১৫ই এপ্রিল ২০২১ ইং | ২রা বৈশাখ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:২৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো রায় গেলেই দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিচারপতিদের । সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার পরেই দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে । শুধু তাই নয়, সঠিক রায় দেওয়ায় ঢাকা জজ কোর্টের বিচারক মোতাহার হোসেনকেও দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে।
২৫ ডিসেম্বর সোমবার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এ বিষয়গুলা ভালো কালচারের মধ্যে পড়ে না।’ এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মামলার রায়কেও সরকার প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সরকার নিজেদের স্বার্থে বিচার বিভাগকে পরিচালিত করতে চায়। নিম্ন আদালতের মতো উচ্চ আদালতকেও কব্জায় নিতে চায়। তারা যেভাবে চান, সেই ভাবেই আদালতকে রায় দিতে হবে। কেউ তা না করলে বিচারপতি সিনহার মতো তাদেরকেও একই পরিণতি বরণ করতে হবে। এভাবে সরকার বিচারপতিদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠির বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু সরকার রিভিউ পিটিশন দাখিল করে পুরো রায় বাতিলের চক্রান্ত করছে।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বারের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বিচার বিভাগ হচ্ছে সংবিধানের অভিভাবক। এটা স্বীকৃত যে, আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন করবেন এবং সে আইন সংবিধান মোতাবেক হয়েছে কিনা এবং সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা এবং কোনো দলের বা ব্যক্তির স্বার্থে কিনা ? তা দেখার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। বিচার বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়ে সে দায়িত্বই পালন করেছেন। অথচ এই রায়ের পরে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে অহেতুক এবং অসৌজন্যমূলক ও আদালতের প্রতি অশ্রদ্ধামূলক বক্তব্য রেখেছেন, যা অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত।’
তিনি বলেন, অতীতে বহুবার বে-আইনি সংশোধনীর বিরুদ্ধে অনেক সিদ্ধান্ত দেশের এই সর্বোচ্চ আদালত দিয়েছেন, কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত এবং আদেশের বিরুদ্ধে সরকার এইভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে কোনো রিভিউ আবেদন করেছেন বলে আমাদের জানা নাই।
তিনি আরও বলেন, একটি রায়ের মধ্যে সরকারের মতে দু-একটি পর্যবেক্ষণ অপ্রসাঙ্গিক থাকতেই পারে। কিন্তু বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল মতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের জন্য ৯৪টি যুক্তি দেখালেন । আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, এই সরকার বিচার বিভাগকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখার সিদ্ধান্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমেই সুকৌশলে নিতে চাচ্ছেন।’
সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, তাই তারা সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি যে ৭ জন বিচারপতি এই রায় দিয়েছেন। তার মধ্যে ৫ জন এখনও আপিল বিভাগে দায়িত্বে আছেন। তারা তাদের পরবর্তী রায়ের আলোকে এই পুনঃবিবেচনার আবেদনটি বাতিল করবেন। তা না হলে ভবিষ্যতে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার জন্য কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, ‘সরকার রিভিউয়ের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে জোড় করে দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে এবং পদত্যাগ করানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, বিচারপতিদের পদ সাংবিধানিক। এখানে কারো কোনো পদ খালি হলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে নিয়োগ দেওয়া উচিত। অথচ বেশ কিছুদিন হয়ে গেলেও প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগ দিচ্ছে না। ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়ে রিভিউ আবেদন করে সরকার যড়ষন্ত্র করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সভাপতি এবিএম অলিউর রহমান খান, আইনজীবী রফিকুল ইসলাম মেহেদী, সাবেক সদস্য আবেদ রেজা, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম, অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিয়ন, একেএম এহসানুর রহমান, এএইচ এম কামরুজ্জামান মামুন প্রমুখ।
Corporate Office:
6/A Eskatan Garden
Dhaka, Bangladesh.
Mobile: 017111-66826
Email: mansoumit@yahoo.com
Helpline - +88 01719305766