ঢাকা ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি


নতুন চ্যালেঞ্জে শেখ হাসিনা

abdul
প্রকাশিত জানুয়ারি ৬, ২০১৬, ০৬:১৭ পূর্বাহ্ণ
নতুন চ্যালেঞ্জে শেখ হাসিনা

এসবিএন ডেস্ক: বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে নতুন বছরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে অন্তত ১০টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পদ্মা সেতুসহ চলমান প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করতে হবে এবং আগামীতেও এটি ধরে রাখতে হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে প্রধানমন্ত্রীকে হতে হবে আপসহীন। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, একই সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রেখে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। পাশাপাশি দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। সর্বোপরি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সুশীলসমাজের প্রতিনিধি ও সাবেক কূটনীতিকরা বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে এমন অভিমত দিয়েছেন।

তাদের মতে, এ চ্যালেঞ্জগুলো কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারলেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার তাদের দ্বিতীয় মেয়াদেও সফল হতে পারবে। এতে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে আরও এক ধাপ।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মোটা দাগে প্রধানমন্ত্রীর সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা হলো— এক. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দুই. গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুসংহতকরণ, তিন. জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন, চার. উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা, পাঁচ. দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা, এ ক্ষেত্রে বিএনপির আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা এবং জামায়াতসহ বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠনের নৈরাজ্যকে কঠোরভাবে দমন করা, ছয়. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দৃঢ়করণ ও পশ্চিমা দেশগুলোকে আস্থায় আনা, সাত. মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শুরু করা ও স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ চলমান প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করা, আট. মানবতাবিরোধী অপরাধীদের অসমাপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করা, নয়. দলীয় তথা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করাসহ তৃণমূলে দল গোছানো এবং সর্বশেষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে এক প্লাটফরমে নিয়ে আসা। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জই হলো এগিয়ে যাওয়া। আমরা নিম্নমধ্য আয়ের দেশে আছি। ২০১৮ সালে মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছাতে চাই। সুতরাং এগিয়ে যাওয়াই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শহরের মানুষ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ততটা পারছে না। সুসম উন্নয়নে এ বৈষম্য দূর করতে হবে। তা ছাড়া আমাদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মান আরও বাড়াতে হবে। প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের সম্পর্ক কেমন হবে, তারও কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণের নিরাপত্তাবিধান ও সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষায় আইনের শাসনের বিকল্প নেই। বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকারি দলের কেউ কেউ অর্থ, পেশিশক্তি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন। বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। সমাজে এ বৈষম্যের কারণে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ কমে যাচ্ছে। এতে মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। তারা ক্ষমতাসীন দলের লেবাস গায়ে লাগিয়ে দোষ করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস ও খুনোখুনি করছে সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে ধর্মীয় উগ্রবাদের নামে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এগুলোকে আরও কঠোরভাবে দমন করতে হবে। দোষী ব্যক্তি যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের জন্য উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে ঢাকায় বেশ কিছু ফ্লাইওভার ও হাতিরঝিলের মতো দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে। এটি ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি মগবাজার ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন নির্মাণসহ চলমান কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। এ ছাড়া কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সরকারের নেওয়া বড় উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করাই হবে এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে পৃথকভাবে দেখলে চলবে না। বরং সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুসংহত করতে হবে, উন্নয়নের গতিধারাতে এগিয়ে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ যাবতীয় মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ সম্পন্ন করতে হবে। সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলাই হবে মূলত সরকারের এজেন্ডা। বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, নির্বাচনের পর সরকার স্থিতিশীল হবে কিনা এ নিয়ে একটা সংশয় ছিল। বর্তমানে সেই আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন বা সরকার পরিচালনায় কোনো সংকট নেই। সরকারও স্থিতিশীল। উন্নয়নে বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে সরকারের সামনে বর্তমানে মূল চ্যালেঞ্জ হলো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ। এর মোকাবিলায় শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্পরতা থাকলে হবে না, দরকার হবে সামাজিক প্রতিরোধ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিনের মতে, দুর্নীতির কারণে সরকারের অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ঢাকা পড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন বছরে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক মোহাম্মদ জমির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। কিন্তু আরও কিছু কাজ বাকি আছে। এর মধ্যে সম্প্রতি প্যারিসে অনুষ্ঠিত শীর্ষ জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২১) যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে, ব্লু ইকোনমি কীভাবে আরও ফলপ্রসূ করা যায় ভাবতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। বৈশ্বিক অশান্ত পরিবেশের কারণে অনেক দেশে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ আছে। এ অশান্ত পরিবেশে আমাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও শ্রম রপ্তানি অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সন্ত্রাস মোকাবিলায় কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া যাবে না।’ এ ছাড়া চীন, ভারত ও আশিয়ানভুক্ত দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন, তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন, বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটান কানেকটিভিটি চালু এবং জিএসপি সমস্যা সমাধানসহ আরও বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন করতে হবে বলে অভিমত দেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

September 2024
S M T W T F S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930