ঢাকা ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি


নিউ ইয়র্কে শনিবারের আড্ডা

redtimes.com,bd
প্রকাশিত আগস্ট ২৫, ২০২৪, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ
নিউ ইয়র্কে শনিবারের আড্ডা

‘বিবর্ণ দিনের দীপ্তি মুছে দিল সে-চলন্ত ছবি’ !

আবেদীন কাদের

আমার বন্ধুদের মধ্যে, যারা অন্তত নিউ ইয়র্কে থাকেন, আমাদের আড্ডায় সাথী, তাঁদের কাউকে পেলাম না যিনি আমাদের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে চিন্তিত নন। সবাই মানসিকভাবে বিষণ্ণ, কারণটা এমন নয় যে এঁরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, কিন্তু সবাই লেখক বা শিল্পী, তাঁদের মন কেন এতো বেশি জন্মভূমির রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন, বিষয়টা আমাকে ভাবায়। এঁদের সবাই স্বেচ্ছানির্বাসনে। একমাত্র আমাদের শ্রদ্ধেয় বন্ধু লুৎফর রহমান রিটন ছাড়া কেউ রাজনৈতিক কারণে প্রতিহিংসা ও কষ্ট বা অপমানের শিকারও হন নি! বিএনপি সরকার দ্বারা জাপানে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনের সময় রিটন ভীষণ নিগৃহীত হয়ে বহুদিন পাসপোর্টবিহীন হয়ে বিভূঁইয়ে মানসিক আর্থিক ও অন্যান্য যন্ত্রণার মধ্যে কাটিয়েছেন শিশুকন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে। বাকীরা প্রায় সবাই স্বেচ্ছা নির্বাসনে বা ভাগ্যবদলের জন্য বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন, কিন্তু সারাক্ষণ মনটা তাঁদের পড়ে থাকে নিজের ভূমিতে!
প্রায় দুই দশক আগে আমি একটা প্রবন্ধ লিখেছিলাম ‘দূরে থাকার বেদনা, দূরে থাকতে না পারার রক্তক্ষরণ’ শিরোনামে। সেখানে আমি সংবেদনশীল মানুষের নিজের ঘরবাড়ি বা জন্মভূমি ছেড়ে থাকার কষ্টটা কী ভয়াবহ তা কিছুটা বোঝাতে চেয়েছিলাম। নির্বাসিত জীবনে সব ধরণের কষ্ট মেনে নেয়া সম্ভব, হোক তা আর্থিক বা শারীরিক, কিন্তু মানসিক ক্ষরণটা কেমন তা সহজে কাউকে বোঝানো যায় না। লোকনাথ ভট্টাচার্য থেকে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ বা শামসুদ্দীন আবুল কালামের লেখায় কিছুটা বোঝা যায়। সবচেয়ে বেশি বোঝা যায় সালমান রুশদী ও মিলেন কুণ্ডেরার শেষ দিকের লেখা, ব্যক্তিগত জর্নালের প্রতিটি পঙক্তিতে!
