শেলী সেনগুপ্তা
আমাদের সবার ভালোবাসার শহর ঢাকা। কিন্তু ঢাকার পথে নামলে আর ময়ুরীর মতো মন নেচে ওঠে না। কারণ সারাক্ষণ আমাদের ঘিরে রেখেছে ধোঁয়ার কুন্ডলী। হোক তা গাড়ির কালো ধোঁয়া অথবা সুখটান দেয়া সিগারেটের রিং রিং ধোঁয়া।গাড়ির কালো ধোঁয়ার চেয়ে কোন অংশে কম নয় ধূমপানের ভয়াবহতা।
ধূমপান সবসময়ই অসুন্দর ও অকল্যাণের বাহক। পথে নামলেই দেখা যায় আমাদের চারপাশের অনেক বিবেকবর্জিত মানুষ অবিরাম ধূমপান করে যাচ্ছে। এটি অনেকের জন্য কষ্টকর কিন্তু প্রতিবাদ করাও কঠিন।
ধুমপায়ীরা পরিবার, সমাজ অর্থনীতি ও রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে অকল্যাণ বয়ে আনে। ধূমপানের ফলেব্যাক্তি নিজে ও তার অর্থনীতি, পরিবার, প্রতিবেশী , বন্ধুবান্ধব ও কর্মক্ষেত্রের সহকর্মীসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
একজন ধুমপায়ীর ধূমপানের সাথে সাথে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে সিগারেটের সব বিষাক্ত পদার্থ এবং তা অন্যেরা নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নেয়। একজন ধুমপায়ীর সাথে সাথে অধূমপায়ীও বিভিন্ন রোগের স্বীকার হতে পারে, যেমন হার্ট সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ,ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, আলসার ও রক্তে কোলেষ্টরলের আধিক্য। সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে থাকে প্রায় চার হাজার রাসায়নিক পদার্থ এবং এর মধ্যে তেতাল্লিশটি পদার্থ সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টির সাথে জড়িত। তাছাড়া ফুসফুসের ক্যান্সারের শতকরা নব্বইভাগ দায়ী ধুমপান।
তাছাড়া বাবা ধুমপান করলে সন্তানশ্বাসকষ্টে, নিউমোনিয়া এবং ঘন ঘন ঠান্ডা-কাশিতে।
ভুগতে পারে। এক কথায় বলতে গেলে ধুমপানজনিত সমস্যার কোন শেষ নেই। মানুষ একা কেউ নয়, একজন মানুষ মানুষে পরিনত হয় তার পরিবার পরিজন সন্তানসন্ততি নিয়ে। তাই নিজের সাময়িক কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সাথে পরিবারপরিজন ও সন্তানসন্ততিকে যুক্ত করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবা দরকার।
এক জরীপে জানা যায় ধুমপানের প্রত্যক্ষ ক্ষতি অপেক্ষা পরোক্ষ ক্ষতি কিছু কম নয়। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর পরোক্ষ ধূমপানে তিপ্পান্ন হাজার ব্যক্তি মারা যায়। জরীপটি উন্নত দেশের, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ ধরণের কোন জরীপ করা হয়নি, তাই সংখ্যাটি জানা যায় না। কিন্তু এ হেন ঘন বসতিপূর্ণ দেশে কি হতে পারে তা সহজেই অনূমেয়। পরিসংখ্যানে সংখ্যাটি জানা না গেলেও তামাকের ধোঁয়াতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পঞ্চাশটি ক্ষতিকর উপাদানের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে প্রতি আট সেকেন্ডে ধূমপান বা তামাক সেবনজনিত রোগে একজন মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে , এবং প্রতিবছর এর সংখ্যা দাঁড়ায় পঞ্চাস হাজার।
এমন ভয়াবহ তথ্যটি জানার পর কি উচিত হবে জনসমক্ষে ধুমপান করা?
অন্য অর্থে বলা যায় , মানুষ বাঁচে তার প্রিয়জনের জন্য, মানুষ বাঁচে তার প্রিয়জনের মধ্যে। তাই একমুহূর্তের সুখের জন্য প্রিয়সান্নিধ্য কলুষিত করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবা দরকার। একজন মানুষ কখনো একা নয়, একজন মানুষের ওপর ন্যস্ত আছে সমগ্র মানবজাতির মঙ্গলের দায় দায়িত্ব। তাই নিজে ও নিজের পরিবারের সুস্থতার জন্য, সমাজ এবং আপন শহর ঢাকার সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য শুধু আজ থেকে নয় , এমুহূর্ত থেকেই ধূমপামমুক্ত ঢাকা গড়ে তোলার শপথ নেয়া হোক।
সংবাদটি শেয়ার করুন