পরিবেশ দিবসে বাপা সিলেটের নাগরিক বন্ধন
‘সিলেট নগরের বুকচিড়ে বয়ে চলা সুরমা নদীকে দখল, দূষণের মাধ্যমে গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে। ময়লা আর্বজনা ফেলার কারণে সুরমায় ফলি জমে নদীর তলদেশ আজ ভরাট হয়ে গেছে। যার কারণে একটু ভারী বৃষ্টি হলে পানি ধরে রাখতে পারছে না এক সময়ের প্রমত্ত্বা সুরমা। তাই নদী উপচে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে নগরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বাসাবাড়িও। এই দৃশ্য নগরের নাগরিক হিসেবে আমাদের পীড়া দেয়। নিজেদের অস্তিত্বকে ঠিকিয়ে রাখতে হলে সুরমা নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রোববার (৫জুন) বিকেল সাড়ে ৩টায় সিলেট নগরের চাঁদনিঘাট এলাকায় সুরমা নদীর তীরে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট ও সুরমা রিভার ওয়াটাকিপার আয়োজিত নাগরিক বন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখা সহসভাপতি, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্ল্যাহ শহিদুল ইসলাম শাহিনের সভাপতিত্বে ও বাপা সিলেট শাখার যুগ্ম সম্পাদক, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি, বাপা সিলেটের সদস্য আব্দুল হাই আল হাদী।
সুরমা নদী খননের দাবিতে আয়োজিত নাগরিক বন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পাটি সিলেট জেলার সভাপত কমরেড সিকন্দর আলী, রোটারি ক্লাব সিলেট হোয়াইট স্টোনের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ, সিলেট সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নাজনীন আক্তার কনা, যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থা ইউকে বাংলাদেশ এডুকেশন ট্রাস্ট (আকবেট) এর নির্বাহী পরিচালক আসাদুজ্জামান সায়েম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে বাপা সিলেট শাখার সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্ল্যাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, সিলেটের মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচাতে হলে নগরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে। সিলেট নগরের পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য রি-সাইক্লিং না হওয়ায় নগরের ব্যবসায়ীসহ সাধারণ লোকজন সুরমা নদীতে ময়লা আর্বজনা ফেলছেন। আবার যেসব বর্জ্য সিটি করপোরেশন সংগ্রহ করে লালমাটিয়ায় নিয়ে ফেলছে সেই বর্জ্য বন্যার পানিতে ভেসে আবার নগরে প্রবেশ করছে। আবার নদীতেও পড়ছে। যার কারণে ময়লা-আবর্জনায় নগর ও নদী একাকার হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা নাগরিকরা যদি সচেতন না হই এবং সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ উদ্যোগি না হয়। তবে সুরমা নদীকে দখল আর দূষণের হাত থেকে বাঁচানো যাবেনা। সুরমাকে বাঁচানো না গেছে নাগরিক জীবনে আমরা ভোগান্তি থেকে বাঁচতে পারবোনা। শাহিন আরও বলেন, প্রকৃতির সাথে অবিচার করলে প্রকৃতিও আমাদের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিশোধ নেবে।
নাগরিক বন্ধনে বাপা সিলেট শাখার যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ সূচনা বক্তব্যে বলেন, অতিসম্প্রতি সিলেট নগরের মানুষ আকস্মিক বন্যার ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছেন। সুরমা নদী কেন্দ্রিক সিলেট নগরের বেশির এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। প্রতিদিন টন টন ময়লা আর্বজনা সুরমায় ফেলার কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বন্যার পানি নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। অথচ এই সুরমা নদীই এতোদিন বৃষ্টি ও ঢলের পানি নিজের বুকে জায়গা করে নিতো। কিন্তু আজ সুরমা নদী তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় ভয়াবহ পরিস্তিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সুরমা নদী পরিকল্পিতভাবে খননের দাবি সিলেটবাসীর দীর্ঘ দিনে। সরকার প্রধান সুরমা খনন ও নদী দখলদারদের চিহিৃত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নদী খননের উদ্যোগ নিচ্ছেনা। যার কারণে আমরা প্রায়ই বন্যা আর জলাবদ্ধতায় শিকার হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।
নাগরিক বন্ধনে বাসদ (মাকর্সবাদী) সিলেটের আহবায়ক উজ্জ্বল রায়, পরিবেশ সংগঠক ও লেখক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী, বাঁচার হাওর আন্দোলনের আহবায়ক সাজিদুর রহমান সোহেল, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক সুলতান সুমন, কার্যনির্বাহী পরিষদের এক নম্বর সদস্য ইউসুফ আলী, কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য মিঠু দাস জয়, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম, ইমজার সদস্য লিটন চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তালেব হোসেন, সিলেট শাখার সাইক্লিনিং কমিউনিটি সিলেটের সদস্য, নারী উদ্যোক্তা শাকেরা সুলতানা জান্নাত, নারী উদ্যোক্তা শাহানা চৌধুরী, নারী মৈত্রী সিলেটের সদস্য লাকি আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদটি শেয়ার করুন