এসপ্তাহের আড্ডায় বিষয়টি নিয়ে শুরুতেই কথা উঠলো। আমি একটু ক্লান্ত ছিলাম, তাই কবি শামস আল মমীন আসার পর কফি মেশিন চালাতে গিয়ে লক্ষ করলাম মমীন ভাই বাসা থেকে অনেক শুকনো খাবার নিয়ে এসেছেন, হাতে কফির পেপার কাপও। তাই ভাবলাম অন্যরা এলে কফি বানানো ভালো হবে। কিন্তু মিনিট কয়েকের মধ্যেই আমাদের একেবারে নতুন অতিথি জাহাঙ্গীরনগরের ইংরেজির দুই প্রাক্তন ছাত্র, দম্পতি শামীম আরা ও নাসির এসে উপস্থিত হলেন। এঁরা দুজনই আমাদের বন্ধু কবি আহমেদ শামীমের সহপাঠী ও বন্ধু। এসময়ই দুচার কথার পর নির্বাসিত লেখকদের বিষয়ে কথা উঠলো। বিষয়টা আমার খুব প্রিয়, বিশেষ করে নির্বাসিত লেখকদের মনস্তাত্ত্বিক ক্ষরণ বিষয় হলে।
গত শতাব্দীর ইউরোপীয় অনেক লেখকের লেখা নির্বাসিত জীবন থেকে লেখা হয়েছে। এসব লেখার মানও অনেক উঁচু। এঁদের মধ্যে টমাস মাস, নেলী সাক্স, রেমন সেনডার, রাফায়েল আলবারতি, উইটলড গমব্রইক্স, চেশয়াভ মিউস, ভ্লাদিমির নভকভ, আলেকজানডার সোলজেনেতসিন, বা ই. এম সিয়রন। নির্বাসনে বসে সাহিত্য বা শিল্পকর্ম করার ইতিহাস অতি প্রাচীন, বিশেষ করে অভিদ, দান্তে, ভিক্টর হুগো বা হাইনরিশ হাইনে, কিন্তু নির্বাসনে বসে নিজের জাতীয় ভাষায়, বা মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু গত এক শতাব্দীর এই নির্বাসিত লেখকদের সাহিত্য সৃষ্টির সঙ্গে রাজনৈতিক অভ্যুত্থান বা স্বৈরশাসনের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়া, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, স্পেন, পোল্যান্ড, , বালটিক দেশসমূহ এবং সম্প্রতি জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক বা জিডিআর-এর বিভিন্ন লেখকদের ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে বিবেচ্য। ডান এবং বাম এই দুই রাজনৈতিক নীতিপন্থী সরকার ব্যবস্থায়ই দেখা যায় লেখকদের ওপর টোটালিটারিয়ান সরকার চড়াও হয় এবং বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদেরকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেয়। বাংলাদেশের সরকার অর্থাৎ সাম্প্রতিক আওয়ামী লীগ সরকার লেখকদের ক্ষেত্রে এটা খুব বেশি একটা করেনি, কিন্তু দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে। এর আগে বিএনপি সরকার লেখক তসলিমা নাসরিনকে দেশত্যাগে বাধ্য করে। সত্তর দশকে ধর্মে আঘাত করে কবিতা লেখার কারণে দাউদ হায়দারকে জেলবন্দী করে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার, কিন্তু পরে তাকে ভারত সরকারের বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেয় যাতে সে নিরাপদে পশ্চিমবঙ্গে পড়াশুনা করতে পারে। যাদবপুর থেকে স্নাতক ডিগ্রী শেষ করে দাউদ পরে জার্মানিতে রাজনৈতিক শরণার্থী হিশেবে আশ্রয় পায় একজন বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদের সহায়তায়, যিনি আশির দশকে জাতিসংঘ শরণার্থী দপ্তরে জেনেভায় কাজ করতেন। এতে সহায়তা করেন বিখ্যাত লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় ও জার্মান নোবেল বিজয়ী লেখক গুন্টার গ্রাস। এসব বিষয় নিয়ে আড্ডায় কথা চলে। কিন্তু ‘নির্বাসন’ বা ‘একজাইল’ অনেক লেখকের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে ‘সংস্কৃতির দূত’ ভাবনা থেকে, যাদের পেশাগত অস্ত্র আসলে ভাষা বা কলম, যার সাহায্যে এসব লেখক শিল্পীরা তাঁদের ঐতিহ্য বা জাতীয় পরিচয়কে অক্ষুণ্ণ রাখার সংগ্রামে রত ছিলেন! অনেকে মনে করে জার্মান সাহিত্যের যারা শক্তিশালী শিল্পী, লেখক বা সাংবাদিক ছিলেন ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত, তাঁদের