ঢাকা ১৪ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি


পদ্মার আবেগ, পদ্মায় আবেগ !!

Red Times
প্রকাশিত জুলাই ৮, ২০২২, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ণ
পদ্মার আবেগ, পদ্মায় আবেগ !!

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে মাত্রই পদ্মা সেতু পার হয়ে টুঙ্গিপাড়া ঘুরে এলেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফর আনুষ্ঠানিক হলেও, আমার কাছে মনে হয়েছে এতে আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে আবেগটাই বেশি, কারণ প্রধানমন্ত্রীর এ সময়টায় টুঙ্গিপাড়ায় কোনো রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ছিল না। আর পত্রিকা মারফত জেনেছি ফেরার পথে তাঁর হেলিকপ্টারে চড়ার কথা থাকলেও তিনি সড়কপথেই পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে গণভবনে ফিরেছেন।

প্রধানমন্ত্রী সপরিবারে পদ্মা সেতু পার হয়ে যে ভীষণ আনন্দিত তা সেতুটিতে পাঁচ মিনিটের যাত্রাবিরতিতে পরিবারটির হাস্যোজ্জ¦ল সেলফিতেই প্রতিভাত। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সেই ছবি ভাইরাল হয়েছে মুহূর্তেই, আর ছাপা হয়েছে দেশের প্রতিটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় কলামের পর কলাম জুড়ে। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকে পদ্মা সেতুতে পেয়ে দারুণ খুশি দক্ষিণ বঙ্গের তো বটেই, পুরো বঙ্গেরই আমজনতা। আমিও সেই ছবি আমার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেছি। লাইক পড়েছে হাজার খানেক, কমেন্টও অনেক। ইউএনবি এ নিয়ে তাদের প্রতিবেদনটিতে আমার নাম আর স্ট্যাটাসটি কোটও করেছে। আমিও বেজায় খুশি!

 

 

দুই

গতকাল মোড়ক উন্মোচন হলো আমার নবম বইয়ের। ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে দোকানপাটের ভিড়ে বেজায় বেমানান কবিতা ক্যাফে। কিন্তু ভেতরে একবার ঢুকতে পারলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। কেমন যেন বই পড়ি, চা-সিঙাড়া খাই, আড্ডা মারি টাইপ পরিবেশ। কবিতা ক্যাফেকেই বেছে নিয়েছিলাম আমার এবারের বইটির মোড়ক উন্মোচনের ভেন্যু হিসেবে।

গেল বছরে জাতীয় দৈনিক আর অনলাইন পোর্টালগুলোয় আমার প্রকাশিত কলামগুলো থেকে ৩৩টি কলাম বেছে নিয়ে মলাটবন্দি করেছেন মাওলা ব্রাদার্সের প্রিয় প্রকাশক মাহমুদ ভাই। আমার নয়টির মধ্যে শেষ ছয়টি বই-ই তার প্রকাশনীর দরজা দিয়ে বেরিয়েছে। অন্য কোথাও যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, যাবই বা কেন, আর যেতে দিচ্ছেনই বা কোথায় মাহমুদ ভাই! যথারীতি বইয়ের প্রচ্ছদটি তার পছন্দে আর নামটিও বরাবরের মতোই বইটিতে প্রকাশিত আমার কোােন একটি প্রবন্ধের নাম থেকে তারই ধার করে দেয়া।

এবারের বইটির নাম ‘পদ্মা সেতু: বিপুল সম্ভাবনার অর্থনীতি ও অন্যান্য’। গত বছর পদ্মা সেতুটা যেহেতু আসি আসি করছিল, সাথে ছিল নানান আলোচনা, চলমান চক্রান্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই সংগত কারণেই এই বইটিতে আমার লেখাগুলোর অনেকগুলোই ছিল পদ্মাময়। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে কোথায় বই নিয়ে আলোচনা হবে, আলোচকরা দু-চারটি ভালো কথা বলবেন বইয়ের লেখক অর্থাৎ আমাকে নিয়ে, কোথায় কি! সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনা শুধুই পদ্মাময়। আমার তাতে দুঃখবোধ অবশ্য সামান্যই। পদ্মা নিয়ে যত আলোচনা আর যত আবেগ, তাতে আমার নতুনতম বইটিকে ঘিরে কবিতা ক্যাফের এই আড্ডাটাইপ আলোচনাময় বিকেলটা উপস্থিত জনা পঞ্চাশেক অতিথির মতোই আমিও উপভোগ করি প্রাণভরে।

