১৬ই মে ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২২
রাজশাহী প্রতিনিধিঃ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, নেই বৈধ কোন লাইসেন্স। তবুও স্কুল ঘেঁষে গড়ে উঠা নাফিস ব্রিকস নামের ওই ইটভাটার সকল কার্যক্রম চলছে দাপটের সাথে। পৌর এলাকার দেবীপুরে অবস্থিত ইটভাটাটি বাজার, স্কুল ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস ঘেঁষে দীর্ঘ দিন ধরে পরিচালনা করে আসছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ইটভাটার মালিক এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না। এমনকি ইটভাটায় কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছেন স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। দ্রুত ইটভাটাটি অন্যত্র স্থানান্তর করে এলাকাটি দূষিত পরিবেশের হাত থেকে রক্ষা করতে ও বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
ইটভাটা কর্তৃপক্ষের দাবি, জেলা প্রশাসন ও কাস্টমস অফিসের ফান্ডে নিয়মিত টাকা দিয়েই তারা ইটভাটাটি পরিচালনা করে থাকেন।
নাফিস ব্রিকস নামের ওই ইটভাটার বৈধ কোন লাইসেন্স বা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। কয়লা দিয়ে হাওয়ার মাধ্যমে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও পরিবেশ দূষণকারী ফিক্সড চিমনিতে কাঠের খড়ি দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। এ কারনে প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে কার্বনডাইঅক্সাইড ও কালো ধোঁয়া। ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ইট ভাটার পাশেএ দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয়রাও রয়েছেন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার উত্তরে দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দেবীপুর উচ্চ বিদ্যালয়। তার পাশেই ইউনিয়ন ভূমি অফিস রয়েছে। এই তিন প্রতিষ্ঠান ঘেঁষেই চলছে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই ইটভাটার রমরমা ব্যবসা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারী নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তি ইটভাটাটি স্থাপন করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। যা সেখানকার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভাটায় ফিক্সড চিমনিতে কয়লার পরিবর্তে দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার পাশেই কাঠের খড়ির বিশাল স্তুপ।
দেবীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলায় ৫ম শ্রেনীর ক্লাশ চলছে, শিক্ষার্থীদের জোরে জোরে চিৎকার করে পাঠদান করাচ্ছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সারোয়ার হোসেন। ক্লাশের ভিতরে প্রবেশ করে দেখা গেছে কালো ধুলার আস্তরন পড়ে আছে পুরো শ্রেণীকক্ষে। এমন অবস্থা দেখে কারন জানতে চাইলে ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সোহলী জান্নাত লাবনী জানায়, এইটা স্কুলের প্রতিদিনের নিয়মিত পরিবেশ। এ পরিবেশের মধ্যদিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে পড়াশোনা করে যাচ্ছি। ইটভাটার কালো ধোঁয়া আর রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের ধুলা ও বিকট শব্দে প্রায় প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এই বিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি শিশুই শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভূগছে বলেও জানান ওই শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান ও সারোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল ভবন ঘেঁষে নতুন ইট তৈরির কাজ চলছে। পাশেই মাটির স্তূপ। ক্লাসরুমের পাশ দিয়ে সব সময় বিভিন্ন যানবাহনে চলছে মাটি ও কাঁচা ইট পরিবহনে। ইটভাটার কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের অবাধ চলাচলে শিক্ষার্থী সহ সাধারন জনগন প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন। যানবান চলাচলে প্রকট শব্দ হওয়ার কারনে শিক্ষার্থীদের সাথে চিৎকার করে পাঠদান করাতে হয়।
দেবীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার লায়লা আরজুমান জানান, ইটভাটার কালো ধোঁয়া শিক্ষার্থীদের চরমভাবে স্বাস্থ্যঝুকির মধ্যে ফেলেছে। ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
পরিবেশবিদ রওনক জাহান মিতু বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন ২০১৩ নীতিমালা অনুযায়ী পৌর এলাকার অভ্যান্তরে কৃষি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী দপ্তর, চিকিৎসা কেন্দ্র, ঘর-বাড়ী, ফলজ ও বনজ বাগানের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। পরিবেশ অধিদপ্তর বা তদসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই এলাকায় ইটভাটা স্থাপন বা পরিচালনা করার কোন লাইসেন্সও দিতে পারবেন না।
রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুর উপজেলায় নাফিস ব্রিকস নামের কোন ইটভাটাকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ইট প্রস্তুত করা, ইট পোড়ানো ও সরবরাহ করা সম্পূর্ন আইন পরিপন্থি। দ্রুত এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান কর্মকর্তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. অশোক কুমার বলেন, ইট ভাটার ধোঁয়ায় শিক্ষার্থী সহ সকল মানুষেরই শ্বাসকষ্ট সহ ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়া ধূলাবালির কারনে হাঁপানি, চুলকানি সহ বিভিন্ন মারাত্মক চর্মরোগ হতে পারে।
নাফিস ব্রিকস ভাটার মালিক তাবুল ইসলাম ওরফে বাবু বলেন, ডিসি অফিস ও কাস্টমস অফিস সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে নিয়মিত টাকা দিয়ে দীর্ঘদিন এভাবেই ইটভাটা চালিয়ে আসছি। অন্য ইটভাটা গুলোও এভাবেই চলে বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক রেখে এভাবেই ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ডিসি অফিস থেকে আমাকে বলেছে। আমি সে অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পায়নি। এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইটভাটায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।
Editor in Chief
Contact: 017111-66826
National Desk In-charge
ᴍᴅ. ꜱʜᴀꜰɪqᴜʟ ɪꜱʟᴀᴍ ᴀᴢᴀᴅ ᴋʜᴀɴ
Contact: 01712805804
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com