নিজ ভাষা, কৃষ্টি, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে মর্যাদা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান খবর বাসসের।
‘নিজেদের সংস্কৃতি, নিজেদের ভাষা, নিজেদের শিল্প-সাহিত্যকে যদি আমরা মর্যাদা দিতে না পারি, তার উৎকর্ষ সাধন করতে না পারি, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের দরবারে আরও উন্নত হতে পারব না’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
‘মনে রাখতে হবে অশুভ পথে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা কখনো ভাষা বা সংস্কৃতির চর্চা করতে জানে না। কারণ, এদের মানসিকতা একটু ভিন্ন’, যোগ করেন সরকারপ্রধান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশকে স্বাধীনচেতা মানুষের দেশ হিসেবে গড়তে চান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ হবে অসাম্প্রদায়িক, যে বাংলাদেশ হবে শান্তিপূর্ণ, যে বাংলাদেশে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তাদের ধর্ম-কর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে, এমনকি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরাও তাদের ভাষার চর্চা করতে পারবে। তা ছাড়া আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি, যেখানে হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষা নিয়ে গবেষণা হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.ইব্রাহিম হোসেন খান এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন।
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে-যুক্তরাজ্যের কবি ও লেখক এগনিস মিডোস, ক্যামেরুনের কবি ও সৃষ্টিশীল লেখক অধ্যাপক ড. জয়েস অ্যাসউনটেনটং, মিসরের লেখক ও প্রখ্যাত টেলিভিশন সাংবাদিক ইব্রাহিম এলমাসরি এবং সুইডেনের কবি ও সাহিত্য সমালোচক অরনে জনসন বক্তৃতা করেন । বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী ১২ জন কবি, সাহিত্যিক ও প্রবন্ধকারের হাতে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সম্মাননা স্মারক ও চেক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ‘আলোকচিত্রে বাংলা একাডেমির ইতিহাস’ ও ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক দুটি বই উপহার দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের উচ্চপদস্থ ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যাপক, কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, রাজনীতিক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, প্রকাশকসহ দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে একুশের গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সূচনা সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশিত হয়। পরে অমর একুশের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সংবাদটি শেয়ার করুন