গরম বাড়লে কি নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে পারে?
গরম বাড়লে কি নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে পারে?
redtimes.com,bd
প্রকাশিত এপ্রিল ৭, ২০২০, ০২:১১ অপরাহ্ণ
নুসরাত হোসেন
গরম বাড়লে কি নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে পারে? অনেকের মনেই এই প্রশ্ন । তুষারপাতের দিন শেষ । পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই এখন ঋতু পরিবর্তনের হাওয়া। বিশেজ্ঞরা আশা করছেন , এর ফলে করোনার প্রভাব কিছুটা কমবে ।তবে তার মাত্রা খুব বেশী হবে না ।
ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো নভেল করোনাভাইরাসও কোনো মৌসুমি সংক্রমণের ধাঁচ অনুসরণ করে কিনা তাও অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন তারা ।
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব বলেছেন,করোনার কারণে আমরা ইদানীং অনেক নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হচ্ছি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে এপিসেন্টার। শব্দটি আসলে ব্যবহার করা হতো আণবিক বোমা যেখানে বিস্ফোরিত হয় সেই জায়গাটাকে বোঝানোর জন্য। আণবিক বোমা বিস্ফোরণে ক্ষতির মাত্রাটা সবচেয়ে বেশি হয় ঐ জায়গাটিতেই। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে মানবজাতি তেমনটিই দেখেছে। লক্ষ্য করুন এবারের এই করোনা দুর্যোগের প্রথম এপিসেন্টারটি ছিল চীনে আর এখন তা ইউরোপে। আশংকা করা হচ্ছে করোনার পরের এপিসেন্টারটা হতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত উষ্ণ প্রধান কোন অঞ্চলে করোনার এপিসেন্টার দেখা যায়নি। পাশাপাশি করোনায় বিশ্বব্যাপী যে মৃত্যুর মিছিল, তাতে শতকরা ৯৫ জনই মারা গেছেন শীত প্রধান অঞ্চলে।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে বলেছে, ঠাণ্ডার উপসর্গ দেখানো করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলো নিয়ে প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে এর সাথে ঋতু বদলের যোগসূত্র আছে । শীতে এটা বেড়ে গেলেও বসন্তে আর থাকে না। তবে অল্প কয়েকটি করোনাভাইরাস আছে যেগুলো গরমেও সংক্রমিত হয় বলেই মনে হয়।
এইচসিওভি-এনএল৬৩, এইচসিওভি-ওসি৪৩, এইচসিওভি-২২৯ই নিয়ে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণা গত সপ্তাহে প্রকাশ হয়েছে। কয়েক বছর আগের নমুনা বিশ্লেষণ করে ওই গবেষণা বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার অনেক বেশি । কিন্তু গ্রীষ্মে এই প্রকোপ কমে আসবে ।
তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে করোনাভাইরাসের বিস্তারে বেশ-কম নিয়ে আরো কিছু গবেষণাতেও দাবি করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে গার্ডিয়ান। এরপরও কিছুটা সতর্ক থাকাকেই শ্রেয় মনে করছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ওই গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া রব অলড্রিজ।
গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রকৃতি এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা বলে ঋতু বদলের কারণে এই প্রকোপ প্রভাবিত হবে কিনা তা নিয়ে এখনই মন্তব্য করা যাচ্ছে না। এ কারণে এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটাই জরুরি।
বিজ্ঞানীদের মধ্যে কেউ কেউ হুঁশিয়ার করে বলছেন, এই ভাইরাস একেবারে নতুন। মানুষের শরীরে হঠাৎ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়া কঠিন। এ কারণেই গ্রীষ্ম এসে গেলেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ এখনো থামছে না।
ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ভাইরোলজিস্ট মাইকেল স্কিনার বলেন, ঋতু পরিবর্তন এই ভাইরাসের বিস্তারে প্রভাব ফেললেও তা খুব সামান্য হতে পারে। তা কোনোভাবেই সামাজিক দূরত্ব রাখার বিকল্প হতে পারে না।
রিডিং ইউনিভার্সিটির বেন নিউম্যান জোরের সঙ্গে সতর্ক করে বলেন, চীনে যখন নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয় তখন সেখানে জমাট শীত। এসময় সংক্রমণ দেখা দেয় আইসল্যান্ড ও বিষুবরেখায় থাকা ব্রাজিলের পাশাপাশি ইকুয়েডরেও। শীত থেকে বসন্ত আসতে আসতে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে যায়।”
আর তাই প্রকৃতির উপর নির্ভর না করে মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগে ভাইরাসকে মোকাবিলার ওপর জোর দেন তিনি।
রয়টার্স বলছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হঠাৎ ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় এই ভাইরাস গরমে কম ছড়ানোর তত্ত্ব নিয়ে এর মধ্যেই ব্যাপক সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
গরম এই অঞ্চলের অনেক দেশে তুলনামূলক কম সংক্রমণের ঘটনা বসন্তমুখী ইউরোপ ও আমেরিকার জন্য আশা জাগাচ্ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত এমনকি বাংলাদেশেও পরীক্ষার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণের হারও বাড়ছে। তাই সে আশার গুঁড়ে বালি হতে পারে।
সিঙ্গাপুরের লি কোয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসির অধ্যাপক টিক্কি প্যানজেস্তু বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এখন যা ঘটছে তাতে ‘গরমে কম ছড়ানোর’ তত্ত্ব খাটছে না।
ইউরোপের লোকেরা আশা করছে গরম আবহাওয়া এই ভাইরাসকে মেরে ফেলবে। এটার বাস্তবতা নিয়ে আমি খুবই সন্দিহান।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আগেই সতর্ক করে দিয়েছে যে, গরমে নভেল করোনাভাইরাস ছড়ানো কমতে পারে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিকল্প নেই ।