‘দুচোখে সোনার স্বপ্ন; পসরার ফাঁকি আর বাকী/সহসা অগুরু!’
আবেদীন কাদের
আমি অনেকদিন ধরেই শরীরের সঙ্গে এক অনাকাঙ্ক্ষিত মল্লযুদ্ধ করে চলছি। কখনও তাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি, অধিকাংশ সময়ই পারি না। অসময়ে ক্লান্তিতে শরীর এলিয়ে পড়ে, কাজের সময় সে নিয়ন্ত্রণে থাকে না। কিন্তু তীব্র মনের দৃঢ়তা দিয়ে এগিয়ে যেতে চাই, কিন্তু বিধি বাম! বলতে গেলে প্রায় কিছুই করে উঠতে পারি না। অনেক বছর ধরেই আমি এই প্রতিকূলতা নিয়ে দিন কাটাচ্ছি, কিন্তু বছর চারেক ধরে এর অবনতি এতোটাই যে আমি বেশ কিছুদিন ধরেই খুব ভয় পাচ্ছিএই ভেবে যে সময় ফুরিয়ে এলো বুঝি! অনেকবার হাসপাতাল-বাস, বার কয়েক সার্জারি ইত্যাদি করে মনের মধ্যে ভয়টা জাঁকিয়ে বসছে। মনে হয় পরিকল্পিত কাজের কিছুই করা হবে না।
এই শনিবারে দুপুর থেকেই ঊর্ধ্ব রক্তচাপ এবং আরও কিছু ইঙ্গিত শরীর জানাচ্ছিলো, তাই ঝুঁকি না নিয়ে শুয়ে পড়লাম টেবিলে বসে কাজের মাঝেই। রক্তচাপ ইঙ্গিত দেয় ঘাড়ে এক ধরণের ব্যথা ও অস্বস্তির জানান দিয়ে। এর থেকে নিস্তারের একমাত্র সহজ পথ শরীর বিছানায় এলিয়ে দেয়া। ভেবেছিলাম কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে কাজে মনোযোগ দিতে পারবো, কিন্তু কী যে এক গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলাম ঘণ্টা তিনেক! কিছুই টের পাইনি, বিকেলের আলো নিভে গেছে। সন্ধ্যা হয়েছে, হঠাৎ দরোজায় আঘাত! বুঝলাম বন্ধুদের কেউ এসেছেন। ধীরে গিয়ে দরোজা খুলে দেখি আহমাদ মাযহার ও নসরত শাহ। তখন মনে পড়লো ওঁর প্রতি সপ্তাহের অভ্যাসানুযায়ী নসরত আমাকে ফোন করেছিলেন আড্ডার জন্য কোন খাদ্যদ্রব্য বা পানীয়র প্রয়োজন আছে কিনা জিজ্ঞেস করতে! আমি ওঁকে যথারীতি কিছুই লাগবে না জানিয়ে দিয়ে বিছানায় চোখ বন্ধ করেছিলাম!
আমি ওঁদের দুজনকে বসতে দিয়ে একটু হাতমুখে জল ছিটিয়ে কফি মেশিন চালিয়ে এসে বসলাম। ওঁরা সম্ভবত দুজনে রাস্তায় আসতে আসতে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কথা বলছিলেন, তারই রেশ ধরে ওঁদের তর্কটা চলছিলো। আমি শুধু শুনে যাচ্ছিলাম। আমার আজকাল রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছা করে না। অনেকদিন গভীর রাতে একাকী ভেবেছি কেন আমি আমার তার্কিক স্বভাব থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। এর কিছু কারণ আমি জানি, তবে অধিকাংশই আমি জানি না। বছর তিরিশেক আগে আমি প্রথম লক্ষ করি আমার নিজের বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। আমি তখন সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ক্লাসের ছাত্র। বছর খানেক হয়েছে এদেশে আমার গ্র্যাজুয়েট ছাত্র হিশেবে, ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের বিভিন্ন তাত্ত্বিকদের লেখা থান ইটের মতো বইগুলো পড়ে পড়ে পেপার লিখে অধ্যাপকদের চোখ রাঙানি হজম করার এক ধরনের অভ্যাস আমার হয়েছে। লেখার পদ্ধতি ঢাকার স্কুল কলেজে যা শিখেছিলাম তা একেবারে পত্রপাঠ বিদেয় করে অধ্যাপকরা আমার পেপারগুলোকে লাল পেন্সিলে এমন রক্তাক্ত করে ফেরৎ দিতেন যে আমি শুধু রাত ভর চোখের জলে ভাবতাম কোথায় আমার চিন্তায় গলদ! ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম আমাদের শিক্ষাজগতে সত্যিকার অর্থে ক্রিটিকেলি চিন্তা করতে মূলত শেখায়ই নি আমাকে, আমি পশ্চিমা ছাত্র বা শিক্ষকদের মতো ভাববো কী করে। এভাবে বছর খানেক প্রায় রাতের ঘুম জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেকে কিছুটা তৈরি করে উঠলাম, পেপার লেখা শিখলাম কিছুটা, কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক/অর্থনৈতিক সমস্যাকে দেখা, বোঝা এবং বিশ্লেষণ করার পদ্ধতি শিখলাম কিছুটা। ধীরে ধীরে দেখলাম অধ্যাপকদের দেয়া গ্রেডের পরিবর্তন হতে থাকলো! আমি অধ্যাপকের টি এ হলাম, আর আমাকে নিজেকে চালিয়ে নিতে কাজের জন্য বাইরে সময় ব্যয় করতে হয় না, সারাদিন ও মধ্যরাত অবধি বিশ্ববিদ্যালয়েই কাটাতে পারি, হয় ক্লাসে নয়তো সেমিনারে, অথবা একেবারে লাইব্রেরিতে নিজের ক্যারেলে! এক সময় নিজেই লক্ষ করলাম কবি সৈয়দ শহীদের সঙ্গে বা অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে আমি যে ভারতীয় রাজনীতি বা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তক্কাতক্কিতে বিশ্লেষণ করি, তা অনেকটা আমার নিজের কাছেই অচেনা মনে হয়! সৈয়দ শহীদ পাক্কা ছাত্র ইউনিয়ন করা বামপন্থী মানুষ, কিন্তু ভীষণ স্বল্পভাষী ও আওয়ামী লীগের জেলা শহরের পাণ্ডাদের চাঁদাবাজি বা বহুশ্রেণী-ভিত্তিক দল হিশেবে তাদের রাজনৈতিক দ্বিচারিতা বিষয়ে একেবারে চাঁছাছোলা নির্মোহ সমালোচক। এটা সম্ভবত হয়েছিলো ওঁর যশোহর শহরের কিছু অভিজ্ঞতা থেকে। সেখানে ওঁদের পারিবারিক ঔষধের ব্যবসা, নিজেদের বাড়ি ও ছেলেবেলা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের অসততা দেখে দেখে ওঁর রাজনীতিবিদদের ওপর থেকে শ্রদ্ধা চলে গিয়েছিলো। আমি যখন আমাদের রাজনীতিকদের কথাবার্তা নিয়ে খুব নৈর্ব্যক্তিক আলোচনা করতে শুরু করতাম শহীদ হঠাৎ আমাকে খোঁচা দিয়ে বলতেন, ‘ভাই সাহেব, এতো আওয়ামী ক্রিটিক হলেন কবে থেকে! আগে তো আওয়ামীদের বিষয়ে একেবারে তেড়ে আসতেন আমার কথায়!’ আমি ততদিনে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বা জামাত নয়, বা নয় ভারতীয় কংগ্রেস, সিপিআই বা জনতা পার্টি, সবাইকেই একেবারে তীব্রভাবে কাঁটাছেঁড়া করতাম। রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর ভারতীয় কংগ্রেসে একটা ভিন্ন হাওয়া বইতে শুরু করেছিলো নব্বই দশকের মাঝামাঝি পিভি নরসীমা রাওয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বের কালে, কিন্তু আমি তখন ভারতীয় রাজনীতিকে আমার আগের বিশ্লেষণের ধরণ থেকে একেবারে পশ্চিমা ইতিহাসবিদদের চিন্তার আলোকে নির্মোহভাবে দেখতে শুরু করি। আমার তরুণ বয়স থেকে ভারতীয় রাজনীতির নাড়িনক্ষত্রের খোঁজ রাখতাম এবং কিছুটা ভারতীয় জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে চলমান রাজনীতি বিচার করতাম। এছাড়া ‘৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধীর অসাধারণ নেতৃত্ব ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য আমার মনে ভিন্ন একটা কৃতজ্ঞতাবোধ কাজ করতো। কিন্তু ইতিহাসবিদ প্যারী এনডারসন, পার্থ চ্যাটারজী ও অন্যান্য সাবলটার্ন ইতিহাসবিদদের লেখা পড়ে আমার ভারতীয় রাজনীতি বিশ্লেষণের চোখ দিনে দিনে বদলে গিয়েছিলো।
