৬ই মার্চ ২০২১ ইং | ২১শে ফাল্গুন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ, মে ২, ২০১৯
প্রলয়ঙ্করী শক্তি নিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওড়িশা উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।
ভারতীয় আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস ঠিক থাকলে, ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বাতাসের শক্তি হাজার কিলোমিটার ব্যাসের বিস্তার নিয়ে এ ঝড় শুক্রবার দুপুর নাগাদ ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
উত্তরমুখী গতিপথ ধরে রাখলে কিছুটা দুর্বল হয়ে শনিবার সকাল নাগাদ ফণী হানা দিতে পারে বাংলাদেশের সীমানায়।
যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল ফণীর তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, সেখানে দশ কোটির বেশি মানুষের বসবাস। ফলে দুর্যোগ মোকাবিলায় বুধবার থেকেই বিপুল প্রস্তুতি শুরু করেছে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার।
বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী ভারতীয় রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার বেশ কিছু জেলায় জারি করা হয়েছে সতর্কতা।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরও সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় এ ঝড় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১০৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১০৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আর বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস বলছে, বর্তমান গতিপথ অব্যাহত থাকলে ভারতের ওড়িশায় আঘাত হানার পর পশ্চিমবঙ্গ হয়ে শনিবার সকালে বাংলাদেশে আসতে পারে ফণী। কিন্তু গতিপথ বদলে সমুদ্রের কোলঘেঁষে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানলে এ ঝড় খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
ভারতে দশ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি
ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতি যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার সরকারের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ওড়িশার নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য ৮৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সব মিলিয়ে ৮ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে।
কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে। ওড়িশা, অন্ধ্র প্রদেশ ও পশ্চিম বঙ্গে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ইউনিটগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভারতীয় কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর জন্য জাহাজ ও হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে।
ওড়িশার বিশেষ রিলিফ কমিশনার বিষ্ণুপদ শেঠি রয়টার্সকে বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে সতর্ক করতে সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করছি আমরা।
মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের। জরুরি ত্রাণ সহায়তার জন্য অর্থও বরাদ্দ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণী সোয়া তিনশ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসায় ভারতের পারাদ্বীপ ও বিশাখাপত্তম বন্দরের কর্মকাণ্ড বুধবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে শতাধিক ট্রেন।
জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত পুরী থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে পর্যটকদের সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার উপকূলীয় এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
ভারতে জাতীয় নির্বাচনের এই মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় ফণী হাজির হওয়ায় ওড়িশা রাজ্যের ১১টি উপকূলীয় জেলা থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ফণীর প্রভাবে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। ওড়িশার উপকূলীয় অঞ্চলে কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ মিলিমিটার ছাড়াতে পারে বলে ভারতীয় আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে।
দুই দশক আগে প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে ওড়িশা উপকূলে তাণ্ডব চালিয়েছিল একটি সুপার সাইক্লোন।
এরপর ২০১৩ সালেও বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল ভারতের এ রাজ্যে। তবে সেবার বিপুল সংখ্যক মানুষকে আগে থেকে সরিয়ে নেওয়ায় বহু প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়।
ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানার পর বাংলাদেশে আসতে পারে ধরে নিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।
বুধবার বিকালে সচিবালয়ে ‘ফণী’ মোকাবেলায় জরুরি প্রস্তুতি সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি উপকূলীয় সেনা ক্যাম্পগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে।
ইতোমধ্যে মাইকিং করে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয়েছে। উপকূলীয় জেলার ডিসিদের দুইশ মেট্রিক টন চাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে; জেলা প্রশাসকদের পাঁচ লাখ করে টাকা দেওয়া আছে জরুরি সহায়তার জন্য।
এছাড়া ৪১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ওই ১৯ জেলায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি আমরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছি।”
ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা এলাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য ছুটি বাতিল করে তাদেরকে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সব শাখা বুধবার থেকে অব্যাহতভাবে খোলা রাখা হয়েছে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য।
সেই সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অব্যাহতভাবে অফিসে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অল্প সময়ের নোটিসে তারা যাতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে, সেজন্য প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে।
বিরূপ আবহাওয়ার আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার পদ্মাসেতুতে দ্বাদশ স্প্যান বসানোর পরিকল্পনাও স্থগিত করা হয়েছে ।
Corporate Office:
6/A Eskatan Garden
Dhaka, Bangladesh.
Mobile: 017111-66826
Email: mansoumit@yahoo.com
Helpline - +88 01719305766