অনেককেই এই ‘নির্বাসন’ বা পরদেশে আশ্রয় নিয়ে তাঁদের সাহিত্য, শিল্প বা রাজনৈতিক সাংবাদিকতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছিলো। এই ‘সাংবাদিকতা’ আসলে ছিলো জার্মান ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখা। ১৯৩৩ সালের ৩০ জানুয়ারির পর জার্মান সরকার, অর্থাৎ হিটলার পরিচালিত ‘ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টী’, যা নাৎসি পার্টী নামে পরিচিত ছিলো, যে অত্যাচারী বা রিপ্রেসিভ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, ও এর ফলে বিপুল সংখ্যক লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, অধ্যাপক ও বৌদ্ধিক জনগোষ্ঠী জার্মানি ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিতে থাকে। এঁদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক ইহুদী ছিলেন। ফ্রাঙ্কফোরট স্কুলের বেশ কয়েকজন পণ্ডিত, মার্কসীয় ও নিওমার্কসীয় অধিকাংশ তাত্ত্বিক দেশ ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং উত্তর আমেরিকায় পাড়ি দেন। এঁদের অনেকেই প্রথমে ফ্রান্স ও স্পেন হয়ে অথবা পর্তুগাল হয়ে জাহাজে চাপেন। এমন একটি দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক হ্যানা এরেনট, হারবারট মারকিউজ ও ওয়াল্টার বেনজামিন। সীমান্ত পার হয়ে স্পেনে ঢুকতে গিয়ে সীমান্ত কর্মকর্তারা বার বার তাঁদের আটকে দেয় আইনি ভিসা থাকা সত্ত্বেও, কিন্তু সবাই কয়েকদিন পর সীমান্ত পার হয়ে জাহাজে উঠতে পারেন। একমাত্র ওয়ালটার বেনজামিন ছাড়া। তাঁকে কর্মকর্তারা ছাড়ছিলো না। কিন্তু দেখা গেলো তিনি অপেক্ষা করছিলেন যে হোটেলে সেখানে এক রাত্রে খুন হন। পরে সন্দেহ করা হয় স্টেলিনের চাইরা তাঁকে খুন করে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় এই কালজয়ী দার্শনিকের সঙ্গে ছিলো দুই ট্রাঙ্ক ভর্তি তাঁর বিভিন্ন লেখার পাণ্ডুলিপি, যা আর খুঁজে পায়নি পুলিশ। এই দলের লেখক দার্শনিকদের মধ্যে হারবারট মারকিউজ ও হ্যানা এরেনট পরে বিভিন্ন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। অধ্যাপক এরেনট ও মারকিউজ নিউ ইয়র্কের নিউ স্কুলে অনেকদিন অধ্যাপনা করেছেন। এঁরাই ছিলেন জার্মানির ‘নির্বাসিত’ লেখকদের মধ্যে নামকরা।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে আড্ডায় কথা বলতে গিয়ে সম্প্রতি ক্ষমতা হারানো দল আওয়ামী লীগের নিষ্পেষণের শিকার লেখকদের কেউ কেউ নির্বাসিত হয়েছেন, কিন্তু চারিত্রিক দিক থেকে বা লেখার বিষয় চিন্তা করলে এসব লেখকদের বিষয়ে এখনও খুব ভালো গবেষণা হয়নি। একটি সাদৃশ্য সম্ভবত বাঙালি নির্বাসিত লেখকদের সঙ্গে জার্মান নির্বাসিত লেখকদের রয়েছে, সেটি হলো অধিকাংশ জার্মান নির্বাসিত লেখক অধ্যাপক ও শিল্পীরা ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ থেমে গেলে দেশে ফিরে যাননি, তেমনি বাঙালি লেখকদের যারা নিগৃহীত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশ দেশে ফিরে যাওয়ার কোন প্রবণতা দেখাচ্ছেন না, একমাত্র শেফিক রহমান ছাড়া। কিন্তু জার্মান ও বাঙালি লেখকদের স্বদেশে না ফিরে যাওয়ার কারণ এক নয়। ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় বিপুল পরিবর্তন, ধ্বংসাবশেষের বেদনা জার্মান লেখকশিল্পীদের না ফেরার অন্যতম কারণ, সঙ্গে আরেকটি রাজনৈতিক কারণ ছিলো জার্মানি দ্বিখণ্ডিত হয়ে একটি খণ্ড কম্যুনিস্ট শাসনে চলে যাওয়া। অনেক সময় জার্মান লেখক শিল্পীদের নির্বাসন থেকে দেশে না ফেরার কারণ ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়, এবিষয়ে সিডনী রোজেনফিলডের বিখ্যাত গবেষণা প্রবন্ধ ব্যাখ্যা দেয় জার্মান নির্বাচিত লেখকদের না ফেরার কারণগুলোর মধ্যে জোরালো কারণ ছিলো লেখার স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক উদারনীতিক সমাজব্যবস্থা তাঁরা পেয়েছিলেন তাঁদের নির্বাসিত দেশেই। কিন্তু বাঙালি লেখকদের এই ‘লেখার স্বাধীনতার’ চেয়েও বেশি জোরালো কারণ সম্ভবত ইউরোপ বা অন্যান্য দেশে জীবনের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য নিরাপত্তা বেশি।

