মোস্তফা মোহাম্মদ
বিনয়ী মানুষটির নাম যখন আমি মাইকে ঘোষণা করলাম, বাস্তব ক্ষেত্রে এর আগে আমি কখনো দেখিনি তাঁকে।
তিনি মঞ্চে গিয়ে বসলেন। সাধারণ বেশভূষার ভেতর থেকে অনন্যসাধারণ আলোকরশ্মি ঠিকরে বেরিয়ে জাগতিক ও মহাজাগতিক লীলাবৈচিত্রকে একত্রীভূত করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করলেন–আপন করে নিলেন জ্যোতির্বিদ,অধ্যাপক, লেখক দীপেন ভট্টাচার্য।
গল্পকার, কবি, বিজ্ঞান-লেখক দীপেন ভট্টাচার্য জন্মেছেন এলেঙ্গা, টাঙ্গাইল ১৯৫৯ সালে। বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্যের ছেলে, ব্যারিস্টার দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের ছোটভাই দীপেন ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল, নটরডেম কলেজ ও ঢাকা কলেজে পড়াশোনা করেছেন। মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থ বিদ্যায় মাস্টার্স এবং আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। আমেরিকার নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট ইন্সটিটিউটের গবেষক ছিলেন। চাকরি করেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড ক্যাম্পাসে জ্যোতিঃপদার্থবিদ হিসাবে। বর্তমানে গবেষণা করছেন ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড কমিউনিটি কলেজে। তিনি ২০০৬-২০০৭ পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলব্রাইট ফেলো হিসাবে পাঠদান করেছেন। তিনি বাংলাদেশের বিজ্ঞান আন্দোলন ও পরিবেশ সচেতনতার প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞান বিষয়ে নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন। এছাড়াও বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান-কল্পকাহিনিভিত্তিক ভিন্ন স্বাদের প্রকাশিত ‘অভিজিৎ নক্ষত্রের আলো’, ‘দিতার ঘড়ি’, ‘নক্ষত্রের ঝড়’, ‘নিওলিথ স্বপ্ন’, ‘নিস্তার মোল্লার মহাভারত ‘, ‘বঙ্গীয় ব-দ্বীপের অতীত ও ভবিষ্যত’, ‘মনীষার পাথরের বন’, ‘বার্ট কোমেনের ডান হাত ও অন্যান্য গল্প’, ‘অদিতার আধার’, ‘অসিতোপল কিংবদন্তী’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
নিস্তার মোল্লা তাঁর সৃষ্টির অনুসঙ্গী–অন্যতম প্রধান চরিত্র। নিস্তার মোল্লার ভেতর দিয়েই দীপেন ভট্টাচার্য বিশ্ব ও মহাবিশ্ব খুঁজে বেড়ান গল্পে-কবিতায়।
জীবন ও বিজ্ঞান, জীবন ও সমাজ, জীবন ও যুদ্ধ–এই ত্রিবিধ অভিজ্ঞানের সফল শিল্পসাধক দীপেন ভট্টাচার্য। উপস্থিত অথিতি ও হলভর্তি দর্শক-পাঠকের মধ্য থেকে এই গুণি মানুষটি সম্পর্কে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিলেন লেখক-সম্পাদক-সমাজকর্মী নিশাত জাহান রানা, কবি আমিনুল ইসলাম, কথাসাহিত্যিক কাজী রাফী, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্যের আলোয় বক্তাগণের উচ্চকিত পঠন-পাঠন অভিজ্ঞতার প্রকাশে আমরা মুগ্ধ হলাম। জাতিগঠনে এবং উন্নত মানসিকতা তৈরির ক্ষেত্রে শিশু-কিশোরসহ সকল শ্রেণির পাঠকের উচিত দীপেন ভট্টাচার্যের লেখা পাঠ করা–বক্তাগণ এই কথা জোর দিয়ে বলেন। মহাজাগতিক বিষয়কে সাহিত্যের বিষয় করে চরিত্র ও ঘটনা বয়ানে দীপেন অনন্যতার দাবিদার–তিনি স্বাক্ষর রেখেছেন তাঁর কর্মে ও বয়ানে।
‘জলধি-সন্ধ্যা’য় ২৩ জুন বিষ্যুদবার ২০২২ একটি স্মরণীয় দিন হয়ে রইলো। দর্শক সারি আলোকিত করেছিলেন কবি শামীমা সুমি, লেখক ফরিদুর রহমান, গবেষক-লেখক আলমগীর কবির, কবি সৌমিত্র দেব, কবি জীবন তাপস তন্ময়, অনুষ্ঠান সংগঠক মোশাররফ হোসেন, বাচিকশিল্পি রুপশ্রীসহ লেখক, সম্পাদক, পাঠকগণ।
বিজ্ঞজনের উপস্থিতিতে ‘জলধি’ ও ‘কবিতাক্যাফে’র আয়োজনে সার্বক্ষণিক লাইভ সম্প্রচারের বিশেষ কাজটি নিজ দায়িত্বে করলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সর্বজন শ্রদ্ধেয়, বিদ্যাপ্রকাশ-খ্যাত -প্রকাশক মজিবর রহমান খোকা ভাই।
জলধি ও কবিতাক্যাফে’র স্বত্ত্বাধিকারী নাহিদা আশরাফীর স্বাগত ভাষণের পর শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ।
দ্বিতীয় পর্বের এই প্রশ্নোত্তর পর্বে লেখক দীপেন ভট্টাচার্যের সাথে তার লেখনির বিষয়-আশয় নিয়ে মগ্ন হন কথাসাহিত্যিক রুমা মোদক ও জয়দীপ দে। রুমা ও জয়দীপের আলাপচারিতায় দীপেনপাঠ সম্পর্কে জানা যায়। উপরন্তু দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান লেখক স্বয়ং। এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় কবিতাক্যাফের উঠান জুড়ে। আমন্ত্রিত অতিথিদের সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখছিলেন কবি নাহিদা আশরাফী। তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন লিপি কাজী, তুহিন ও হিল্লোল। কবিতাক্যাফের সহকর্মী প্লাবন, মাহবুব ছিলেন সদাপ্রস্তুত।
বিজ্ঞান কীভাবে দীপেনের লেখায় ঐতিহাসিক সমাজবাস্তবতার নিরিখে উপস্থাপিত হয়েছে, চরিত্র কীভাবে জাগতিক ও মহাজাগতিক আধারে কলালক্ষ্মীর বিষয় হয়েছে এবং সমাজ-রাজনীতির মেলনন্ধন ঘটিয়েছেন তাঁর লেখায় —আলোচনা-পর্যালোচনা থেকে আমরা যারা দীপেন পড়িনি তারা পাঠে উদ্বুদ্ধ হই।
প্রায় তিনঘণ্টাব্যাপী অনর্গল বক্তব্য প্রদান ও অনুধাবনের এই আয়োজন জলধির আয়োজিত সন্ধ্যার মধ্যে অন্যতম প্রধান সন্ধ্যা হিসাবে বিবেচিত হবে বলেই আমার বিশ্বাস।
মানুষের চেতন, অচেতন, অবচেতনের স্তরের গণ্ডি পেরিয়ে জাগতিক উপাদানের সাহিত্যিক বর্ণনার রুপকল্পে দীপেন আমাদের নিয়ে গেলেন অন্যজগতে–অন্যকোনোখানে আত্মা ও পরমাত্মার সম্মিলন ঘটিয়ে স্বদেশচেতনায় ও স্বাজাত্যবোধের অগ্নিস্ফূলিঙ্গের আলোকবর্ষের মহিমায়।
সংবাদটি শেয়ার করুন