তাই বলা যায় নিউ ইয়র্কের গ্র্যাজুয়েট স্কুলের দীর্ঘদিনের শিক্ষা ও অধ্যাপনা আমাকে সমাজ ও রাজনীতি বোঝার ও চিন্তার বিশ্লেষণ একেবারেই বদলে দিয়েছিলো। তাই ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগের রাষ্ট্র পরিচালনার ধরণ আমাকে সত্যিই খুব বিষণ্ণ করতো। কিন্তু এসব নিয়ে আমি খুব একটা লিখিনি, যেহেতু সে-সময়ে আমার লেখার বিষয় কিছুটা আলাদা ছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগের সংসদে শাসনতন্ত্রে কেয়ারটেকার সরকারের বিলুপ্তি ঘটিয়ে পরিবর্তন এনে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় থেকে রাজনৈতিক দল হিশেবে আওয়ামী লীগের একটা বড় পরিবর্তন হয় যা আমাকে স্বস্তি দিচ্ছিলো না। আমার বন্ধুরা যারা ঢাকায় আমার স্কুল জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সাথী ছিলেন বা সাহিত্য ও লেখালেখির জগতে আড্ডার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, তাঁরা অধিকাংশই আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে ঘোর দক্ষিণ দিকে চলে যাওয়া বা রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার একক স্বৈরধারার নীতিকে বিরোধিতা তো করতেনই না, বরং ঠারে ঠেরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর অসীম নেতৃত্ব গুণ, আমাদের স্বাধীনতায় আওয়ামী লীগের অসাধারণ অবদান ইত্যাদি বক্তব্যের চাদরে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ত্রুটিকে ঢেকে দিতে চাইতেন। এদের সঙ্গে নিয়মিত তক্কাতক্কিতে আমি ভীষণ অস্বস্তি বোধ করতাম, আর এরাও আমাকে বন্ধু হিশেবে মেনে নিলেও আওয়ামী লীগ বিরোধী তার্কিক ভাবতেন। এর মধ্যে নিউ ইয়র্কের কট্টর বাকশালপন্থি অনেকে রয়েছেন। আমি যে যেকোন রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডকে দেখতে চাই নির্মোহ দৃষ্টিকোণ থেকে, এটাকে আমার লেখক বন্ধুরা, আড্ডার বন্ধুরা খুব একটা মেনে নিতে চাইতেন না। কারণ তাঁরা মুখে যদিও গণতন্ত্রের কথা বলেন, কিন্তু অন্তরে পাক্কা বাকশালী, যা স্বীকার করতে চান না। কবি সৈয়দ শহীদ ও আমি তাই নব্বই দশকের পর থেকে বন্ধুদের যতই বোঝাতে চাইতাম যে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা যদি আবার সেনাবাহিনী বা যে কোন স্বৈরশাসকের হাতে চলে যায় কোনভাবে, তাহলে আওয়ামী লীগ নিজের গণতান্ত্রিক রাজনীতির আর কোন পথ খোলা পাবে না, কারণ তাঁরা নিজেরাই সে-পথ বন্ধ করে দিচ্ছেন।
আমাদের এসপ্তাহের আড্ডায় যদিও বার বার বিষয় পরিবর্তন হচ্ছিলো তর্কের, কিন্তু শৈবাল, কবি এবিএম সালেহউদ্দীন, লেখক আদনান সৈয়দ আসার পর আমরা ঢাকার রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয় নিয়েই ফিরে ফিরে আসছিলাম। আমার প্রিয় একটা ছবিতে একটা ধ্রুপাঙ্গের গান শুনেছিলাম বহুদিন আগে, ‘মালিনী ফিরে ফিরে বল’! কেন যে আমাদের অস্থির বেদনাবিদ্ধ চিত্তের মাঝে একই ‘গান’ খেলা করছিলো জানি না। মনে পড়ে ‘৭৫ সালের আগস্টের সকালে সেই যে আমাদের জীবন অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিলো, দিন ও রাতের জীবন বদলে গিয়েছিলো, আজ সেকথাই মনে পড়ছিলো, এত বছর পর ঠিক তেমনি একটা অসহায়ত্ব ও অবশতা গ্রাস করছে আমাদেরকে। যদিও আমরা আড্ডার বন্ধুরা কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই, কোনদিন দলীয় রাজনীতিকে নিজেদের জীবনের অংশ করে নিই নি, কিন্তু কেন তাহলে আমাদের চিন্তাশক্তিকে এভাবে অবশ করে দিচ্ছে দেশের বর্তমান অবস্থা!
