ওমর আনোয়ার
হাসান ইমাম এবং নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বাংলাদেশের দুইজন জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।তাঁরা দুজনেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, আর সেই কথাটা তাঁরা আবারো আরো একবার সকন্ঠে নিশ্চিত করলেন।আর এইটা করতে গিয়ে তাঁরা দুজনেই যে কিরকম একটা অসংলগ্ন, অযৌক্তিক ও অহেতুক কান্ড ঘটালেন, যে কোনো শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন সুস্থির মানুষের দৃষ্টিতে সেটাও অত্যন্ত গর্হিত বা নিন্দনীয় ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হবে। স্বাধীনতার ৪৬ বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপ্রবাহকে আমরা যারা বিগত প্রায় চার যুগ ধরে ধারণ করে আছি, তাঁদেরকেই একটা গভীর সংশয়ে ফেলে দিতে চাইলেন এই দুইজন সংস্কৃতিসেবী।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি বস্তু এবং এর প্রবাহকে কি করে বহমান রাখতে হয়, সেইটি খান আতাউর রহমান সদ্য-স্বাধীনতা উত্তর একটি দেশের ছিন্ন-ভিন্ন-বিপন্ন জনগোষ্ঠীকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন, তাঁর কালজয়ী “আবার তোরা মানুষ হ” চলচ্চিত্রটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে।এই ছবির কলাকুশলী, রচয়িতাসহ সকল সংশ্লিষ্ট জনরাই কোনো না কোনোভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সচক্ষে প্রত্যক্ষ করবার সৌভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলেন।প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, জন্ম থেকে জন্মান্তরে “আবার তোরা মানুষ হ” আমাদেরশিখিয়েছে, কি করে সুসংহত, সুবিন্যস্ত ও সংগঠিত প্রতিক্রিয়াশীল-বুদ্ধিবৃত্তিক-স্খলনকে চিহ্নিত করে আত্মপরিচয়ের দ্বারকে সদা উন্মুক্ত রাখতে হয়।
আজকাল ‘রাজাকার’ শব্দটাকে যেভাবে যথেচ্ছ, কারণে-অকারণে ব্যবহার করা হয় বা হচ্ছে, তাতে করে এইশব্দ ইতিমধ্যেই তার প্রকৃতঅর্থ হারিয়ে ফেলেছে।রাজাকার অর্থে একজন ব্যক্তির উদ্দেশ্যে যে ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ করা হয়,সেখানে মূলতঃ চারটি যুদ্ধাপরাধের যেকোনোএকটি বা সবকটির সংগে ব্যক্তিটির সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করা হয়।সেই যুদ্ধাপরাধগুলো হচ্ছে, একঃনরহত্যা , দুইঃধর্ষণ-নির্যাতন, তিনঃ লুন্ঠন ও চারঃ অগ্নিসংযোগ।এইগুলির কোনো একটির সংগে কোন ধরনের সংশ্রব না রেখেও প্রতিদিন কতজনকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্ট্যানবাজির খপ্পরে পড়ে এই ‘উপাধি’ পেতে হয়েছে বা হচ্ছে! অহেতুকএই ‘রাজাকার’ উপাধির কলংক যেন হঠাৎ গায়ে না মেখে যায়, তার জন্য কত মানুষের কত প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাই না দেখা যায় আজকাল!
যুদ্ধকালে, সম্মুখসমরে আত্মবলিদানের মহান মুক্তিফৌজ সবাই হতে পারেনি, সবাইকে হতেহয়ও নি।কিন্তুআড়ালে? নিরপরাধ অজস্র মানুষের নির্মম বলিদান আর বধ রুখতে কত মানুষের ন’মাসের কত সীমাহীন সংগ্রাম, নির্ভীক সাহসিকতা, নিঃস্বার্থ ত্যাগের মহিমা আরসবকিছুর চাইতে দামি মানুষের যে জীবন, রাশি রাশি সেইজীবনকে বাঁচাতে কতজনকেই তো নিমেষেই অর্থ-সম্পদ-নারী-সন্তান-নীতি-চরিত্র-ধর্ম-আদর্শকে জলাঞ্জলি দিতে হয়েছিলো আরেকটা মহান লক্ষ্যকে সামনেরেখে। সেইসময়কার পলায়নপর-সুবিধাবাদী, যুদ্ধে-অনুপস্থিত অগণিত রাজনৈতিক কুশীলবদের ‘সীমাহীনঅবদানের’ তুলনায় এইমানুষ গুলির অবদান কতটা অপাংক্তেয়?
আমাদের সংস্কৃতির ধারক বাহক বুদ্ধিজীবীগণ, যাদেরকে সাধারণত উদার-প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, অহিংসুক ও পরশ্রীকাতরতাহীন হবারই কথাছিলো, তারাই কিনা সহসাইকতটা ‘হৃদয়বিদারক’ভাবেপ্রতিক্রিয়াশীলবনেযান, যার প্রমাণাদিও অহরহই দৃশ্যমান!
ছফাভাই (জনাব আহমদছফা) বাহাত্তর সালেই তাঁর “সাম্প্রতিক বিবেচনাঃবুদ্ধিবৃত্তির নতুনবিন্যাস” গ্রন্থে, কি করেলাখো “শহীদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিতস্বাধীনরাষ্ট্রেভাড়াখাঁটাসংষ্কৃতিসেবীদেরস্বদেশপ্রেমওআত্মপ্রেমন্যাক্কারজনকভাবেএকাকারহয়েযায় [১]”, সেটিকেভ্রান্তিহীনভাবেচিহ্নিতকরেছেন।আরখানআতাউররহমানসেইএকইসুরেরগল্পকেউপজীব্যকরেইনির্মাণকরেছিলেন 'আবারতোরামানুষহ'।ছফাভাইয়েরকথাররেশধরেএখনোনির্দ্ধিধায়বলাচলে, হাসানইমামবানাসিরুদ্দীনইউসুফবাচ্চুভাইদেরমতননিজেদের “যারাপ্রগতিশীলবলেদাবিকরেথাকেনতাদেরকেউকেউদশভাগপ্রগতিশীল, পঞ্চাশভাগসুবিধাবাদী, পনেরভাগকাপুরুষ, পাঁচভাগএকেবারেজড়বুদ্ধিসম্পন্ন।মোটাবুদ্ধি, ভোঁতাঅনুভূতি, পুরোচামড়াইতাদেরটিকেথাকারমূলধন। …সাজানোমঞ্চেদাঁড়িয়েমাইনেভোগীনট-নটীরমতসেইপুরনোকথাবলেযাচ্ছেন, কঠস্বরথেকেঅনুভবকিংবাউপলব্ধিরকোনোতড়িৎসঞ্চারিতহয়না।তাদেরউচ্চারণথেকেকোনোগাঢ়প্রত্যয়েরদীপ্তিজনমানসেবিকিরিতহয়না…তাদেরউচ্চকন্ঠেচিৎকারেরমধ্যদিয়েনির্লজ্জসুবিধাবাদছাড়াঅন্যকোনোপ্রত্যয়ইধ্বনিতহয়না [২]”।
উদ্ধৃতিঃ
[১] বদরুদ্দীনউমর (মুখবন্ধ – আহমদছফারচিত ‘সাম্প্রতিকবিবেচনাঃবুদ্ধিবৃত্তিরনতুনবিন্যাস’ গ্রন্থ)
[২] আহমদছফা (‘সাম্প্রতিকবিবেচনাঃবুদ্ধিবৃত্তিরনতুনবিন্যাস’ গ্রন্থ)
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: [email protected]
Web Design by: SuperSoftIT.com