গাজীপুরে ‘প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ’ দিবস আজ

প্রকাশিত: ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২৩

গাজীপুরে ‘প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ’ দিবস আজ
সদরুল আইনঃ
মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গাজীপুরে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ দিবস আজ।
১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ গাজীপুরের জয়দেবপুরে সংঘটিত হয় প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ। তবে ১ মার্চ থেকে সমগ্র বাংলাদেশে চলতে থাকে দুর্বার আন্দোলন।
আন্দোলন বেগবান করার জন্য জয়দেবপুরে গঠন করা হয় সর্বদলীয় মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ। এ পরিষদের ছিল দুটি শাখা। একটি হাই কমান্ড, অপরটি অ্যাকশন কমিটি।
হাই কমান্ডের সদস্য ছিলেন সাবেক এমপি মরহুম মো. হাবিব উল্লাহ, প্রয়াত ডা. মনীদ্রনাথ গোস্বামী ও মরহুম এম এ মোতালেব।
আর অ্যাকশন কমিটিতে ছিলেন- গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক (আহ্বায়ক), মো. নজরুল ইসলাম খান, মো. নুরুল ইসলাম, মো. আয়েশ উদ্দিন, মরহুম মো. শহীদুল্লাহ বাচ্চু, মো. আব্দুস সাত্তার মিয়া, মো. হারুনুর রশিদ ভূঁইয়া, শহীদুল্লাহ পাঠান জিন্নাহ ও শেখ মো. আবুল হোসাইন।
সে সময় জয়দেবপুরের ভাওয়াল রাজবাড়িতে অবস্থান ছিল দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের। এ রেজিমেন্টের ২৫ থেকে ৩০ জন ছাড়া সবাই ছিলেন বাঙালি অফিসার ও সৈনিক। আর অধিকাংশই মনে মনে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক।
এসময় বাঙালিদেরকে চিরতরে দমিয়ে দেয়ার জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কৌশলে বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করার কার্যক্রম শুরু করে।
এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ঢাকার ব্রিগেড সদর দফতর থেকে নির্দেশ আসে রেজিমেন্টের ৩০৩ ক্যালিবার রাইফেলগুলো সদর দফতরে জমা দিতে হবে।
কিন্তু কোনো বাঙালি অফিসার ও সৈন্যরা অস্ত্র জমা দিতে রাজি ছিলেন না। এ খবর সদর দফতরে জানানো হলে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে পুনরায় খবর পাঠানো হলো ব্রিগেড কমান্ডার পাঞ্জাবি ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবার নিজে ১৯ মার্চ রেজিমেন্ট পরিদর্শনে আসবেন।
এটা যে আসলে বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে আসা তা বুঝতে অসুবিধা হলো না কারো।
ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব ১৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সৈন্যসহ ১৯ মার্চ দুপুরে জয়দেবপুর সেনানিবাসে এসে উপস্থিত হন।
কিন্তু বাঙালি সৈন্যদের সতর্ক অবস্থা দেখে তিনি অস্ত্র নেয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন।
পাঞ্জাব সৈন্যরা অস্ত্র নিতে এসেছে এ খবর দাবানলের মত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার জনতা লাঠি-সোটা, তীর-ধনুক, বল্লম হাতে জড়ো হতে থাকেন জয়দেবপুরে।
 তাদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় সমরাস্ত্র কারখানা ও মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির শ্রমিক কর্মচারীরাও।
ছাত্র জনতা ইট, পাথর, গাছ দিয়ে জয়দেবপুরের রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়। মালগাড়ির একটি ওয়াগন এনে জয়দেবপুর বাজার রেলক্রসিং বন্ধ করে দেয়া হয়। জনতার কাতারে কাজী আজিম উদ্দিনসহ সালাম ও সেকান্দর নামে তিনজন বন্দুক নিয়ে উপস্থিত হন।
ব্যারিকেড দেয়ার খবর শুনে জাহানজেব ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং সেগুলো অপসারণ করার নির্দেশ দেন। জাহানজেব সামনে বাঙালি সৈন্য ও পিছনে পাঞ্জাবি সৈন্য দিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হয়ে বাধাপ্রাপ্ত হলে গুলিবর্ষণের নির্দেশ দেন। কিন্তু বাঙালি সৈন্যরা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেন।
সেদিন টাঙ্গাইল থেকে রেশন পৌঁছে দিয়ে রেজিমেন্টের একটি ৩ টনি ট্রাক জয়দেবপুরে ফিরছিল। এতে হাবিলদার সিদ্দিকুর রহমানসহ পাঁচজন সৈন্য ছিল এবং তাদের সঙ্গে ছিল এস এম জি ও চাইনিজ রাইফেল।
জয়দেবপুর কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে আসামাত্র তাদের গাড়ি থামিয়ে জনতা ঘটনা বর্ণনা করে এবং তাদের গুলিবর্ষণের অনুরোধ করে। জনতার মনোভাব বুঝতে পেরে তারা গুলিবর্ষণ শুরু করেন।
এটাই ছিল বাঙালিদের পক্ষ থেকে প্রথম প্রতিরোধ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা।
পরে পাঞ্জাবি সৈন্যরা ব্যারিকেড অপসারণ করে জয়দেবপুর বাজারে প্রবেশ করে এবং কারফিউ ঘোষণা করে। এখানেই গুলিতে নেয়ামত ও মনু খলিফা শহীদ হন।
এরপর আরও ব্যারিকেড অপসারণ করে চান্দনা চৌরাস্তায় পৌঁছে পাঞ্জাবি সৈন্যরা প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখে পড়ে। এখনে হুরমত নামে অ স ম সাহসী কিশোর পাঞ্জাবি সৈন্যের রাইফেল কেড়ে নেয়ার সময় অপর সৈন্যের গুলিতে নিহত হন। এছাড়া কানু মিয়া নামে অপর একজন আহত হয়ে পরে মারা যান।
জয়দেবপুরের প্রতিরোধের কথা সমগ্র দেশে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে। জয়দেবপুরের প্রতিরোধকামী জনতার বীরত্বের কারণে সে সময় সমগ্র বাংলাদেশে স্লোগান ওঠে, ‘জয়দেবপুরের পথ ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’।
স্বর্ণালী ইতিহাসের এই দিনটি স্মরণে প্রতি বছর এদিনে গাজীপুর জেলা আ.লীগ,জেলা প্রশাসনসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে নানা কর্মসূচি গ্রহন করা হয় সমগ্র গাজীপুর জুড়ে।
আলোচনা সভা,শহিদদের কবর জিয়ারত,সভা সমাবেশ,রাষ্ট্রপতিসহ কেন্দ্রিয় আ.লীগ নেতাদের আগমন ঘটে থাকে এ দিনটিকে ঘিরে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের উষালগ্নে সংঘটিত সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের গর্বিত ইতিহাস বুকে ধারন করে স্বমহিমায় দাড়িয়ে থাকা দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী,জাতীয় চার নেতার একজন শহিদ তাজউদ্দিন আহমেদ ও আহসান উল্লাহ মাস্টারের জন্মতীর্থ গাজীপুরের প্রত্যেক মানুষ গর্ব অনুভব করে প্রতিরোধ যুদ্ধের মহানায়ক আ, ক, ম মোজাম্মেল হককে নিয়ে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2023
S M T W T F S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031