শৈবাল ও মাযহার আমাদের তরুণ বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাজ্ঞ মন, জানি না ইচ্ছে করেই কিনা, নাকি মমীন ভাই তাঁর ও লোপা ভাবির এনিভারসারির ডিনার শেষ করে আড্ডায় যোগ দিলেন বলে তাঁকে খোঁচা দিতেই কিনা, সবার কাছে জানতে চাইলেন, বিয়ে বস্তুটা আসলে কী! কী এর চারিত্র! আমি তো দাম্পত্য নামক বিষয়ে আলোচনায় সাধারণত যোগ দেই না সঙ্গত কারণে। যদিও প্রায় আড়াই দশক ধরে ক্লাসরুমে আমি ‘বিবাহ ও যৌনতা’ পড়াই, এবিষয়ে তাত্ত্বিক বিষয় বা একাডেমিক বিতর্কগুলো আমার জানা আছে। কিন্তু অভিজ্ঞতার দিক থেকে আমার এই অজানা জগতে আমি জড়াতে চাই না। মাযহার ও শৈবাল বিষয়টার ভালো ও মন্দ দিকগুলো নিয়ে কিছু কথা বললেন। আমি হঠাৎ বললাম, আমার বন্ধুদের মধ্যে প্রায় সবাই বিবাহিত, তাঁদের প্রায় সবাইকে পাড় ‘মিথ্যুক’ মনে হয় আমার কাছে! সরাসরি এভাবে মিথ্যুক দেগে দেয়াকে অনেকেই মেনে নিতে পারেন না তাঁরা, তবে আড্ডায় আসা থেকে হাজারটা বিষয় নিয়ে যে সারাক্ষণ বউয়ের কাছে মিথ্যাচার করতে হয় তাঁদের, এটা তাঁরা বিলক্ষণ জানেন, তাই আমার কথায় তেমন জোরালো কণ্ঠে প্রতিবাদও করলেন না। কিন্তু মমীন ভাই ও শৈবাল স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক এবং জাগতিক নিগোসিয়েসনটাকে কিছুটা সোজাসাপটা ভাষায় সংজ্ঞায়িত করার পক্ষে। কিন্তু এটাকে একাডেমিক ভাষায় বললে অনেকটা সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুরখেইমের ফাংশনালিস্ট তত্ত্বের কাছাকাছি রূপ দেয়া যেতে পারে। একটি সমাজ, পরিবার বা জনগোষ্ঠীকে স্থিতিশীল রাখতে প্রতিষ্ঠান হিশেবে ‘বিবাহ’কে কীভাবে বিচার করা জরুরি, বা বলা যায় কী ধরণের ‘বিবাহ’ বা দাম্পত্য আদর্শ তা অনেকটা এরকম যা শৈবাল বা মমীন ভাই মনে করেন। কিন্তু আধুনিক লিব্রেল শিক্ষিত পশ্চিমা মনের মানুষদের পক্ষে সেটাকে কিছুটা ‘রক্ষণশীল’ মনে হতে পারে। স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে বয়সের তফাৎ, শিক্ষার তফাৎ বা অন্যান্য বিষয়ে দূরত্ব ‘শান্তিপূর্ণ’ বা ‘সুখী’ দাম্পত্যের চাবিকাঠি মনে করেন অনেকে, কিন্তু পশ্চিমা শিক্ষিত অনেকেই এর বিপরীত ভাবেন সম্পর্কের ক্ষেত্রকে। আমি বিষয়টাকে সেভাবে দেখি না। আমার এক শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক একবার আড্ডায় জানিয়েছিলেন তক্কাতক্কির সময়, ‘এলিট শ্রেণীর’ অস্তিত্ব সমাজে প্রয়োজন কিনা সে- বিষয়ে বলতে গিয়ে। তাঁর ভাবনাটা অনেকটা এমিল ডুরখেইমের কাছাকাছি, তিনি বলেছিলেন, ‘এলিটরাই সমাজের ভ্যানগার্ড, তাঁরাই সমাজকে এগিয়ে নেন।’ আমি বিষয়টাকে ততোটা সরলরেখায় আঁকা মনে করি না। তবে ডুরখেমিয়ান তত্ত্বে সমাজে স্থিতিশীলতার জন্য কিছু কিছু ইন্সটিটিউশন ও শ্রেণী বিভাজন জরুরি।