যারা আজকাল ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ‘নির্বাসিত লেখক’, এদের অধিকাংশই মূলত সৃষ্টিশীল বা চিন্তাশীল লেখক নন, বরং সামাজিক মাধ্যমে অপেশাদার সৌখিন লেখক। এঁদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন দুর্নীতিপরায়ণ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা, সামরিক ও বেসামরিক আমলা। বাংলাদেশের অনেক দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ী ও আমলারা নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, টরোনটো ও কুয়ালালুমপুরে স্থায়ী নির্বাসন নিয়েছে নিজেদের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ রক্ষার নিমিত্তে। এদের অনেকে নিজেদেরকে লেখক দাবি করে। বিশেষ করে টরোনটোতে অনেকে বিপুল সম্পদ নিয়ে প্রবেশ করে নিজেদের আয়েসি জীবন শুরু করেছে, এরাই সামাজিক মাধ্যমে বেশি লেখাজোখা করে! এদের লেখার বা ‘বাজে লেখার’ মূল বিষয় রাজনৈতিক নিবন্ধমূলক। এদের মধ্যে সৃষ্টিশীল বা চিন্তাশীল লেখক কম! এভাবেই আমি, মাযহার, মমীন ভাই নির্বাসন ও কবি সাহিত্যিকদের চিন্তায় তার যে ইমপ্যাক্ট পড়ে সে-সব নিয়ে কথা বলে চিলছিলাম অনেকক্ষণ। হঠাৎ খেয়াল হলো প্রায় আটটার কাছাকাছি বেজে গেছে, দরোজায় কবি অভীক সোবহান, কথাশিল্পী বদরুন নাহার এবং সঙ্গে ওঁদের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফারজানা সিদ্দিকা রনি এসেছেন। ফারজানার সঙ্গে আমার আগে পরিচয় ছিলো না, কিন্তু এই দিনই জানলাম ব্যক্তিগত জীবনে ফারজানা কথাশিল্পী প্রশান্ত মৃধার স্ত্রী। ফারজানা অধ্যাপনা করেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানেই অভীক ও বদরুনের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কিন্তু বদরুনের সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুত্ব জাহাঙ্গীরনগর থেকে সম্ভবত। পরিচয় হওয়ার পর দেখালাম শামীম আরা, নাসির ও বদরুন এরা সবাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় থেকে বন্ধু। আমি ফারজানাকে জানালাম প্রশান্ত আমার ভীষণ প্রিয় লেখক, ওঁর কথাশিল্পে আমি এমন একটা মৌলিকত্ব পাই, যা কেন জানি না বাংলাদেশের আজকের অধিকাংশ কথাশিল্পীদের লেখা থেকে একেবারে আলাদা। আমরা কথা বলতে বলতেই লেখক রওশন হক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক আদনান সৈয়দ, কবি আহমেদ শামীম ও গল্পকার তানভীর রব্বানী এসে হাজির। পুরো ঘর ভরে গেলো। আহমেদ শামীম আড্ডায় এলেই আমাদের আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়, তক্কাতক্কির তীব্রতা বাড়ে সবার মাঝে। শামীম এসেই তাঁর ছাত্রজীবনের বন্ধু ফারজানাকে দেখে হই হই করে ঘর মাতিয়ে দিলেন।
আমাদের অনেকের মতো শামীম সারাক্ষণ বাংলাদেশের অস্থির রাজনীতি দ্বারা তাড়িত থাকেন, হাজারো আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব ও দর্শনের আলোকে রাষ্ট্রের সমস্যাকে বোঝার চেষ্টা করেন। আমাদের কয়েকজনের যে একটা অনলাইন চিন্তা-প্লাটফর্ম রয়েছে ‘ল্যাম্পপোষ্ট’ বা ‘বাতিস্তম্ভ’ নামে রব্বানীর পৌরোহিত্যে, সেখানে সাজ্জাদ, অভিজিৎ ও শামীমই সারাক্ষণ তাত্ত্বিক চিন্তার আলোকে আমাদের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনকে বিশ্লেষণ করেন।

