এসবিএন স্পোর্টস ডেস্ক: মাত্র ১৩ বছর বয়সে নিজের ঘর ছেড়ে, দেশ ছেড়েছিলেন। অনেক স্বপ্ন আর সমপরিমাণ অনিশ্চয়তা সঙ্গে নিয়ে বার্সেলোনায় এসেছিলেন লিওনেল মেসি। বাকিটুকু ইতিহাস! বার্সেলোনার লা মেসিয়াকে ঘর বানিয়ে নিলেন, আর ফুটবলকে করে নিলেন নিজের সঙ্গী। শারীরিক প্রতিকূলতা ছাপিয়ে এখন তিনি তর্কসাপেক্ষে বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার।
ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়তে চায় এমন যে কারও জন্যই মেসির এই উত্থানের গল্প বেশ প্রেরণার। শুধুই খেলোয়াড়দের জন্যই নয়, ক্লাবগুলোর জন্যও। একবার ভাবুন তো, মেসিকে এখন বার্সেলোনা যদি অন্য কোনো ক্লাবে যেতে দেয়, তাহলে কাতালান ক্লাবটির ব্যাংক ব্যালেন্স কেমন বাড়বে! এটিই হয়তো এখন ক্লাবগুলোকে প্রলুব্ধ করছে বিশ্বের আনাচে-কানাচে থেকে কিশোর প্রতিভাগুলোকে নিজেদের ক্লাবে নিয়ে আসতে। কিন্তু এই ব্যাপারটি নিয়েই এখন দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। এভাবে কিশোরদের তুলে আনার ক্ষেত্রে সব নিয়ম, নীতি-নৈতিকতা মানা হচ্ছে তো?
প্রশ্ন তুলে দিয়েছে স্প্যানিশ তিন পরাশক্তি ক্লাবের ওপর দলবদলের নিষেধাজ্ঞা। প্রথমে বার্সেলোনা, এরপর রিয়াল ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। অন্য দেশ থেকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক খেলোয়াড় দলে নিয়ে আসার নিয়ম ভাঙার কারণে দলবদল নিষেধাজ্ঞা পেতে হলো তিনটি দলকেই। কিন্তু পরপর দুই বছরের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটার পরই প্রশ্ন উঠে গেছে, কার স্বার্থে আসলে হচ্ছে এই কম বয়সী খেলোয়াড়দের দলবদল? নিষ্পাপ এই শিশু খেলোয়াড়গুলোর, নাকি ক্লাবগুলোর?
বার্সা, রিয়াল, অ্যাটলেটিকো—তিন ক্লাবেরই একাডেমি বিশ্বের সেরা একাডেমিগুলোর অন্যতম। আগামী দিনের খেলোয়াড়দের ফুটবল শিক্ষা তো দেওয়া হয়ই, সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে উন্নত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও। তাদের সূক্ষ্ম প্রশিক্ষণ কৌশল আরও ভালো খেলোয়াড় গড়তে সাহায্য করে নিশ্চিতভাবেই। তাহলে কেন শুধুই অন্য দেশে জন্ম নেওয়ার কারণে কোনো খেলোয়াড়কে বড় বড় ক্লাবের একাডেমিতে যোগ দিতে দেওয়া হচ্ছে না? কেন আরেকজন মেসি হওয়ার স্বপ্নটাকে অল্প বয়সেই মেরে ফেলা হচ্ছে?
এর কারণটা ফুটবল ছাপিয়েও অনেক বেশি মানবিক। কারণ এই খেলোয়াড়গুলো সবাই শিশু। খুব কম বয়সেই বাবা-মা, পরিবার ছেড়ে অন্য কোনো দেশে যেতে হওয়াটা কখনোই এদের জন্য সুখকর কিছু নয়। সঙ্গে চুক্তি সই করার চাপ তো আছেই। যে বয়সটা তার শুধুই ফুটবলের নির্মল আনন্দটা উপভোগ করার, সে বয়সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে হিসেবে নেমে পড়তে হচ্ছে—বার্সেলোনা ভালো হবে নাকি রিয়াল? নাকি ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বা আর্সেনাল?