আমাদের ‘বিবাহ’ বিষয়ে তক্কাতক্কিতে ‘যৌনতার’ ভূমিকা দাম্পত্যে কী, তা নিয়ে সরাসরি কেউ আলোচনায় গেলেন না, এটা হয়তো আমাদের মধ্যবিত্ত বাঙালি-সংস্কৃতি বা স্বভাবের কারণেই, কিন্তু এটা যে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা কেউ অস্বীকারও করলেন না। কথা ওঠে পশ্চিমা সমাজে তো বটেই, এমন কি আমাদের সমাজেও বিয়ের চাহিদা দিনে দিনে কমে আসছে, অথবা বিবাহ বিচ্ছেদের হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, এর কারণ কী। একটি কারণ হতে পারে, বিয়ে আমাদেরকে যা দিতে পারে তা আমরা বিয়ে না করেও সহজেই পেতে পারি, সেজন্য। পশ্চিমা সমাজে নারী পুরুষের যৌথজীবন বা যৌথবাস বেআইনি নয়, বিয়ে না করেও সন্তান ধারণ, প্রতিপালন, সম্পত্তি ক্রয়, সব কিছুই করা যায় এবং রাষ্ট্রের কাছ থেকে কর প্রদান বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যে সুবিধা বিবাহিত মানুষরা পেয়ে থাকে তাও পাওয়া সম্ভব। তাই বিবাহের প্রতি তরুণ তরুণীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সমাজে একদিকে যেমন ধর্মের বা রক্ষণশীলতার হার বাড়ছে, অন্যদিকে তরুণ তরুণীর যৌথবাসের হারও বিপুল হারে বাড়ছে। কবি লেখকদের মধ্যে এই হার বেশ বেশী আজকাল। বিশেষ করে ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদের হার তো বেশ বেশি। এমনকি আমাদের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উচ্চকণ্ঠ সদস্য তো বয়স পঞ্চাশে পৌঁছনোর অনেক আগেই খান তিনেক বিয়ে করে ফেলেছেন। অনেকের মতে তিনি আবার অতি সংগোপনে নাকি কিছুটা জামাত-ঘেঁষা মানুষ!
এসময় লেখক আদনান সৈয়দ আমাদের বাবা মাদের প্রজন্মের ও আজকের দম্পতিদের মাঝে প্রেম বা রোমান্টিক সম্পর্কের যে প্রকাশ, তার পার্থক্য বিষয়ে বলেন। নিজের বাবা মায়ের মাঝে দেখা ছোট ছোট সম্পর্কের প্রকাশ তাঁকে কিছুটা ভাবায়, আনন্দও দেয়। যেমন আদনানের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক পিতা কলেজে যাওয়ার আগে খুব তড়িঘড়ি করে জামা জ্যাকেট পরে টাই বাঁধতেন, তাঁর খাওয়ার সময় নেই বলে হাঁক দিতেন। কিন্তু আদনানের মা তাঁকে টাই ধরে টেবিলে বসিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন। বাবার এই তড়িঘড়ি করা আদনানের মনে হতো মায়ের হাতে বাবার খাওয়ার বাহানা। এটাই ছিলো তাঁদের দুজনের রোমান্টিক সম্পর্কের প্রকাশ হয়তো! এসময় আমার মনে পড়ছিলো, আমাদের বিখ্যাত লেখক ও অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের একটি অভ্যাসের কথা। সম্ভবত তাঁর কন্যা সনজীদা খাতুনের লেখায় পড়েছিলাম, অধ্যাপক মোতাহার হোসেন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় খেয়ে দেয়ে পোশাক পরে অপেক্ষা করতেন স্ত্রীর হাতের পানের জন্য। অধ্যাপক গিন্নির তাঁকে পান মুখে পুরে দিতে হতো, আর তখন অধ্যাপক সাহেব হেসে স্ত্রীর হাতের আঙুলে কামড়ে দিতেন, এটাই ছিলো তাঁদের রোমান্টিক বা প্রেমময় সম্পর্কের প্রকাশ। আজকের দম্পতিদের প্রেমের প্রকাশ নিশ্চয় ভিন্ন!
