১৩ই এপ্রিল ২০২১ ইং | ৩০শে চৈত্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০২১
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি আর নব্য রাজাকারের দল হেফাজতে ইসলাম দেশকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র করছে।
হানিফ বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম মাদ্রাসায় বসে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অশান্ত করার মিশনে নেমেছে। এরই অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে জ্বালাও-পোড়াও করে যাচ্ছে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে মাহবুব উল আলম হানিফ এসব কথা বলেন।
মাহবুব উল আলম হানিফ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যারা জ্বালাও-পোড়াও করছে, তারা রেহাই পাবে না। যারা দেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতি মেনে নিতে পারে নাই, যারা একাত্তরের পরাজিত শক্তি যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত তাদের দোসর বিএনপি আর নব্য রাজাকারের দল হেফাজত ইসলাম, তারা একত্র হয়ে এই নারকীয় হামলায় অংশ নিয়েছে।’
হেফাজতে ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ‘এরা বাংলাদেশের সংবিধান মানতে চায় না। এরা দেশের জাতীয় সংগীত গাইতে চায় না, এরা জাতীয় পতাকারও সম্মান করতে চায় না। এরা বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বানাতে চায়। যার কারণে এরা কোনো ইস্যু ছাড়াই, কোনো কারণ ছাড়াই এ ধরনের হামলা চালিয়েছে। রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করেছে।’
‘যারা রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করে কঠোর আইনের আওতায় আনা হবে। একজনকেও রেহাই দেওয়া হবে না।’-যোগ করেন মাহবুব উল আলম হানিফ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছি। যারা সরাসরি হামলায় জড়িত, যারা ইন্ধন দিয়েছে, যারা পরামর্শ দিয়েছে, তারা যে দলেরই হোক, যত শক্তিশালী ব্যক্তিই হোক তাদের বিচার করা হবে। তাদের কঠোর শাস্তি দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হবে রাষ্ট্রের শক্তির কাছে কোনো শক্তিই কাজে আসবে না।’
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় বিএনপি-জামায়াত জ্বালাও -পোড়াও করে বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিল কিন্তু তারা পারেনি। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় রয়েছেন। তিনি দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যারাই এই উন্নয়ন আর অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
পরে নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, বাসভবন ও ভূমি অফিস পরিদর্শন করেন।
এ ছাড়া সমাবেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর ও সংসদ সদস্য ফারুক খান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও এস এম কামাল, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল সাহা, সহসভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক ঝর্না হাসান, মহিলা সম্পাদিকা আইভি মাসুদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক ভোলা মাস্টার, পৌর মেয়র অমিতাভ বোসসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি। এ সময় সহকারী কমিশনারের উপস্থিতিতে মানুষ ছোটাছুটি করে। পরে স্থানীয়রা জড়ো হয়। মানুষের ভিড় দেখে মারুফ সুলতানা ফুকরা বাজার থেকে চলে আসেন। পরে হেফাজতের এক আলেমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এমন গুজব ছড়িয়ে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরা ও লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও থানায় এই তাণ্ডব চালায়। হামলাকারীরা তিন ঘণ্টাব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তাদের এই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি উপজেলা পরিষদ চত্বরের গাছপালা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও। এতে সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তাণ্ডবচলাকালে ইউএনও-এসিল্যান্ডের দুটি সরকারি গাড়ি সম্পর্ণ পুড়িয়ে দেয় তারা। এ ছাড়া সাংবাদিকের একটি মোটরসাইকেলসহ তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয় এবং দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫৮৮ রাউন্ড শট গানের গুলি, ৩২ রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল, ২২টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৭৫ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ছুড়ে। এ ঘটনায় দুজন নিহত হয়, আহত হন অনেকে।
সালথায় সরকারি অফিস ও থানায় তাণ্ডবের ঘটনায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। এতে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও চার হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান এ মামলা করেন। এর মধ্যে বুধবার পর্যন্ত এজাহারভুক্ত আসামিসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
Corporate Office:
6/A Eskatan Garden
Dhaka, Bangladesh.
Mobile: 017111-66826
Email: mansoumit@yahoo.com
Helpline - +88 01719305766