সদরুল আইনঃ
ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস দেওয়া যাবে বলে মতামত দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভ্রমণ অনুমোদন পেলে সালাহউদ্দিন দেশে ফিরতে পারবেন বলে জানিয়েছে সূত্র। সূত্রটি বলছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামতের ওপর ভিত্তি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সালাহউদ্দিনকে দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন দিতে সম্মতি দেবে।
সালাহউদ্দিনকে ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া যাবে কি না, সে বিষয়েও মতামত চেয়েছিল ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার জানান, সালাহউদ্দিন আহমদের ‘ট্রাভেল পাসের’ অনুমতি-সংক্রান্ত আবেদনে তাঁরা অনুমোদন দিয়েছেন। সাধারণত ভ্রমণ অনুমোদন হাইকমিশনই দিয়ে থাকে।
যেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) রয়েছে, তিনি ভারতে জেল খেটেছেন এবং তিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সে জন্যই হাইকমিশন স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছিল।
এর আগে গত ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনারের কাছে আবেদন করেন।
আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তাঁর বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাঁকে খালাস দিয়েছেন।
আবেদনে সালাহউদ্দিন আরও উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তাঁর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান এবং দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং থেকে সালাহউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি প্রথম দিন থেকে দেশে ফিরতে চেয়েছি। ইতিমধ্যে অনুপ্রবেশের অভিযোগের আইনগত প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। আমি খালাস পেয়েছি।
ভ্রমণ অনুমোদন চেয়ে করা আবেদন তাঁরা প্রথমে গ্রহণ করতে চাননি। চাইলে সঙ্গে সঙ্গেই এটা দেওয়া যায়।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা এবং কিছু মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। সংখ্যাটি জানাতে পারেননি তিনি। গ্রেপ্তারের আশঙ্কা থাকার পরও তিনি দেশে ফিরবেন।’
সাধারণত বিদেশে গিয়ে কারও পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট দেশের হাইকমিশন ভ্রমণ অনুমোদন দেয়। এই অনুমোদন নিয়ে কোনো ব্যক্তি দেশে ফিরতে পারেন।
সালাহউদ্দিন মনে করেন, তাঁর বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে। এ কারণে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। ৬২ দিন পর ওই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।
ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, শিলংয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরির সময় লোকজনের ফোন পেয়ে তাঁকে আটক করা হয়।
সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমদ তখন সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন, তাঁর স্বামীকে মেঘালয়ের একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর পরিবার বিভিন্ন সময় দাবি করেছে, সালাহউদ্দিনকে ধরে নিয়ে আটকে রেখে একটা পর্যায়ে সীমান্তের ওপারে রেখে আসা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, সালাহউদ্দিনকে ধরে নিয়ে আটকে রেখে পরে পাশের দেশে ফেলে আসা হয়েছিল। নিজের দেশের নাগরিককে পাশের দেশে ফেলে আসা অগণতান্ত্রিক, অমানবিক। এর চেয়ে জঘন্য কিছু হতে পারে না।
সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়।
সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাঁকে সেখানেই থাকতে হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন এবং আদালত তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন।
১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ছিলেন সালাহউদ্দিন। এরপর প্রশাসনের চাকরি ছেড়ে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন।
২০০১ সালে তিনি কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হন।
সালাহউদ্দিন যখন ভারতে আটক হন, তখন তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। দেশটিতে আটকাবস্থায় তিনি ২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হন।
সংবাদটি শেয়ার করুন