বিচার শুরুর পর।
অভিযোগ গঠনের পর দুই বছরে মাত্র ৭ জন সাক্ষীকে আনা গেছে । বাকি কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। ঢাকার আশুলিয়ার এই পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর পূর্তির আগে এর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগের মামলাটির খবর নিতে গেলে এই চিত্র গেল ।এটি নিষ্পত্তি হয়ে দোষিদের শাস্তি হলে পরবর্তীতে এই ধরনের অন্য ঘটনাগুলো এড়ানো যেত বলে মনে করেন শ্রমিক নেতারা ।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলছেন, মামলাটিতে অধিকাংশ সাক্ষী শ্রমিক, আগের ঠিকানায় তাদের পাওয়া যাচ্ছে না বলেই তারা হাজির করতে পারছেন না ।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১১ জন শ্রমিক মারা যান, দগ্ধ ও আহত হন ১০৪ জন।
অগ্নিকাণ্ডের সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক সেখানে কাজ করছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, ফটক বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিকরা বের হতে পারেননি।
তাজরীনে আহত এক শ্রমিক সবিতা রানী বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “তৃতীয় তলায় কাজ করছিলাম। ফায়ার অ্যালার্ম বাজার পরও কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ চলছিল। আগুন লাগার পর নিচে এসে দেখি গেইটে তালা।
বিশ্বজুড়ে আলোচনা তোলা এই অগ্নিকাণ্ডের পর সমালোচনার মুখে পুলিশ বাদী হয়ে একটি
মামলা করে। এক বছর বাদে ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পরিদর্শক এ কে এম মহসীনুজ্জামান খান।
অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ৩০৪ (ক) ধারা অনুযায়ী ‘অপরাধজনক নরহত্যা’ ও অবহেলার কারণে মৃত্যু’ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ভবনটির নকশায় ত্রুটি ও জরুরি নির্গমনের পথ ছিল না এবং আগুন লাগার পর শ্রমিকরা বাইরে বের হতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মীরা কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
শ্রমিকদের বের হতে না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার মামলাটিতে তাজরীনের মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তারও আসামি।
অন্য আসামিরা হলেন- তাজরীনের লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল। এদের মধ্যে মোবারক ও শহীদুজ্জামান পলাতক।
প্রায় তিন বছর পর ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ১৩ আসামির বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার।
মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত ৮ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। তার আগেও কয়েকটি তারিখ পেরিয়েছে সাক্ষী না আসায়।
গত ২ এপ্রিল সাক্ষী আনতে না পারায় রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী শাহানাকে তৎকালীন বিচারক এস এম সাইফুল ইসলাম ভৎর্সনা করেছিলেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।
দুই বছরে রাষ্ট্রপক্ষে মাত্র সাতজনের সাক্ষ্য নিতে পেরেছেন বিচারক। তারা হলেন- বাদী আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম, মামলার রের্কডিং কর্মকর্তা এ এসআই শাহজালাল মিয়া, আশুলিয়া এলাকার মো. সোনা মিয়া, তাজরীনের সুয়িং অপারেটর মাহে আলম (বাড়ি রংপুর), কোয়ালিটি অপারেটর রাকিব হাসান (বাড়ি নাটোরের সিংড়ায়), অপারেটর লাইলী বেগম (বাড়ি ময়মনসিংহে), আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের সবুর মন্ডল।
মামলাটিতে আগামী ধার্য তারিখ ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি; সেদিন অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ১৬ থেকে ২১ নম্বর ক্রমিকের সাক্ষীদের হাজির করাতে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপারের মাধ্যমে পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে ।
আদালতকর্মীরা বলছেন, তদন্ত কর্মকর্তা বেশিরভাগ সাক্ষীর স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ না করায় অস্থায়ী ঠিকানায় আদালতের পাঠানো পরোয়ানা ফেরত আসছে। বেশিরভাগ সাক্ষীই পোশাক শ্রমিক । তারা আগের ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন বলে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী শাহানা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সাক্ষী আনার। অনেক সাক্ষীর স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় অসুবিধা হচ্ছে। সে কারণে মামলাটি এগুচ্ছে না।
মামলাটি এগিয়ে নিতে রাষ্ট্রপক্ষের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করেন পোশাককর্মীদের পক্ষে মামলাটি দেখভালকারী শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ।
প্রধান আসামি দেলোয়ার ও মাহমুদার আইনজীবী এ টি এম গোলাম গাউস বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী উপস্থাপন না করতে পারলে আমাদের কিছু করার নেই।
সংবাদটি শেয়ার করুন