পশ্চিমা জগতে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে ১৯৭১ সালে বিয়ের হার (ষোল বছরের অধিক বয়সী ১০০০ জনের মধ্যে) ছিলো ৮২.৩, ১৯৮১ সালে তা এসে দাঁড়ায় ৫১.৭-এ, এবং প্রতি বছর তা কমতে কমতে ২০০১ সালে এসে দাঁড়ায় ২৫.৫- এ । সমাজবিজ্ঞানীরা অপরাধ সমাজে বেড়ে গেলে তরুণ তরুণীদের ঠিক সময়ে বিয়ের নিধান দেন অনেকে, কিন্তু অনেকে আবার ‘পরিবার’-এর সদ্যসদ্যের মাঝে বন্ধন দৃঢ় হলে অপরাধ সেই সমাজে কম হয় বলে মনে করেন, সমাজবিজ্ঞানের গবেষণায়ও তা অনেকটা সঠিক দেখা গেছে। ধার্মিক বা রক্ষণশীল সমাজপতিরা পারিবারিক সম্পর্ক বা দৃঢ়তাকে খুব মূল্য দেন এবং রাজনীতিতে এটা প্রচারও করেন রক্ষণশীলরা। কিন্তু লিব্রেল রাজনীতিকরা এর বিরোধিতা করেন। ইউরোপের লিব্রেল সমাজগুলোতে অপরাধের হার একেবারেই কম, বিশেষ করে স্ক্যানডেনেভিয়ান দেশগুলোতে, তেমনি সেখানে আবার বিবাহের হারও ভীষণ কম! রক্ষণশীল রাজনীতিকদের বিধান সেখানে সত্যি নয়।
এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে আড্ডার বন্ধুরা বিবাহ ও যৌনতার প্রসঙ্গ তোলেন। কেন আমাদের সমাজে বিজ্ঞান বা আধুনিক প্রযুক্তির ভূমিকা এতোটা বেড়ে যাওয়ার পরও ‘বিশ্বাস’ বা ধর্মের প্রভাব তরুণ প্রজন্মের ভেতর বেড়ে গেলো! এবিষয়টা সমাজবিজ্ঞানীদের অন্বেষণের বিষয়। শৈবাল ও মাযহার এর কারণ হিশেবে জানিয়েছেন কিছু তথ্য, যেমন ঠিক একই তথ্য জানিয়েছিলেন আরেকটি বিষয় কথা বলতে গিয়ে গত সপ্তাহে তানভীর রব্বানী। সেটি হলো আমাদের সমাজে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে, কিন্তু বিজ্ঞান শিক্ষা বা বিজ্ঞানের গবেষণা বাড়েনি, বরং কমেছে। অর্থনীতির বিশ্বায়নের ফলে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে মার্কিন পুঁজির লগ্নি ঘটেছে কোরিয়া, মালয়েশিয়া, চীন ও আরও কয়েকটি দেশে। সেখানে ইনফরমেশন প্রযুক্তির প্রায় সবগুলো শিল্পদ্রব্য উৎপাদিত হয়। অত্যন্ত সুলভ মূল্যে মোবাইল ফোন থেকে ট্যাবলেট ও ল্যাপটপ পাওয়া যায়। দরিদ্র দেশগুলোতেও ওয়াইফাই সুলভে পাওয়া সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে বিপুল জনসংখ্যার অধিকাংশ মানুষ এই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এবং ইন্টারনেটের সুবিধা নিয়ে থাকে, কিন্তু অন্যদিকে শিক্ষার মান বিবর্ধমান হারে অধোগতির দিকে। ফলে বিজ্ঞান শিক্ষা বরং গত তিরিশ বা চল্লিশ বছরে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই মানুষের মন একেবারেই বিজ্ঞানমনস্ক নয়, বরং প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ইউটিউব ও ইন্টারনেটের কারণে সস্তা বিজ্ঞানবিরোধী কার্যকলাপ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একদিকে মন অন্ধ হচ্ছে, অন্যদিকে জগতের সকল উন্নত দেশের কুসংস্কৃতি জনপ্রিয় হচ্ছে। এর ফলে জনচিত্ত যেমন হচ্ছে ধর্মের দিকে আসক্ত, তেমনি তাদের স্বল্প শিক্ষা বা অশিক্ষার জন্য ধর্মের এসেন্সকে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশের মতো আধাশিক্ষিত বা প্রায়-অসংস্কৃত সমাজে যৌনতার সৌন্দর্যকে ভুল ব্যাখ্যায় তরুণদের সামনে হাজির করছে। বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, পোশাক হিশেবে মেয়েদের হিজাব বাড়ছে, অন্যদিকে বিবাহ-বহির্ভূত যৌথবাসের সংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাড়ছে বড় নগরগুলোতে। শৈবাল ও মাযহার এই প্রবণতার যে তথ্য দিয়েছেন, এর হার বাড়ার যে যুক্তি দিয়েছেন তার সঙ্গে নসরত ও এবিএম সালেহউদ্দীনও প্রায় একমত পোষণ করেন। