৪ঠা মার্চ ২০২১ ইং | ১৯শে ফাল্গুন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:২৫ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১
তাপস হালদার
বিগত একবছর যাবৎ করোনা মহামারীর কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন । এখনও মানুষ স্বাভাবিক জনজীবন ফিরে আসেনি।শারিরিক দুরত্ব বজায় রাখা,বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করা,হান্ড স্যানিটাইজার সহ নানাবিধ নিয়ম কানুনের মধ্য দিয়ে জীবনযাত্রা পরিচালিত হচ্ছে।এর মধ্যেই ঈদ,শারদীয়া দূর্গাপূজা, বড়দিন,বৌদ্ধ পূর্নিমার মত অনুষ্ঠান গুলো অনাড়ম্বর ভাবে পালিত হয়েছে।বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজাও অনাড়ম্বর ভাবে পালিত হবে সেটাই বাস্তবতা।
হিন্দু ধর্মাম্বলীদের অন্যতম বৃহত্তম পূজা হলো সরস্বতী পূজা।বিশেষ করে সনাতন ধর্মের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা এ পূজা করে থাকে।তবে অনেক গৃহেও সরস্বতী পূজা হয়ে থাকে।বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতী যাবতীয় নান্দনিক সৌন্দর্যের অধিকারী। তিনি তাঁর ভক্তদের জ্ঞানদান করে থাকেন।দেবী সরস্বতীর সমগ্র অবয়বের মধ্যে আছে শুধু অন্ধকার থেকে মুক্তির আলোকবার্তা। দেবী সরস্বতীর গায়ের বর্ণ শ্বেতশুভ্র,বসার আসন শ্বেতপদ্ম এবং বাহন শ্বেত হংস। শুভ্রতা সব অন্ধকার মালিন্য দূর করে।শুভ্রতা সর্ব সৌন্দর্যের প্রতীক ।দেবী সরস্বতীর এক হাতে পুস্তক অন্য হাতে বীণা। পুস্তক অজ্ঞতা দূর করে জ্ঞান বৃদ্ধি করে আর বীণার ঝংকার আমাদের মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। এক কথায় তিনি আলোর দিশারী,আমাদের পথ প্রদর্শক। সরস্বতী দেবীর বাহন হংস বা হাঁস। হংস একমাত্র প্রাণী যে জলে ও স্থলে সমান ভাবে চলতে পারে।দুধ ও জলের মধ্যে সে শুধু দুধ টুকুই গ্রহন করে থাকে জলটুকু রয়ে যায়।ঠিক তেমনি সমাজের শিক্ষিত বিবেকবান মানুষ গুলো ভালো-মন্দের ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে জানেন এবং তারা খারাপ কিছু পরিত্যাগ করে শুধু দুধের মতই ভালো নির্যাসটুকু গ্রহণ করে।
প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়,এজন্য এ পূজাকে শ্রীপঞ্চমী পুজাও বলা হয়।সাধারণত শিক্ষার্থীরা সরস্বতী পূজা করে থাকে বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই পূজোটা বেশি হয়ে থাকে,তবে পারিবারিক ভাবেও জ্ঞান লাভের জন্যও মানুষ এপূজা করে থাকে।পূজোর দিন শিক্ষার্থীরা মা সরস্বতীর কাছে জ্ঞান লাভের জন্য প্রার্থনা করে।মূল পূজোর পরে বই-খাতা,কলম,বাদ্যযন্ত্র পবিত্র করার জন্য সেগুলোকেও পূজো দেয়া হয় ।এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিশুদের শিক্ষাজীবন শুরু করার জন্য হাতেখড়ি দেয়া হয়।ভক্তরা পূজার আগের দিন সংযম পালন করে উপবাস থেকে অঞ্জলী প্রদান করে।পূজা শেষে হরেক রকমের প্রসাদ খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।কোথাও কোথাও পূজার পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রেওয়াজ প্রচলন আছে। সরস্বতী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবী হলেও বৌদ্ধ ও জৈন সম্প্রদায়ের লোকজনও এ পূজা করে থাকে।সারা বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সরস্বতী পূজা হয়ে থাকে।হাজার হাজার সরস্বতী পূজা হলেও মূল আকর্ষণ হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক জগন্নাথ হলের পূজা।জগন্নাথ হলের পূজাকে ঘিরে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই উৎসবের আমেজে মেতে উঠে।
সময়ের পরিক্রমনায় প্রতিমা ও মন্ডপ তৈরিতে এসেছে আধুনিকতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়া।পূজাকে কেন্দ্র করে মেলবন্ধনে মিলিত হয় ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ।অসাম্প্রদায়িক চেতনার সকল শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয় পূজা মন্ডপগুলোতে।ধর্ম যার যার,উৎসব সবার।সব ধর্মাবলম্বী মানুষের অংশগ্রহণে পূজা পরিনত হয় সার্বজনীন উৎসবে।
কিন্তু নিঃসন্দেহে করোনার প্রভাবে ছন্দপতন ঘটবে এবছরের সরস্বতী পূজায়।বিশেষ করে পূজাটি যেহেতু ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে করা হয় সেখানে বিগত এক বছর যাবৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ আছে,সেজন্য সেখানে পূজা হওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে।গত বছর জগন্নাথ হলে যেখানে ৭০ টি মন্ডপে পূজা হয়েছিল সেখানে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় পূজাটি জৌলুসবিহীন ভাবে হচ্ছে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো যখন বন্ধ আছে সেখানে পূজার ছন্দপতন হওয়াটাই স্বাভাবিক।
লেখক:সদস্য,সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা।
haldertapas80@gmail.com
Corporate Office:
6/A Eskatan Garden
Dhaka, Bangladesh.
Mobile: 017111-66826
Email: mansoumit@yahoo.com
Helpline - +88 01719305766