শামীম এসেই প্রশ্ন করলেন সবার উদ্দেশ্যে, কী হবে দেশের ভবিষ্যৎ, অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনতান্ত্রিক বৈধতাকে সবাই কীভাবে দেখছেন, কী পরিবর্তন নিয়ে আসবে এই গণঅভ্যুত্থান, ইত্যাদি! আমরা যে যার মতো কথা বললাম। আদনান ও মাযহার যেহেতু আন্দোলনের শুরু থেকেই প্রতিটা ঘটনা রেজিস্টার করছেন, নিজেরা গভীরভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের লেখক, কিন্তু হাসিনা সরকারের গত এক দশকের গভর্নিং পদ্ধতি বিষয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ, তাই তারা দুজনেই তাঁদের মতো করে চলমান রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বললেন। ফারজানা যা বললেন তাতে আমি বুঝতে পারলাম অধ্যাপক হিশেবে তিনি এই প্রজন্মের তরুণদের মানসিকতা খুব ভালো বুঝতে পারেন। এছাড়া সাহিত্য-দর্শনটা ভালো জানেন বলে সমাজের ঢেউগুলো কী অভিঘাত সৃষ্টি করছে আজকের প্রজন্মের মাঝে, এবং এর সূক্ষ্ম দোলাগুলো কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে সমাজকে, তা খুব ভালো বিশ্লেষণ করলেন। সংক্ষিপ্ত তাঁর বক্তব্যে বুঝতে পারলাম যে প্রায় আড়াই দশক আগে তাঁর ছাত্রজীবনে এবং অধ্যাপনার শুরুর দিকে সমাজে ইসলামিকীকরণ প্রক্রিয়া কতো দক্ষভাবে করেছে কয়েকটি ডানপন্থী ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক রাজনৈতিক দল বা মঞ্চ, তা কাছ থেকে দেখেছেন। দেখেছেন কীভাবে শিবির, মানে ইসলামী ছাত্র শিবির বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো একের পর এক দখল করে নিয়েছে এবং সাধারণ ছাত্রদের মাঝে নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শ ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি খুব মনোযোগ দিয়ে ফারজানার কথা বোঝার চেষ্টা করছিলাম, কী করে একটি প্রজন্মের রাজনৈতিক ভয়ঙ্করতা সমাজকে এভাবে বিদ্ধ করেছে, যা আমি শুধু কাগজেই পড়েছি, কিন্তু প্রশান্ত, শামীম, শামীম আরা, ফারজানা ও তাঁদের বন্ধুরা ক্যাম্পাসে প্রতিটি মুহূর্তে এর মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছেন! আমার কাছে একেবারেই অজানা, কারণ আমি নব্বইয়ের দশক থেকে পুরো এমন ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ সময়টাতে দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে। আমি সমাজের এই বিবর্তনটাকে দেখি সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব দিয়ে, কিন্তু এঁরা দেখেছেন প্রতিদিনের জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে। তাই আমার বাংলাদেশের ইসলামাইজেশনটা বুঝতে হয় অলিভিয়ের রয়ের বিখ্যাত ‘পলিটিকেল ইসলামের’ তত্ত্ব দিয়ে, কিন্তু ফারজানা ও শামীমরা দেখেছেন চোখ, হৃদয় ও মস্তিষ্ক দিয়ে। ওঁদের অনুধাবন ও বিশ্লেষণ তাই আমার থেকে একেবারে আলাদা।
নব্বইয়ের দশকে আমি নিউ স্কুলের ক্লাসরুমে আমার দিকপাল অধ্যাপক নেন্সি ফ্রেজারের ক্লাসে পলিটিকেল ইসলাম নিয়ে তর্ক করছি, আফগানিস্থান ও পাকিস্তান বা আফ্রিকান আরও দুয়েকটি দেশের রাজনীতির আলোকে, কিন্তু ঠিক সেই সময়টাতেই আমার এই বন্ধুরা ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক যুদ্ধে প্রতিকূলতাকে ঠেকাচ্ছেন নিজেদের প্রাত্যহিক দিনানুদৈনিক রাজনীতির জীবন দিয়ে! ফারজানা এবং শামীম, মাযহার ও আদনানের তক্কাতক্কি শুনতে শুনতে আমি প্রায় আড়াই তিন দশক আগের অধ্যাপক ফ্রেজারের ক্লাসের কথা ভাবছিলাম!
