বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন । তিনি বলেন ,জিয়া এতিমখানার অর্থ নিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি । এই মামলায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি ।
তাই রায়ের পর তাকে কারাগারে যেতে হলে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নির্দেশনাও দিয়েছেন ।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ সব বলেন তিনি ।
খালেদা জিয়া বলেন, আদালত রায় দেওয়ার বহু আগেই শাসক মহল চিৎকার করে বলে বেড়াচ্ছে, ‘আমার জেল হবে’। যেন বিচারক নয়, শাসক মহলই রায় ঠিক করে দিচ্ছে।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ‘চাপের মুখে’ পদত্যাগের বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, আদালত চাপ উপেক্ষা করে রায় দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ন্যায়বিচার হলে আমার কিছু হবে না, আমি বেকসুর খালাস পাব। আর যদি শাসক মহলকে তুষ্ট করার জন্য অন্য কোনো রায় হয়, তাহলে তা কলঙ্কের প্রতীক হয়ে থাকবে।
মামলা বৃত্তান্ত: এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা অর্থের দুই কোটি টাকা জিয়ার নামে ট্রাস্ট গড়ে তাতে সরিয়ে নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলাটি হয় ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। মামলাকারী দুর্নীতি দমন কমিশন পরের বছর আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মামলাটিতে অভিযোগপত্র দেয়।
মামলায় খালেদার সঙ্গে আসামির তালিকায় তার বড় ছেলে তারেক রহমানও রয়েছেন। অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্যসচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে দাবি করছেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজ। অপরাধ প্রমাণিত হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের কোনো অর্থ তসরুপ হয়নি, সব অর্থ ব্যাংকে রয়েছে এবং সুদে আসলে তা এখন তিন গুণ হয়েছে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কুয়েতের তৎকালীন আমিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। তার নামকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য কুয়েতের আমির যে অনুদান প্রদান করেন, তা তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের উদ্যোগে নিয়ে আসা, সেই অর্থের বিলি-বণ্টন, তহবিল পরিচালনা অর্থাৎ জিয়া অরফানেজের সঙ্গে আমি কখনোই কোনোভাবে জড়িত ছিলাম না।
বিএনপি চেয়ারপারসন দাবি করেন, তাকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতেই এই মামলায় ‘সাজানো রায়’ দেওয়া হচ্ছে।
“আমাকে রাজনীতি ও নির্বাচনের ময়দান থেকে দূরে রাখতে আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে।”
তাকে মামলায় ফাঁসাতে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলে এই মামলা যারা দায়ের করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিৎ। যারা এই মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে, তাদের সাজা হওয়া উচিৎ।
সরকারের উদ্দেশে খালেদা বলেন, “আমি যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তত। জেল বা সাজার ভয় দেখিয়ে কাজ হবে না। আমি মাথা নত করব না।
“তাদের খালি মাঠে গোল দেওয়া এবং একদলীয় শাসন দীর্ঘায়িত করার খায়েস পূরণ হবে বলে আমি মনে করি না।”
পুরান ঢাকার বকশীবাজারের ‘ক্যাঙ্গারু আদালতে’ এই মামলার রায়ের দিন ঠিক হওয়ার পর দফায় দফায় দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সিলেটে মাজার জিয়ারত করে আসার পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন খালেদা।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা বলেন, “আমার বিরুদ্ধে এক মিথ্যা মামলায় আগামীকাল রায় হবে। এই রায়কে কেন্দ্র করে শাসক দল আমাদের চেয়ে ভীত হয়ে প্রতিবাদের অধিকার, মিছিলের অধিকার প্রশাসনিক নির্দেশে বন্ধ করেছে।
জনগণের প্রতিবাদের ভয়ে ভীত হয়ে হীন পথ খুঁজে নিয়েছে এই অবৈধ সরকার। সারাদেশে তারা বিভীষিকা ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
রায় বিপক্ষে গেলে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বিকালে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে নিয়ে আসেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, আবদুল মইন খান, নজরুল ইসলাম খান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে ৩৬ মিনিটের বক্তব্যে নিজের রাজনৈতিক সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া।
সংবাদটি শেয়ার করুন