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কবি সালেহউদ্দীন খুব কোমল স্বভাবের দরদী হৃদয়ের মানুষ। তাঁর শ্মশ্রুমণ্ডিত চেহারা এবং সৌদি আরবে তরুণ বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া, ইত্যাদির কারণে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়াই আমার ভুল ধারণা ছিলো যে সালেহউদ্দীন কবিতা লিখলেও তিনি কিছু কিছু সামাজিক কনভেনশন ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে রক্ষণশীলতার পক্ষে, কিন্তু সালেহউদ্দীন আমার সে-ভুল ভেঙ্গে দিয়েছেন সামাজিক বহু বিষয়ে তাঁর উদারনৈতিক চিন্তার বক্তব্য দিয়ে।
মাযহারের ও শৈবালের যুক্তির রেশ ধরেই মমীন ভাই দাম্পত্য সম্পর্ক বিষয়ে কিছু বক্তব্য দেন। এই যুক্তির বা বক্তব্যের ছায়া পাওয়া যায় অক্সফোর্ড রিসার্চ প্রজেক্টের কিছু গবেষণা তথ্য থেকে। ২০০২ ও ২০০৩ সালে অক্সফোর্ড রিসারস প্রজেক্টের অধীনে যে গবেষণা করেন সমাজবিজ্ঞানী ম্যাভিস ম্যাক্লিন ও জন ইকেলার, তার ফলে যে গবেষণা প্রবন্ধ বের হয় ২০০৪ সালে Personal Relationships, Marriage and Morals শিরোনামে, তাতে দেখা যায় যে আধুনিক প্রযুক্তিও এর বিপুল প্রভাব বিজ্ঞান শিক্ষায় অনুন্নত দেশগুলোর সংস্কৃতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সংস্কৃতি বেড়ে গিয়ে তা বিশ্বাসের মোড়কে ধর্মীয় রাজনীতি তীব্র করতে পারে, যা আসলে আধুনিক শিক্ষার বিরোধী প্রভাব রাখবে সমাজে। আমাদের সমাজে এটাই বেশি ঘটেছে বলে মনে হয়। কারণ তরুণ প্রজন্মের হাতে একদিকে প্রযুক্তি ও বিশ্বের তথ্য ভাণ্ডার তাদের করতলে, অন্যদিকে শিক্ষার মান দ্রুত গতিতে নিম্নগামী। এর নিট ফল হিশেবে দেখা গেছে ইন্টারনেট বা ইনফরমেশন টেকনোলজির খারাপ দিকগুলো আমাদের তরুণরা বেশি নিচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার চাইতে। কিন্তু এই গবেষণার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিলো বিবাহ পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দেয়, যা নগরায়ণ বা শিল্পায়ণের বিরোধী। শিল্প বিপ্লব নগরের সৃষ্টি করে, নিউক্লিয়াস ফ্যামিলি সৃষ্টি করে, ব্যক্তিক ‘স্বার্থপরতা’ ইনডিভিজুয়ালিজম বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু বিবাহ বা কনভেনশনাল বিবাহপ্রথা এর বিপরীতে পরিবারের প্রতি অব্লিগেশন বা দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের সমাজে তরুণদের যে-সাম্প্রতিক ঝোঁক বা রাজনৈতিক ঝোঁকগুলো লক্ষ করা যাচ্ছে তা অনেকটা বিজ্ঞানমনস্কতাবিরোধী বলা যায়। তাহলে চিন্তার বিষয় একদিকে প্রযুক্তির কুফলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অপসংস্কৃতি