
সদরুল আইনঃ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম।
গত নির্বাচনে তারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর পাঁচ বছর তারা হতাশ হননি। বরং সংগঠন গোছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
মাঠে তাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং কর্মী বান্ধব নেতা হিসেবে তারা প্রশংসিত হয়েছেন। যে কোনো সংকট এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাদের ভূমিকা ছিল ঈর্ষণীয় এবং নিজেদের যোগ্যতায় কর্মীদের আপন হয়েছেন এবং রাজনীতিতে নিজেদেরকে বিকশিত করেছেন, হয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক।
আর এই কারণেই তারা এবার পুরস্কার পাচ্ছেন। তাদের দুজনই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। ইতোমধ্যে তারা সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলেও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আর তাদের এই মনোনয়ন প্রাপ্তি মাঠের কর্মীদেরকে বিশেষ করে ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের জন্য এক নতুন আশাবাদ সৃষ্টি করেছে।
এ বারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মধ্যেই এক ধরনের লড়াই হচ্ছে। আওয়ামী লীগের যারা ত্যাগী পরীক্ষিত তৃণমূল, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারী এবং হাইব্রিডদের লড়াই। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই লড়াইটা ক্রমশ পুঞ্জীভূত এবং দৃশ্যমান হচ্ছে।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন আসনে হঠাৎ বনে যাওয়া আওয়ামী লীগ ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন ধরনের আমলাদের মনোনয়নের জোয়ার ঠেকাতে তৃণমূলের পরীক্ষিত কর্মীরা এককাট্টা হয়েছে।
আর একারণেই তৃণমূলের প্রত্যাশা যেন তৃণমূলে যারা কর্মী বান্ধব, যারা ত্যাগী, যারা কর্মীদের সঙ্গে কাজ করেন তারা যেন মনোনয়ন পান এবং তারা যেন নির্বাচনের মাঠে থাকেন। তারা যদি নির্বাচিত হন তাহলে তৃণমূলের জন্য একটি শক্তিশালী জায়গা হবে এবং তৃণমূলরা সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগে কোণঠাসা হয়ে পড়বে না।
বিশেষ করে যদি আওয়ামী লীগে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, আমলা এবং অন্যান্যরা মনোনয়ন বেশি পান, তাহলে বিকল্প আওয়ামী লীগ তৈরি হবে এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে মাই লীগের জন্ম হবে। যেটি গত দুটি নির্বাচনে লক্ষ্য করা গেছে।
এই দুই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তারা নির্বাচন করতে চান না। কিন্তু তারা এমন প্রার্থীদেরকে দেখতে চান যে সমস্ত প্রার্থীরা কর্মীদের খোঁজ খবর নেন, কর্মীদের পাশে থাকেন এবং কর্মীরা বিপদে আপদে তাদের যোগাযোগ করলে সাড়া পান। এরকম ব্যক্তিদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, বাহাউদ্দিন নাসিম অন্যতম।
মির্জা আজম ইতোমধ্যেই ছয়বারের এমপি। তিনি এবার মনোনয়ন পাবেন তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু গত নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার কারণে জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাছিমকে নিয়ে এবার কর্মীদের মধ্যে নানা রকম জল্পনা কল্পনা ছিল।
কিন্তু তাদের এই সবুজ সংকেত প্রাপ্তি আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে আশাবাদী করেছে, উল্লসিত করেছে। তারা মনে করছেন যে, এই ধারায় এবার হয়তো তৃণমূলের আরও অনেক ত্যাগী পরীক্ষিতরা মনোনয়ন পেতে পারেন।
বিশেষ করে যারা মাঠে কাজ করছেন এবং দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করছেন, তারা যদি মনোনয়ন পান তাহলে পরে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হবে।
আগামী নির্বাচনে নানা কারণেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আওয়ামী লীগ মনে করছে। বিশেষ করে নির্বাচনের পরও আওয়ামী লীগকে বিরোধী আন্দোলন এবং রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করতে হবে।
এই কারণে মাঠের নেতাদেরকে সংসদে নিয়ে আসার কোন বিকল্প নেই বলেই মনে করে তৃণমূল। আর তাই যারা দলের জন্য পরিশ্রম করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের মনোনয়নই আওয়ামী লীগের তৃণমূলের জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে তারা মনে করেন।