এসবিএন ডেস্ক:
‘বসন্ত বাতাসে সইগো
বসন্ত বাতাসে
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ
আমার বাড়ি আসে’
কবি মনে বিভিন্ন ঋতুকালের বর্ণনা এভাবেই আসে। বসন্তকালে যেমন মরা ডাল পুষ্পপল্লবে ভরে ওঠে চারদিকে সৌরভ ছড়িয়ে দেয় প্রেমিক মন সেই ঘ্রাণে মোহিত হয়ে প্রেমাষ্পদের খোঁজে মাতোয়ারা হয়ে গেয়ে ওঠে ‘আমার বন্ধুরে কই পাব সখী গো সখী আমারে বল না//আমার বন্ধু বিনে পাগল মনে বুঝাইলে বুঝে না’। কিন্তু যাদের কর্ণ নাসিকায় দুর্বলতা আছে তারা সে ঘ্রাণ আর শ্রবণ থেকে বঞ্চিত হয়।
রবিউল আউয়াল এলে নবীপ্রেমিকরা নবী (সা.) প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে মিলাদুন্নবী, সিরাতুন নবী, মৌলুদ শরিফ, ইত্যাদির আয়োজন করে প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। যাদের হƒদয়ে প্রেম নেই তারা এ নিয়ে নানা কথাবার্তা বলে থাকেন।
প্রেমমানব হৃদয়ের এক দুর্নিবার শক্তি। প্রেমের কারণেই এ জগৎসংসার টিকে আছে। প্রেমের কারণেই আল্লাহ জগৎসংসার সাজিয়েছেন। আল্লাহ হাদিসে কুদসিতে বলেন, কুন্তু কানযান মাখফিয়ান- আমি ছিলাম গোপন ধনভাণ্ডারে লুকায়িত, ফা ইন আহ্বাবতু আন উরিফা- যখন আমার প্রকাশ হওয়ার প্রেম-বাসনা জাগল, ফাখালাকতুল খালকা- তখন আমি সৃষ্টিকুল দিয়ে জগৎ সাজালাম। প্রেমের কারণেই মাঘের শীত উপেক্ষা করে খোদাপ্রেমিকদের আরামের ঘুম হারাম করে জায়নামাজে সেজদায় লুটিয়ে প্রেমাষ্পদকে খুঁজে বেড়ান। এ প্রেমের কারণেই শীত গ্রীষ্ম উপেক্ষা করে শ্রমিক, মজুর, জেলে চাষী মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তান-সন্তুতি পরিবারের জন্য রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন। প্রেম নেই তো কিছুই নেই। কিবলায়ে আশেক মাশুকাস্ত//মাজহাবে ইশক দিগারাস্ত। আশেকের কিবলা তার প্রেমাষ্পদ বা মাওলায়ে হাকিকি। প্রেমের মাজহাবও ভিন্ন, প্রেমের ধর্ম হল ইখলাস বা তাকওয়া। এজন্যই আল্লাহ সব কাজে প্রেম বা ইখলাস তালাশ করেন। তাই আমাদের ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.) অনুষ্ঠানগুলোও হতে হবে ইখলাসপূর্ণ। তা যেন জলসা সেমিনার সিম্পোজিয়ামে সীমাবদ্ধ না থাকে। শুধু রবিউল আউয়াল এলে তার গান গাইব আর রবিউল আউয়াল গেলে তাকে ভুলে থাকব তা যেন না হয়।
মিলাদের প্রভাব থাকবে বছরব্যাপী, জীবনব্যাপী। মিলাদ শব্দটি নিয়ে নানা ব্যাখ্যা থাকলেও আমাদের এ অঞ্চলে এটিকে দোয়ার উপলক্ষ এবং বরকতের উসিলা মনে করা হয়। তাই নবী প্রেমিকরা কোনো শুভ কাজের আগে বা সফলতা প্রাপ্তিতে মিলাদ শরিফের আয়োজন করে থাকেন। কিন্তু একটি শ্রেণী নানা ছলছুতা এবং ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে মিলাদ শরিফ থেকে বিস্মৃত করার প্রয়াস চালাচ্ছেন তাদের সম্পর্কে সতর্ক থেকে আমাদের জাতীয় নেতারা এবং এ দেশে ইসলাম প্রচারকরা এ ব্যাপারে কী নীতি পালন করছেন তা অনুসরণ করা দরকার। মনে পড়ে ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন দেশে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু ঢাকায় আসার পর তার যৌবনের বাসস্থান রায় সাহেব বাজার মহল্লার কিছু লোক তার কাছে গিয়ে বলে ‘লিডার দ্যাছ তো ছাদিন হইল কিন্তুক আপনি নাই তাই কাউরে কিছু বলবার পারি নাই। আপনাকে পাইয়া ভী ফুর্তি লাকতাছে। আমাগো কিছু টাকা ওকা দেন মিঠাই উঠাই খাই ফুর্তি-ফার্তা গানা-বাজনা করি’। দিল দরাজ বঙ্গবন্ধু মুচ্কি হাসি দিয়ে বলেন ‘নাও তোমাদের চাহিদা মতো টাকা দিলাম কিন্তু গানা-বাজনা ফুর্তি-ফার্তা নয় মিলাদ শরিফ পড়িয়ে মিষ্টি বিতরণ করবে কারণ আমরা মুসলমান আর মুসলমানদের নীতি হল কিছু পাওয়ার আনন্দে তারা মিলাদ শরিফের এন্তেজাম করে থাকে। নেয়ামত প্রাপ্তিতে শোকরিয়া আদায় করে মিলাদের মাধ্যমে দোয়া প্রার্থনা করাই ছিল আমাদের জাতীয় নেতাদের নীতি। আর এটাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি যার প্রতিধ্বনি কালামে পাকে এসেছে আল্লাহ বলেন ‘ক্বুল হে নবী বলে দিন বিফাদলিল্লাহি আল্লাহর ফাদল বা নেয়ামতে ওয়া বিরাহমাতিহি আর তার রহমত প্রাপ্তিতে ফাবিজালিকা সুতরাং এই কারণেই ফালইয়াফরাহু এর প্রতিই সন্তুষ্ট থেকে তোমাদের আনন্দিত থাকা উচিত। আর নবী প্রেমিকদের কাছে নবী (সা.)-এর চেয়ে বড় নেয়ামত এবং রহমত আর কিছুই নেই। যে নেয়ামতের প্রার্থনা আবুল আম্বিয়া সাইয়েদেনা ইবরাহিম (আ.) বায়তুল্লাহ নির্মাণ শেষে ‘ওয়াবয়াছ ফিহিম রাসূলান’ আয় আল্লাহ খানায়ে কাবা নির্মাণের মজুরি হিসেবে আমার বংশে তোমার প্রতিশ্র“ত রাসূলের আগমন প্রার্থনা করছি বলেছিলেন। সেই নবীই বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত রাহমাতুল্লিল আলামিন নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লহ (সা.) যার দিকে ভক্তি ও প্রেমের নজরে তাকালে সাহাবিদের ক্ষুধা এবং ভয় দূর হয়ে যেত বলে বর্ণনায় পাওয়া যায়। এ জন্যই কোনো আশেক কবি গেয়ে উঠেছেন ‘নাহ্ জান্নাত কী কুই কিমত/ না মুশকে আম্বর কী কুই হাজত// জিছে মিলা হ্যায় জিছনে মলা হ্যায় পছিনা রাস কী গোলাব তেরা। (জান্নাতি প্রাসাদের কি দাম আছে মিশকে আম্বরের কি প্রয়োজন আছে যে পেয়েছে যে মলেছে পছিনায়ে রাসূলের গোলাবি সৌরভ) মনে পড়ে নিকট অতীতের দ্বীনি মুবাল্লিগ সোনারগাঁ পরগণার হাদী মাওলানা লালপুরীকে বাড়িঘর সম্পর্কে প্রশ্ন করলে বলতেন ‘নবী আমার ঘর বাড়ি//নবী আমার জমিদারি//নবী আমার টাকা কড়ি//নবী আমার কলিজার অই টুইকরা রে’। আসুন আমরা মিলাদুন্নবীর (সা.) এ বাসন্তী মৌসুমে নবী প্রেম দিয়ে আমাদের হৃদয় মন্দির সাজিয়ে মদিনা মোনাওয়ারায় সালাত ও সালামের হাদিয়া নজরানা পেশ করি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।
সংবাদটি শেয়ার করুন