আর ক্লাবগুলোই যতই দাবী করুক, বিশ্বের আনাচে কানাচে থেকে নিয়ে নিয়ে এসে ফুটবলার গড়াই তাদের ব্রত, দিন শেষে তো বিষয়টা বাণিজ্যই। ১৩ বছরের একজন প্রতিভাবান তরুণকে অল্প দামে নিয়ে আসা আর ২৫ বছরের একজনকে মিলিয়ন ডলার খরচ করে নিয়ে আসার মধ্যে পার্থক্যটা হয়তো ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড হতে পারে। আর এর সঙ্গে আরেকটি ব্যাপার যেটি আলোচনায় আসছে, সেটি হলো- ক্লাবগুলো তো শূন্য থেকে খেলোয়াড় গড়ে নিচ্ছে না। এটি অনেকটা কোনো নামকরা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার মতো। পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো শিক্ষার্থীকেই নিয়ে ভালো কিছু করার চেষ্টা করছে স্কুলগুলো।
মেসির ব্যাপারটিই চিন্তা করুন, ১৩ বছর বয়সেই মেসির প্রতিভা দক্ষিণ আমেরিকায় বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিল। শুধু তাঁর হরমোন চিকিৎসার খরচটা বহন করার ঝুঁকিটা নিতে চাইছিল না ক্লাবগুলো। এদিক দিয়ে বার্সা অনেক ঝুঁকি নিয়েছে, তার ফলও পাচ্ছে।
ফিফার খেলোয়াড়দের সংগঠন ফিফপ্রো তাই বলছে, উঠতি খেলোয়াড়দের অবশ্যই তাদের দেশে পরিবারের কাছে থেকে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া উচিত। ফিফপ্রোর আইন পরামর্শক উইল ফন মেগেন যেমন বলেছেন, এখানে মানবিক দিকটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি নামী ক্লাবগুলো আপনাকে নিয়ে যেতে চাইবে যেন তারা সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড় পায়। ক্লাবগুলোর স্বার্থ সব সময়ই খেলার পাশাপাশি বাণিজ্যিকও।ফিফার আরেকটি চিন্তার বিষয় মানবপাচার। আফ্রিকা থেকে ইউরোপে খেলোয়াড় দলবদলের নামে অনেক শিশু পাচার হচ্ছে। এর বাইরেও কিছুদিন আগে লাইবেরিয়ান অনেক কিশোর ফুটবলারকে উদ্ধার করা হয়েছে লাওস থেকে। আগামীর মেসি বানিয়ে দেব—এমন প্রতিশ্রুতির প্রলোভন হয়ে উঠেছে ফাঁদ।
সব খেলোয়াড় পারেও না সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে। খেলাটিই এমন প্রতিযোগিতাপূর্ণ, এখানে সবাই শিখরে যেতে পারবে না। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে লিসবনের একাডেমিতে একই রুমে থাকত যে ফুটবলারটি, তাকে আজ কে চেনে?
স্পেনের সেস্ক ফ্যাব্রেগাস পেরেছিলেন, ১৬ বছর বয়সে আর্সেনালে এসে নিজেকে নিয়ে গেছেন শিখরে। পল পগবাও তা-ই, ১৬ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু গায়েল কাকুতার নাম কজন শুনেছে?
এসব কিছু বিবেচনা করেই ফিফা কিশোর খেলোয়াড়দের বিদেশি ক্লাবে দলবদলে অনেক নিয়মকানুন বেঁধে দিয়েছে। সবাই মেসি হতে পারে না, কিন্তু মেসি হতে এসে যেন কোনোভাবে যেন একজন কিশোর ক্লাব বা অন্য কারও বাণিজ্যিক স্বার্থের বলি না হয়। কিন্তু ফুটবলে খেলোয়াড়ের কেনাবেচার বাণিজ্য এখন এতটাই রমরমা, বড় কোনো ক্লাবই আগামীর মেসিকে হাতছাড়া করতে চায় না। আর সে জন্য নৈতিকতার ধারও যেন কেউ ধারছে না! গার্ডিয়ান।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: [email protected]
Web Design by: SuperSoftIT.com