১৪ই এপ্রিল ২০২১ ইং | ১লা বৈশাখ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
জাতিসংঘ রাখাইন রাজ্যে পরিচালিত অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযানের জ্বলন্ত উদাহারণ (টেক্সটবুক এক্সাম্পল অব এথনিক ক্লিনজিং) বলে বর্ণনা করেছে। অন্যদিকে মিয়ানমারে সেনা অভিযানে গত দুই মাস নৃশংস ও নজিরবিহীন সহিংসতা চালানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। স্যাটেলাইটে তোলা ছবি বিশ্লেষণের পর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে আরও ৪০টি গ্রামের ভবনসহ বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে । এসময় নতুন করে আরও ৪০টি গ্রাম ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে .এ নিয়ে গত ২৫ অগাস্ট সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর রাখাইনে মোট ৩৫৪টি গ্রাম আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বর্মী সেনারা অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ২৮৮টি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। ওই অভিযানের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক তাদের নিজ দেশ মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্যাটেলাইটে তোলা ছবিগুলো এটা প্রমাণ করছে যে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার যখন সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে এ ধ্বংসযজ্ঞ তখনই চালানো হয়েছে। ওই সমঝোতা স্বারকটি স্বাক্ষরিত হয় ২৩ নভেম্বর। কিন্তু স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, ২৫ নভেম্বরও রাখাইনের মংডুর কাছে মিয়াও মি চ্যাঙ গ্রামে আগুন দিয়ে ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। পরের এক সপ্তাহের মধ্যে আরও চারটি গ্রাম ধ্বংস করা হয়
সংস্থাটির ওই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, রাখাইনের মংডু, বুথিডাং ও রাথিডাং শহরের আশেপাশের ১০০০ গ্রামের ওপর স্যাটেলাইটের ছবি বিশ্লেষণ করে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, রাখাইনে সামরিক অভিযান শুরুর পর সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ এ ৩৫৪টি গ্রামের মধ্যে অন্তত ১১৮টি গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে ৫ সেপ্টেম্বরের পর যখন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি’র দফতর থেকে ঘোষণা করা হয়েছে রাখাইনে অভিযান সমাপ্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে সংস্থাটির এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের সময়েও রাখাইন গ্রামে বার্মার সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ চালানো থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার প্রতিশ্রুতি স্রেফ একটি প্রচারণা। রোহিঙ্গা গ্রামগুলো ধ্বংসের যেসব অভিযোগ বার্মার সেনাবাহিনী অস্বীকার করে আসছে, সেটাই প্রমাণ করে দিচ্ছে এসব স্যাটেলাইট ছবি।’
এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর প্যারিসভিত্তিক মানবিক সাহায্য সংস্থা মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে পরিচালিত এক জরিপে পর জানায়, মিয়ানমারে ২৫ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মারা গেছেন নয় হাজার রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে ‘সবচেয়ে রক্ষণশীল মুল্যায়নে’ও দেখা গেছে ছয় হাজার ৭০০ জন হত্যার শিকার হয়েছে। আর হত্যার শিকার হওয়া এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে পাঁচ অথবা তারও চেয়ে কম বয়সী অন্তত ৭৩০ জন শিশু রয়েছে।
মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) রিপোর্টের চুম্বক অংশ:
৬৯ শতাংশ সহিংসতা জনিত মৃত্যুর কারণ বন্দুকের গুলি
৯ শতাংশ মারা পড়েছেন ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার আগুনে পুড়ে
৫ শতাংশকে পিটিয়ে মারা হয়েছে।
পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর বিষয়ে এমএসএফের রিপোর্ট বলছে
৫৯ শতাংশ মারা পড়েছে গুলি খেয়ে
১৫ শতাংশ মারা পড়েছে আগুনে পুড়ে
৭ শতাংশকে পিটিয়ে মারা হয়েছে
২ শতাংশ স্থলমাইন বিস্ফোরণে মারা গেছে
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ছয় লাখ ৫৫ হাজার মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়ায় গড়ে তোলা শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে; যাদের ৯০ শতাংশই নারী-শিশু ও বৃদ্ধ।
ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, রোহিঙ্গা শিবিরে বর্তমানে ৪ লাখ ৫০ শিশু রয়েছে; যার মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজারই নতুন। এসব শিশুর মধ্যে আবার অভিভাবকহীন ৩৬ হাজার ৩৭৩ শিশুও রয়েছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন। পালিয়ে আসা শিশু শরণার্থীদের বাইরেও প্রতিদিন যোগ হচ্ছে প্রায় ১০০ নবজাতক।
বর্বর ওই অভিযানে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বিচার গণহত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধ।
Corporate Office:
6/A Eskatan Garden
Dhaka, Bangladesh.
Mobile: 017111-66826
Email: mansoumit@yahoo.com
Helpline - +88 01719305766