ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দুই দিনের মাথায় বেলোনিয়ায় ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের একটি মূর্তি বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন বিজেপি সমর্থকরা।
নির্বাচনে টানা দুই দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্ট সরকারকে পরাজিত করে বিজেপি জয় পাওয়ার পর ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলাসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা হয়েছে।
গত শতকে রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মহানায়ক লেনিনের এ মূর্তিটি দক্ষিণ ত্রিপুরার কেন্দ্রস্থলে গত পাঁচ বছর ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু সোমবার সেটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বলে খবর এনডিটিভির।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিজেপি কর্মীদের আনা বুলডোজারের ধাক্কায় ভাস্কর্যটি লুটিয়ে পড়ে। গেরুয়া সমর্থকরা তখন ’ভারত কি জয়’ বলে উল্লাস করছিল।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা শেষ হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার ধরে ধারাবাহিক সহিংসতার পর মঙ্গলবার তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ত্রিপুরা পুলিশ। সোমবার রাতেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার চারটি অভিযোগ পাওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা।
এগুলোর মধ্যে আছে আগরতলার ২৫ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম ত্রিপুরার সিধাই এলাকার দুটি সিপিএম অফিসে অগ্নিসংযোগ এবং উত্তর ত্রিপুরার কদমতলায় সিপিএম ও বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ,” প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে বলেন পুলিশ সুপার প্রদীপ দে।
সিপিএমের টুইটেও সহিংসতার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) দায়ী করা হয়েছে। নির্বাচনে জেতার পর পদ্মফুল সমর্থকরা রাজ্যজুড়ে ‘ভয় ছড়িয়ে দিচ্ছে’ বলেও অভিযোগ তাদের।
ত্রিপুরা সিপিআই(এম)-র সম্পাদক হরিপদ দাস দলীয় কার্যালয় এবং তাদের সমর্থিত বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের অফিসগুলোতে বিজেপির হামলায় ২৪০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
সিপিএম নেতাদের বাড়িঘরও বিজেপি সমর্থকদের হামলা থেকে বাদ পড়েনি বলে দাবি করেছেন তিনি।
হরিপদ বলছেন, ৩ মার্চ বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে বিজেপি ও তাদের জোট সঙ্গী ইন্ডিজেনাস পিপলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরার (আইপিএফটি) সমর্থকরা বামপন্থি কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, দলীয় কার্যালয়গুলো তছনছ করছে।
“প্রায় এক হাজার ৫৩৯টি বাড়িতে হামলা, লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অনেক রাবার বাগান, কয়েকশ ছোট দোকান জোর করে দখলে নেওয়া হয়েছে; অন্তত পাঁচশটি স্থান তছনছ বা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে,” সোমবার রাতে সাংবাদিকদের এমনটাই বলেন সিপিআই-এমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর।
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা থামাতে ব্যবস্থা নিতে বিজেপি নেতৃত্ব ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধও জানিয়েছে টানা ২৫ বছর ক্ষমতায় থাকা সিপিএম।
বিজেপির অভিযোগ, সিপিএম কর্মীরা তাদের ৪৯ সমর্থককে মারধর করেছে, যাদের ১৭জনকে পরে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
পরে এক সতর্ক বার্তায় দলটি ত্রিপুরার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছে; দায়ীদের বিরুদ্ধে ’কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে তারা।
ত্রিপুরার বিজেপির সহসভাপতি সুবল ভৌমিকের অভিযোগ, সিপিএম থেকে আসা অজ্ঞাত বিজেপি কর্মীরাই রাজ্যজুড়ে সহিংসতার জন্য দায়ী।
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় জড়িত কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা হবে, সঙ্গে সঙ্গে আইনী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে, বলেছেন তিনি।
সংবাদটি শেয়ার করুন