এসময়ে একটু দেরি করে এলেন আড্ডার নিয়মিত সদস্য নসরত শাহ। নসরত এলেই ফারজানা একটা বোমা ফাটালেন। নসরত খুব কোমল ও হৃদয়বান বন্ধু আমাদের, কিন্তু ফারজানা বললেন, বেশ রসিকতা করে যে ‘আশি বা নব্বইয়ের দশকে আজাদ ভাই (নসরতের ডাক নাম আজাদ, বরিশালের বন্ধুরা তাঁকে এনামেই জানেন) ছিলেন ভীষণ সুদর্শন ও কোমল স্বভাবের মিষ্টভাষী যুবক, আমরা বরিশালের কলেজে যাওয়া তরুণীরা সবাই তাঁর প্রেমে মজে থাকতাম মনে মনে!’ আড্ডায় হাসির রোল পড়লো, নসরতের লাজুক হাসির অন্তরালে হারিয়ে যাওয়া ফুরিয়ে যাওয়া যৌবনের জেল্লা নিয়ে কিছুটা বেদনা লক্ষ করলাম আমি! কিন্তু ফারজানা যে বুদ্ধিদীপ্ত ও হিউমারাস তা জানলাম। বদরুন ও ফারজানা সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় তাঁরা ‘আবাদী’, রাজনীতিতে তাঁরা সেখানে কেমনভাবে বিবেচিত হতেন তা জানালেন। ফারজানা একটি মজার ঘটনা জানালেন ওঁদের শিক্ষক আজফার হোসেন সম্পর্কে। ঢাকায় কোন এক জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অনেকদিন পর একটি বিল্ডিঙয়ের লিফটের কাছে আজফারের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়, যখন তিনি জানতে পারেন ফারজানা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান, আজফার তাঁকে বলেন, ‘প্রশান্ত সিলেটে থাকেন, তোমার সঙ্গে দেখা হয় নিশ্চয়!’ ফারজানা উত্তর দেন, ‘হ্যাঁ, দেখা হয়, মাঝে মাঝে আমাদের একই মশারির নিচে ঘুমুতেও হয়!’ গল্পটা শুনে ফারজানাকে সত্যিই সূক্ষ্ম রসবোধ সম্পন্ন মানুষ মনে হয় আড্ডায় সবার!

আড্ডায় এসময় আবার কথা শুরু হলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক চরিত্র নিয়ে! কী হতে পারে, কোনদিকে যেতে পারে আমাদের রাজনীতি। আহমেদ শামীম ভীষণ তাড়িত আমারই মতো, কিছুটা সমাজকে দেখেন তাঁর তাত্ত্বিক চোখ দিয়েও, কিন্তু আমি ওঁকে খোঁচাই ‘ফরহাদ মজহারের অনুসারী’ বলে! ইসলামী রাজনীতি বা ‘বিপ্লবের’ যে সংজ্ঞায় মজহার দেশের ছাত্র আন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থানকে দেখেন, আমার নিজের ধারণা তা থেকে কিছুটা দূরে। শামীম দেখতে চান কিছুটা আজকের সমাজবিজ্ঞানের অগ্রসর তত্ত্বের আলোকে, কিন্তু তা ফরহাদের ধারণা থেকে খুব বেশি দূরে না হলেও তাঁর প্রশ্নগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এই অর্থে যে, যদি আওয়ামী শাসনকে ছাত্রজনতা উৎখাত করতে সমর্থ হয়, তাহলে ‘সমাজবদল’ তাদের দিয়ে সম্ভব নয় কেন! শাসনতন্ত্র বা দেশের চলমান সরকারের আইনি বৈধতার নিটিগ্রিটি নিয়ে শামীম ততোটা উৎকণ্ঠিত নন, তাঁর মতে নতুন শাসনতন্ত্রও প্রয়োজনে নির্মাণ করা সম্ভব। কিন্তু আমার সংশয়ী মন এত সহজে কিছুই আশা করতে চায় না। তাই আমার উত্তর কিছুটা হতাশার ছোঁয়ায় আক্রান্ত। আমি এলেক্স টকোভিলের বিখ্যাত গ্রন্থ Old Regime স্মরণ করিয়ে দেই শামীমকে। ইউরোপের মধ্যে একটা অগ্রসর সমাজ ফ্রান্স, ফরাসী বিপ্লবের সময় যদিও জনগণের মন ভীষণভাবে ক্যাথলিক