলিগলির ফ্ল্যাট বাড়িতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ইচ্ছামতো খোলা হচ্ছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল (কেজি)। কোনো কোনো স্কুলে পাঠদান করা হচ্ছে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে তোলা এসব স্কুলের লাগাম টানতে কাজ শুরু করেছে এই প্রতিষ্ঠান ।

ডিপিই সূত্র জানায়, প্রাথমিক অনুমোদনের ক্ষেত্রে আগের নীতিমালার শর্ত সহজ করার চিন্তাভাবনাও চলছে, যাতে স্কুলগুলো নিয়মের মধ্যে আসতে আগ্রহী হয়। এরই মধ্যে নীতিমালা সংশোধনে গঠন করা হয়েছে একটি সাব-কমিটি। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিপিইসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের রাখা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে।

 

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সারাদেশে বিপুল সংখ্যক কেজি স্কুল অনুমোদন ছাড়া চলছে। এসব স্কুলে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। অনেক স্কুলে শিশুদের ইচ্ছামতো বইয়ের বোঝা তুলে দেওয়া হচ্ছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। ন্যূনতম শিক্ষার পরিবেশ থাকা স্কুলগুলোকে অনুমোদনের আওতায় আনার কাজ শুরু হয়েছে।

 

তিনি বলেন, বেসরকারি কেজি স্কুলের অনুমোদনের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে অনুমোদনের জন্য সহজ করা হয়েছে শর্ত। সব স্কুল এক ছাতার নিচে আনতে নীতিমালা সংশোধনে গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি। তারা ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সেটি সংশোধন করে আমাদের কাছে দেওয়ার কথা। এরপর পর্যালোচনা করে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে।

 

 

কেজি স্কুলের অনুমোদন নীতিমালায় দেখা যায়, অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উপ-পরিচালক বরাবর আবেদন করলে তিনি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে তার প্রতিবেদন ডিপিইতে পাঠান। প্রতিবেদন সন্তোষজনক হলে তাকে ২২ শর্তে এক বছরের জন্য প্রাথমিক অনুমোদন দেয় অধিদপ্তর। এসব শর্তের মধ্যে বিদ্যালয়ে পানির ব্যবস্থা, সরকারের কাছে আর্থিক সুবিধা দাবি না করা, নিয়মিত অ্যাসেম্বলি ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন, কমিটি গঠন, এনসিটিবির বই পড়ানো, জাতীয় দিবস পালন, ভর্তি-বেতনে সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ, ল্যাব-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, তহবিল গঠন, শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের তথ্য থানায় সরবরাহ, নিজস্ব বা তিন হাজার স্কয়ার ফুটের ভাড়া বাসা, ঢাকা মহানগরের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা জামানতসহ অন্য শর্ত রয়েছে।

বলা হয়েছে, এসব শর্ত পূরণ হলে এক বছর পর ফের ২২ শর্তে তিন বছরের জন্য অস্থায়ী নিবন্ধনের অনুমোদন দেওয়া হবে। পরবর্তীসময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনসহ আগের মতো ২২ শর্তে পাঁচ বছরের মেয়াদে স্থায়ী নিবন্ধন দেওয়া হয়। ঢাকার বাইরে ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অনুমোদনের ক্ষেত্রে জামানত কম হলেও জমির পরিমাণ বেশি থাকতে হবে। পাঁচ বছরের জন্য স্থায়ী নিবন্ধিত স্কুল পাঁচ বছর পর পর নবায়ন করার বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মিজানুর রহমান বলেন, আমার প্রস্তাবে বেসরকারি স্কুল নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এরপর ২০১৩ সালে বেশ কিছু স্কুল নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়। এ পর্যন্ত তিন শতাধিক কেজি স্কুল নিবন্ধন পেয়েছে। আগে উপ-পরিচালকের অফিসে আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠালে প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হতো। ২০১৮ সাল থেকে এ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। উপ-পরিচালকের অফিস থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন পাঠালেও সেটি আটকে রাখা হচ্ছে। যোগাযোগ করলে নানান ত্রুটি দেখিয়ে ফাইল ফেরত পাঠানো হয়। টাকা না দিলে প্রাথমিক অনুমোদন পর্যন্ত দেওয়া হয় না।

 

তিনি বলেন, স্কুলগুলো সরকারের আওতায় আনতে প্রথমে যাচাই-বাছাই করে কিছু শর্ত দিয়ে এক বছরের জন্য প্রাথমিক অনুমোদন দিলে অন্যরা এর আওতায় আসতে আগ্রহী হবে। বর্তমানে বিষয়টি জটিল হওয়ায় কেউই এর আওতায় আসতে চায় না। এসব শর্ত পূরণ হলে তাদের তিন বছরের জন্য অস্থায়ী নিবন্ধনের আওতায় আনা যেতে পারে। স্থায়ী অনুমোদনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম নীতিমালায় রয়েছে। বর্তমানে সব কাগজ দেওয়ার পরও অজ্ঞাত কারণে আবেদন ফেরত পাঠানো হয়। এতে আবেদনকারীরা নিরুৎসাহী হয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন।

ডিপিই থেকে জানা যায়, গত মাসে অধিদপ্তরের ১২তম সভায় ৫৯৮টি আবেদন তোলা হয়। সেখানে ২৬৩টি আবেদন প্রাথমিক অনুমোদনের জন্য সম্মতি দেওয়া হলেও ৩৩৫টি আবেদন বাতিল করা হয়েছে। বাতিল আবেদন ফের উপ-পরিচালকের কাছে পাঠানো হবে। সেগুলো পুনরায় সংশোধন করে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে ডিপিইর অনুমোদন কমিটি। এর বাইরে শুধু ঢাকা প্রাথমিক শিক্ষা উপ-পরিচালকের অফিসে পড়ে রয়েছে ১০ হাজারের বেশি আবেদন।

 

 

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসেসিয়েশন নামে আরেক সংগঠনের মহাসচিব আব্দুল হাই জাগো নিউজকে বলেন, কেজি স্কুলের অস্থায়ী-স্থায়ী অনুমোদনের ক্ষেত্রে নীতিমালায় বেশ কয়েকটি জটিল শর্ত রয়েছে। এ কারণে অধিকাংশ স্কুল অনুমোদন নিতে আগ্রহী হচ্ছে না। অধিদপ্তর কেজি স্কুলগুলো নিবন্ধনের আওতায় আনতে পারছে না।

তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত স্কুলের মতো কেজি স্কুলেও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে। অধিকাংশ স্কুলের শর্ত অনুযায়ী অবকাঠামো নেই। নীতিমালার সব শর্ত মেনে অনুমোদন নিলেও সরকারের কোনো অনুদান দেওয়া হয় না। আগের শর্ত পূরণ করে স্থায়ী নিবন্ধিত কেজি স্কুলের জন্য সরকারি অনুদান ঘোষণা করা হলে সবাই এর আওতায় আসতে উৎসাহী হবে।

এ বিষয়ে ডিপিইর মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, কেজি স্কুলগুলো সরকারের আওতাভুক্ত করতে কাজ শুরু করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আমরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠালে আগের নীতিমালাটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, সব কেজি স্কুলে নতুন পাঠ্যক্রমের বই পড়ানো হবে। এ স্কুল মনিটরিং বাড়াতে সহজ শর্তের মাধ্যমে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়ে আনা হবে সরকারের আওতায়। এ লক্ষ্যে আগের নীতিমালায় জুড়ে দেওয়া শর্তগুলো পরিবর্তন করে সহজীকরণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2023
S M T W T F S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031