শেলী সেনগুপ্তা
আমাদের গর্বের শহর ঢাকা। এটি গর্ব করা বিষয়ও। কারণ আমরা রাজধানীর অধিবাসী। তাছাড়া আমাদের শহর মাত্র কিছুদিন আগে চারশ বছর পুর্তির গৌরব অর্জন করেছে। প্রাচীন ঐতিহ্যের নগরী ঢাকাকে ‘মসজিদের শহর’ও বলা হয়।
এতো গৌরবের বাহক এই শহরেও আজকাল কিছু সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে । তারমধ্যে একটি রাস্তায় বাহনের আধিক্য। ঢাকার রাস্তায় এখন প্রচুর যান চলাচল করে। তেমনি যানজটও হয় অনেক। এ শহরে এমন কোন নাগরিক নেই তিনি যানজটজনিত সমস্যা মোকাবেলা করেন নি।এই ভোগান্তির কথা বলে শেষ করা যাবে না। নগরীর জনসংখ্যার আধিক্য, রাস্তায় অপ্রশস্ততা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, রিক্সার আধিক্যই যানজটের কারণ।
এর সাথে যোগ করা যায় মানুষের আইন না মানার প্রবনতা। অনেক সময় সিগনাল উপেক্ষা করে গাড়ি চালানো এবং যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করাও একটা উল্লেখযোগ্য সমস্যা। শুধু রাস্তা নয়, ঢাকা শহরের ফুটপাতগুলোও এখন হকার এবং পথিপার্শ্বস্থ দোকানের দখলে চলে গেছে।
এখন ঢাকার মানুষ আর পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারে না। ইচ্ছে থাকলেও হেঁটে যাওয়ার দূরত্বও গাড়ি অথবা রিক্সার সাহায্য নিয়ে পাড়ি দিতে হয়। অথচ স্বাস্থ্যগত দিকটি বিবেচনা করলে হাঁটাহাঁটি অনেক সুফলদায়ক। সুস্থ থাকার জন্য হাঁটার কোন বিকল্প নেই। আমরা সবাই কম বেশি জানি হাঁটলে শরীর ঝরঝরে থাকে, কোলস্ট্রেরেল সমস্যামুক্ত থাকা যায়, উচ্চরক্তচাপ ও বহুমুত্র সমস্যা থেকেও স্বস্ত্বি মেলে। নিয়মিত হেঁটে বাজার হাট সম্পন্ন করলে অথবা কম দূরত্বের পথ হেঁটে চললে প্রয়োজনীয় কাজটি করার সাথে সাথে নিজের স্বাস্থ্যসেবাও হয়ে যায়।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের ভালোবাসার এই শহরে হেঁটে চলার উপায় নেই বল। পথচারীর ফুটপাত চলে গেছে হকার ও দোকানীদের দখলে। শুধু ততটুকু পথচারির জন্য রাখা আছে যেটুকু সংকীর্ণ, ভাঙ্গা এবং ম্যানহোলের ঢাকনাবিহীন। এ ফুটপাত হাঁটার চেয়ে দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ার জন্য বেশি প্রযোজ্য।
আমাদের প্রাচীন নগরী ঢাকার আয়তন দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু সে অনুপাতে ফুটপাতের আয়তন একটুও বাড়ে নি। ফলে যাদের একান্তই হেঁটে চলার দরকার তারা ফুটপাত না পেয়ে হাঁটার জন্য রাস্তা ব্যবহার করে। তাতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং নানা দুর্ঘটনাও ঘটে।
তাছাড়া আমাদের হাঁটার অভ্যাস না থাকার কারণে অথবা ফুটপাত না থাকার কারণে আমরা সামান্য পথও রিক্সায় পাড়ি দিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমরা ভুলে গেছি স্বাস্থ্যের জন্যই হাঁটা জরুরী। একটু সচেতন হলে সহজেই এই অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।
হাঁটার জন্য ফুটপাত, হকারের জন্য নয়, একথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু দরিদ্র শ্রেণির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ফুটপাত থেকে উঠিয়ে একটি স্থায়ী পুনর্বাসন ব্যবস্থা করার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। শুধু হকার পুনর্বাসন করলেই ফুটপাত সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। সাথে সাথে ফুটপাতগুলো সংস্কার করা অতি জরুরী।
নগরীর ফুটপাতগুলো যদি পথচারী চলাচলের জন্য অবাধ হয় তাহলে নাগরিকদের মধ্যে হেঁটে চলার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। এ অভ্যাস যেমন মানুষকে সুস্থ রাখবে তেমনি যানবাহনের উপর কিছুটা চাপ কমবে বলে আশা করা যায়।
নগর কর্তৃপক্ষ সবসময় সুন্দর ঢাকা তৈরিতে সচেষ্ট, তার সাথে যোগ করা যেতে পারে হকারমুক্ত ও জনচলাচল উপযোগী ফুটপাত ব্যবস্থাপনা।
সংবাদটি শেয়ার করুন