বিশ্বাসে আচ্ছন্ন ছিলো, কিন্তু বিপ্লবের পর মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিলো আকাশ-ছোঁয়া পরিবর্তণের, কিন্তু আদতে সমাজে তেমন কিছুই ঘটেনি, জনচিত্ত প্রস্তুত ছিলো না বলে, তাছাড়া শাসনযন্ত্র ছিলো পুরনো শাসকের প্রয়োজনের ছকে গড়া। আমাদের সমাজ সম্পর্কে শামীম ও আড্ডাকে ভিন্ন কিছু না বলে আমি শুধু বাঙালি মুসলমানের মনের গড়ন ও আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে তার সাংঘাতপূর্ণ দিকগুলোর কথা বললাম। আমি যখন Old Regime গ্রন্থের কথা উল্লেখ করছিলাম, তখন টকোভিলের তরুণ ও সদ্য বিবাহিত বাবা মাকে যে গিলোটিনে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করলাম, তখন গিলোটিন বোঝাতে আমি আমার দুই হাতে রাম দা দিয়ে মানুষের কল্লা বিচ্ছিন্ন করার ছবি বোঝাতে চাইলাম। ঠিক তখনই আহমেদ শামীমের ভাষাবিজ্ঞানী মন আমাকে বোঝাতে চাইলেন যে আসলে আমাদের মনে যে-ছবি কাউকে হত্যা করার ভাবনার পর উদয় হয়, তা আসলে আমাদের সমাজে যেভাবে হত্যা করা হয় তা গেঁথে আছে। গিলোটিনে কাউকে রাম দা দিয়ে হত্যা করার মতো করে হত্যা করা হয় না। এখানে আমার অজান্তে আমার মনের মাঝে ‘হত্যা’ বিষয়ক স্থায়ী ছবিটাই গিলোটিনের ওপর আরোপ করেছি। আসলে শামীম ঠিক বলেছেন। যেমন বরিশালের একটি স্কুলে পড়ুয়া বালক শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তরে বিড়াল বানান করে বলে, ‘ব হ্রস্কার ড বিন্দু র আকার ল, ‘মেহুর’! অর্থাৎ ওই বালকের মনে বিড়ালের ছবিটা ‘মেহুরের’ নামে স্থায়ী হয়ে আছে, তাই বানান সে যে-ভাবেই করুক, তার নাম উচ্চারণ করে ‘মেহুর’ বলেই। আমার কাছে গিলোটিনও রাম দা হয়ে ধরা দিয়েছে যখন তা ভারবালাইজ করলাম!
যাহোক, আমি আমার বন্ধুবর্গ শামীম, রাব্বী, মাযহার ও আদনান, শৈবাল বা অন্যান্যর বাংলাদেশের ভবিষ্যতের চিত্র থেকে কিছুটা ভিন্ন চিত্র কল্পনা করি। একটা চূড়ান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাতন্ত্র, দেউলিয়া বিচারব্যবস্থা, ও আইন প্রণয়ন সংস্থার সম্পূর্ণ অনুপস্থিতিতে ‘সমাজবদল’ হবে ডঃ ইউনুস ও কয়েকজন এনজিও পরিচালকদের দ্বারা, এটা শুধু আমার বিশ্বাসের বাইরে তাই নয়, বরং একেবারে কল্পনার সীমানার বাইরে। একটা জোড়াতালি দিয়ে তাপ্পিমারা শাসনব্যবস্থার পোশাকে দেশটিকে মুড়ে দিয়ে একটা নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে এই সরকার, তারপর আওয়ামী বিরোধী একটা সরকার হবে, এটাই আমার ধারণা! কিন্তু এ সময় কথাশিল্পী রওশন হক, যিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচক, বললেন, ‘দেখেন ভাই, কিছুদিনের জন্য বিএনপি -জামাত এই সরকারের সঙ্গে তাল দেবে, এরপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে বিএনপি-জামাত একসঙ্গে রাস্তায় নামবে সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে। রাজনীতিবিদদের চরিত্র আমাদের সবার জানা আছে!’ রওশনের কথাটা ভেবে দেখার মতো বটে!

