২৮শে মার্চ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:১০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
আইরীন নিয়াজী মান্না
মাও সে তুং; আধুনিক চীনের অবিসংবাদিত নেতা। চীনের জাতির জনক এবং আধুনিক চীনের রূপকার।
চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী চাংশার অরেঞ্জ আইল্যান্ড পার্কে মাও সে তুংয়ের একটি বিশাল ভাস্কর্য রয়েছে। ভাস্কর্যটি তার তরুণ বয়সের প্রতিকৃতি।
২০১৫ সালের কথা। আমি তখন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের (সিআরআই) বাংলা বিভাগে ফরেন এক্সপার্ট হিসেবে চাকরি করি। রাজধানী বেইজিংয়ে আমার অফিস। জুলাই মাসের শেষ দিকে কিছু ডেলিগেটস নিয়ে গেলাম হুনান প্রদেশে টুরে। সে সময় ২৯ জুলাই এই চাংশার অরেঞ্জ আইল্যান্ড পার্কে ঘুরতে গেলাম। দেখলাম সেই বিশাল ভাস্কর্য! সে কি অপরূপ পার্ক। সে কি বিশাল তার আয়তন।
পুরো অরেঞ্জ আইল্যান্ড পার্কটি চারদিকে একটি লেক দিয়ে ঘেরা দ্বীপের মতো। পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে কৃত্রিম এই লেকটি খনন করা হয়েছে। আকাশের গভীর নীল এসে মিশেছে লেকের পানিতে। ফলে লেকের সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে। পার্কে ঢুকতেই মহান নেতা কমরেড মাও সে তুং-এর বিশাল আকৃতির অবক্ষ মূর্তিটি চোখে পড়ে। এতো বিশাল মূর্তি যেন আকাশ ছুঁয়েছে। দূর থেকে দেখে মনে হয় আকাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কমরেড মাও। আমি মুগ্ধ!
প্রিয় এই নেতার সাথে ছবি তুলতে আমরা সবাই মত্ত হয়ে গেলাম। খতিয়ে খতিয়ে দেখলাম ভাস্কর্যটির নির্মাণশৈলী। বিশাল ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। পুরো ভাস্কর্যটি গ্রানাইট পাথর দিয়ে তৈরি।
জানা গেলো, ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মাওয়ের ১১৬তম জন্মদিনে এটি উন্মোচন করা হয়। ১৯২৫ সালে মাও সে তুংয়ের যুবক বয়সে লেখা একটি কবিতার কারণে ভাস্কর্যটির জন্য এ জায়গাটি বেছে নেওয়া হয়। মাও ছিলেন হুনান প্রদেশের সন্তান। চাংশা তার প্রিয় শহর। জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় তিনি এ শহরে কাটিয়েছেন। ‘চাংশা’ শিরোনামে তাঁর একটি ব্যাপক জনপ্রিয় কবিতা আছে।
ভাস্কর্যটি নির্মাণ করতে ২ বছর সময় লেগেছে। ২০০৭ সালে কাজ শুরু হয়। আর শেষ হয় ২০০৯ সালে। গোয়াংজু একাডেমী অব ফাইন আর্টস-এর শিক্ষক অধ্যাপক সিয়ে লি ওয়েনের নেতৃত্বে একদল ভাস্কর এই ভাস্কর্যটি তৈরি করেন। হুনানের স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে ও অর্থায়নে এটি তৈরি হয়। ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার। ভাস্কর্যটি ৩২ মিটার বা ১০৫ ফুট উঁচু। এর দৈর্ঘ্য ৮৩ মিটার (২৭২ ফুট) এবং প্রস্থ ৪১ মিটার (১৩৫ ফুট)। এটি নির্মাণের জন্য ফুজিয়ান প্রদেশ থেকে আট হাজার দৈত্যাকার গ্রানাইট পাথর চাংশায় আনা হয়।
মাও চীনের হুনান প্রদেশের শাং তান জেলার শাউ শাং চুং গ্রামের কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৯৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর তার জন্ম। তার বাবার নাম ছিল মাও জেন শেং। শুন সেন নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন। তার মা ওয়েন কুইমেই ছিলেন সরলপ্রাণ এক নারী এবং বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারি।
১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাও সে তুং চীন শাসন করেন। তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। মাও ১৯৪৩ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত দলের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বিবেচিত হন একজন বিশিষ্ট কমিউনিস্ট তাত্ত্বিক হিসেবেও।
এছাড়া তিনি বেশ কিছু বইয়ের লেখক এবং কবি হিসেবেও বিখ্যাত ছিলেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদে তার তাত্ত্বিক অবদান, সমর কৌশল এবং তার কমিউনিজমের নীতি এখন একসঙ্গে মাওবাদ নামে পরিচিত।
১৯৭৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে এই মহান নেতা মারা যান। তিয়েন আনমেন স্কয়ারের চেয়ারম্যান মাও স্মৃতি হলে তার দেহ আজও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সে গল্প আরেক দিন।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com