মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার:
বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৫ জনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়া হয়েছে দল থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, যে নির্বাচনে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল, কয়েক মাসের ব্যাবধানে এখন তা বৈধ হবে কী করে?
রাজনীতি ও আইনাঙ্গনে ওঠা এই প্রশ্নের জবাবও আসে রাজনৈতিক ও আইনি কৌশলের মিশেলে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের দাবি, জাতীয় নির্বাচনে খালেদা জিয়া যে তিনটি আসনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছিলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তারা খালেদা জিয়ার মনোনয়ন পত্রগুলো বাতিল করেছেন নির্বাচনি অপরাধের অভিযোগে। কিন্তু, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা হয়েছে দুর্নীতি মামলায়, নির্বাচনি অপরাধে নয়।
জানতে চাইলে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা খালেদা জিয়ার মনোনয়ন পত্র বাতিল করেছিলেন যে ধারায় (১২/১/ঘ), ওই ধারাটি নির্বাচনি অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেমন- কেউ যদি ভাঙচুর করে বা অন্য কোনোভাবে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে থাকে। কিন্তু তখন তো বেগম খালেদা জিয়া জেলে ছিলেন, তাই তার বিরুদ্ধে তো এই অভিযোগই আসতেই পারে না। তাছাড়া তখনও তো তার মনোনয়ন বৈধ হয়নি, এর মানে তিনি প্রার্থীই হননি। তাহলে প্রার্থী হওয়ার আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল করা হয় কীভাবে?
আরেক প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণ দেখিয়ে, সেখানে তার সাজার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তখন খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাননি। আশা করছি এবার পাবেন।
বগুড়া-৬ উপ-নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রার্থী হতে পারবেন বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরাও। তারা বলেন, বিষয়টি যত না আইনি, এর চেয়ে বেশি রাজনৈতিক।
তাদের মতে, দুই সময়ের প্রেক্ষাপট দুই রকম। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিল চেয়েছিল যতটা আগ্রহ নিয়ে, এখন তার প্রার্থিতার বৈধতা চাইবে এর চেয়ে বেশি আগ্রহ নিয়ে।
ব্যাখ্যা করে তারা বলেন, যে সংসদকে অবৈধ বলে আসছে বিএনপি, সেই সংসদের সদস্য হয়ে যদি দলটির চেয়ারপারসন সংসদে যোগ দেন, তাহলে রাজনৈতিক কৌশলে এগিয়ে থাকবে সরকার।
পূর্বানুমান করে তারা বলছেন, এবার খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিলে চেষ্টাই করবে না সরকার। বরং বিষয়টি যদি আদালত পর্যন্ত গড়ায়ও, সেক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিলে যেন সচেষ্ট না হয়, সরকার থেকে সেই ইঙ্গিতই থাকবে এটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের প্রতি।
প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু তিন আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন। এর বিরুদ্ধে তার পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা হয়।
আপিল শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, আমাদের আইনগত ভিত্তি হচ্ছে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বাতিলের আদেশে যা বলেছেন তা হলো, নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে যদি কেউ অপরাধ করেন, যেমন- মনোনয়নপত্র দাখিলের পর কেউ প্রচারণা শুরু করল বা কাউকে মারধর করল বা ভোটকেন্দ্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করল। অর্থাৎ, নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্খন করল।’ আইনজীবীরা বলেন, খালেদা জিয়ার সাজার কোনো প্রসঙ্গে কথা বলা হয়নি। এখানে বলা হয়েছে- নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়। খালেদা জিয়া বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। সেখানে থেকে তিনি কীভাবে নির্বাচনি আইন লঙ্ঘন করবেন?
পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারের রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাতিলই থাকে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন পত্র। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে গিয়েও মনোনয়ন পত্রের বৈধতা পাননি খালেদা জিয়া।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে থাকা খালেদা জিয়া তিনটি আসনে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে যাচাই-বাছাই শেষে তিন আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। এর বিরুদ্ধে তার পক্ষ থেকে ইসিতে আপিল করা হয়। ৮ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার আপিল নামঞ্জুর করে ইসি। প্রার্থিতা বাতিলের পক্ষে রায় দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) তিন কমিশনার। আর খালেদার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার রায় দেন। ওই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে ৯ ডিসেম্বর পৃথক তিনটি রিট করেন খালেদা জিয়া।
ওই তিনটি আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে খালেদা জিয়ার করা পৃথক রিট আবেদনের ওপর গত ১১ ডিসেম্বর বিভক্ত আদেশ দেয় হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। বেঞ্চের নেতৃত্ব দেয়া বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ রুল দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত স্থগিতের পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার অনুমতি দিতে নির্দেশ দেন। আর এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. ইকবাল কবির রিট আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন। পরে প্রধান বিচারপতি ১২ ডিসেম্বর বিষয়টি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি জে বি এম হাসানের একক বেঞ্চে পাঠান। এটি তৃতীয় বেঞ্চ হিসেবে পরিচিত। এই বেঞ্চ ১৮ ডিসেম্বর পৃথক তিনটি রিট সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন। এর ফলে খালেদা জিয়ার তিনটি রিট খারিজের সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতে চূড়ান্ত হয়।
উল্লেখ্য বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৫ জনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গত ২১ মে মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে স্কাইপে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
দলের মনোনীত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মাদ সিরাজ, বিএনপি চেয়ারপরসনের উপদেষ্টা ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র একেএম মাহবুবর রহমান, সাবেক জেলা সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: [email protected]
Web Design by: SuperSoftIT.com