অধ্যাপক ফারজানা সিদ্দিকা, কবি অভীক সোবহান, শামীম আরা, নাসির, আহমেদ শামীম ও কয়েকজন নতুন বন্ধুর তীব্র আলোচনায় ও তক্কাতক্কিতে আমাদের এসপ্তাহের আড্ডা ছিলো ভীষণ প্রাণময়। যদিও আমার নিজের ইচ্ছা ছিলো ফারজানা, আহমেদ শামীম ও মাযহারের সঙ্গে আড্ডাটা সাহিত্য-কেন্দ্রিক হোক, আমার ভীষণ প্রিয় কথাশিল্পী প্রশান্ত মৃধার সাহিত্য বিষয়ে আলোচনাটা হোক, যা অভীক ও বদরুনের সঙ্গে আগে সামান্য হয়েছে দুয়েকটা আড্ডায় কথার ছলে। এবার একটু নিবিড় আলোচনার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি, ‘পলিটিকাল ইসলাম’, সরকার বদল ইত্যাদি আমাদের মনকে এতো বেশি বিধ্বস্ত করে রেখেছে যে সাহিত্য-বিষয়ক আড্ডা শুরু করলেই আমরা ফিরে ফিরে যেতাম আবার রাজনৈতিক তক্কাতক্কিতে!
রাত গভীর হয়েছে, সবাই বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন। ফারজানাকে বার বার বললাম দেশে ফেরার আগে আরেক শনিবারে আসতে, ওঁর সঙ্গে আমাদের সাম্প্রতিক সাহিত্য নিয়ে কিছুটা শেখার রয়েছে মনে হয়। ওঁর পিএইচডি’র অভিসন্দর্ভের বিষয়টাও আমার কাছে আগ্রহের বিষয়, সে-সম্পর্কেও জানার ইচ্ছা আছে।
সবাই চলে যাওয়ার পর কফির মাগ ও হুইস্কির গ্লাসগুলো ধুয়ে উঠিয়ে রাখতে গিয়ে দেখি রওশন হক কখন আমার চোখের আড়ালে সব ধুয়ে রেখে গিয়েছেন! মনটা আর্দ্র হয়ে উঠলো!
আমি বাতি নিবিয়ে রেকর্ডারে অনেকদিন পর আমার প্রিয় শুভলক্ষ্মীর ‘মীরার ভজন’ ছেড়ে চেয়ারে বসতেই কেন জানি আমার ছাত্রজীবনের জাহাঙ্গীরনগরের ক্যাম্পাসটার ছবি ভেসে উঠলো মনে! গভীর বিষণ্ণতায় ভরা সে-ছবি! ‘৭৩ সালের আগস্ট থেকে ‘৭৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আমি খাতা-কলমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, ফারজানা ও শামীম বা নাসির যেখানে গিয়েছেন আমার প্রায় দুই আড়াই দশক পর। ওদের মনে আঁকা ক্যাম্পাসের ছবিটা একেবারে ভিন্ন, জীবন্ত। আমি যদিও ক্যাম্পাসে খুব একটা যাইনি, থাকিনি, কিন্তু তখনকার ক্যাম্পাসটা একটু বেশি ‘গ্রামীণ’ মনে হতো আমার। তথাকথিত ‘নাগরিক’ হয়ে ওঠেনি যেন, অধ্যাপকদেরও আমার মনে হতো কিছুটা ভিন্ন, যেন ঠিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক দূরের মানুষ! কেন জানি, বহুক্ষণ মনটা ব্যথায় আচ্ছন্ন হয়ে রইলো, ঘুম এলো না সকালের আলো ফোটার আগ পর্যন্ত! শুভলক্ষ্মীর কণ্ঠে ‘মীরার ভজন’ও মনকে আর্দ্র করে দেয় সব সময়!

সংবাদটি শেয়ার করুন

September 2024
S M T W T F S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930