বেড়ে যাচ্ছে, ‘বিশ্বাসী’ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে পশ্চিমা সংস্কৃতির অনেকগুলো উপাদানের প্রতি আসক্তি বাড়ছে, যেটা তরুণ তরুণীদের যৌন প্রবণতা, বিবাহ-বহির্ভূত যৌথবাস বা কোহেবিটেশন বেড়ে যাচ্ছে। এই বিষয়গুলো থেকে সমাজকে রক্ষা করা সম্ভবত খুব সহজ হবে না আগামী দুতিন দশকে। বরং পুঁজির বিশ্বায়ণ এবং অধিক হারে বিদেশগামী শ্রমিকের সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ফলে ভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি দেখা দিতে পারে তরুণ সমাজের মাঝে। সেটা শুধু শিক্ষিত শহুরে নাগরিকদের মধ্যেই নয়, বিপুল হারে দরিদ্র গ্রামের যুবক যুবতীরা বিদেশমুখী হচ্ছে শ্রমিকের কাজের সন্ধানে বলেও। এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রয়োজন, কারণ বিদেশী সংস্কৃতি শুধু উদারনৈতিক পশ্চিমা সংস্কৃতিই নয়, তমসাঘেরা মধ্যযুগীয় মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতিও। এঁর সেটাই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি মাত্রায়, কারণ বিদেশগামী শ্রমিকের সংখ্যা বিপুল হারে মধ্যপ্রাচ্যমুখী, পাশ্চাত্যমুখী শ্রমিকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
আমরা প্রতিষ্ঠান হিশেবে ‘বিবাহ’ বিষয়ে এবং এর সঙ্গে যৌনতাকে সাধারণ বাঙালি মন কীভাবে নেয়, এঁর নগরবাসী কবি লেখক শিল্পী মধ্যবিত্তরা কীভাবে নেয়, তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করবো আরেকদিন, এই বলেই আড্ডার ক্ষান্তি টানলাম। রাত বেশ গভীর হলে সবাই বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন।
আমি একাকী টেবিলে পড়াশুনার কাজে বসবো ভাবলাম, কিন্তু গত দিন কুড়ি ধরে যে অস্থিরতা আমাকে গ্রাস করছে, লেখা বা অন্যান্য পড়াশুনাকে প্রায় স্তব্ধ করে দিয়েছে, তার কোন প্রতিষেধক আমার জানা নেই। অনেকটা অবসাদগ্রস্ততা যেন, মানসিক শুধু নয়, শারীরিকও! ঠিক এমন ধরনের এক দুশ্চিকিৎস্য ব্যাধি আমাকে অনেকদিন পর্যুদস্ত করে রেখেছিলো ‘৭৫ সালের আগস্টের পর! আমাদের গত দশ বছরের রাজনৈতিক অপশাসন আমাকে যেমন অন্তর্গত রক্তক্ষরণের শিকার করেছে, আমি সে-সবের তীব্র বিরোধিতা করেছি আমার বিভিন্ন লেখায়, তেমনি ছাত্রদের আন্দোলনের পর যে-অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে, তাদের চারিত্র বিষয়ে আমি ভীষণ স্কেপটিক, তাদের আসার পেছনের ‘শক্তি’ বিষয়েও আমি সন্দিহান, আমাদের মিডিয়া বা রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা যে বয়ান দিচ্ছে, আমার মন তা সর্বাংশে মেনে নিতে অপারগ! অবসন্ন মন বার বার বলে, আমার সামান্য সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান দিয়েই আমাদের রাজনীতির দুরাচারিতা ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক লেখা প্রস্তুত করা জরুরি! এসব দুর্ভাবনা আমাকে সত্যিই ক্লান্ত করে দিচ্ছিলো, নির্ঘুম কাটালাম প্রায় সারা রাত!
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: [email protected]
Web Design by: SuperSoftIT.com