 

তিন

দক্ষিণের সঙ্গে স্বপ্নের সেতুবন্ধটি উদ্বোধনের বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে দলবল নিয়ে হাজির হয়েছিলাম পদ্মা সেতুতে। খুব আশা করেছিলাম, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার দাওয়াতটা বোধহয় পাব। কপালে শিকে ছেঁড়েনি, দাওয়াতটাও পাইনি। অবশ্য না পাওয়াটাও উপভোগ করেছি দারুণভাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি ডিপার্টমেন্টের ক্লাসরুমে বড় স্ক্রিনে লাইভ দেখলাম পদ্মা সেতুর উদ্বোধনীর আচার-আয়োজন, ছাত্র-শিক্ষকরা এক হয়ে। তারপর সব শিক্ষক একসঙ্গে কাটলাম একটা কেক। সেই কেকে পদ্মা সেতুর ছবি। তাতে লেখা ‘পদ্মার বুকে বাঙ্গালীর স্বপ্ন’। তারপর ডিপার্টমেন্টে ভর্তি সব রোগীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিলাম সেই কেক আর স্ন্যাকস। অসুস্থ মানুষগুলোর চোখে-মুখে সে কী আনন্দ! রোগ ছাপিয়ে আনন্দের ফল্গুধারা পুরো হেপাটোলজি ওয়ার্ডে বইছে। পদ্মার আবেগে ডুবেছে রোগের কষ্ট!

 

চার

পদ্মায় কে প্রথম টোল দিয়ে মোটরসাইকেলে পাড়ি দিল, আর পদ্মা সেতু জয়ী প্রথম নারী বাইকার কে থেকে শুরু করে প্রথম কে ওই সেতুতে বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করল কিংবা আয়োজন করল প্রথম গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান, অথবা আদায় করল জামাতে প্রথম নামাজ, এমনি হাজারো প্রতিযোগিতা আমরা দেখেছি সেতুটি উদ্বোধনের পর থেকেই ফেসবুকে আর মূলধারার মিডিয়ায়। আমার ধারণা পৃথিবীতে কোথায় এক দিনে এত ইলিশ খাওয়া হয়নি যা খাওয়া হয়েছে ২৫ জুন রাতে, পদ্মা সেতুর আবছা আলোয় মাওয়া ঘাটের আলোকিত রেস্তোরাঁগুলোয় বসে। নিঃসন্দেহে এটি গিনেজ বুকে নাম লেখানোর মতোই একটি সংখ্যা হবে বলে আমার বিশ্বাস।

আমাদের পদ্মায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে কেটে গেছে বাহাত্তরটা ঘণ্টা। এর মধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে পদ্মায় একের পর এক ‘পদ্মা রেকর্ড’। শখের হাঁড়ি রেস্তোরাঁয় বসে ইলিশ খাচ্ছি আর ভাবছি, আমরা কীভাবে ‘পদ্মা রেকর্ডে’ ভাগটা বসাতে পারি? প্রায় ৩০ জন রেসিডেন্ট আর চার-পাচজন শিক্ষক পদ্মা জয়ে নামলাম, অথচ কোনো রেকর্ড না নিয়েই ঘরে ফিরে যাব, তা কী করে হয়!

ইউরেকা! হঠাৎই আবিষ্কার করলাম রেকর্ড তো আমরাও একটা করেছি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে দল বেঁধে আমাদের আগে আর কেউ তো পদ্মার বুকে গাড়ি চালিয়ে মাওয়া টু মাওয়া ভায়া জাজিরা ঘুরে আসতে পারেননি!

 

পাঁচ

পদ্মার আবেগ আর পদ্মায় আবেগ মিলেমিশে এখন একাকার। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৬ ডিসেম্বরের পর এটি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় ঘটনা। বাঙালি আবেগী জাতি। আর অমন একটা আবেগী জাতিকে এমন একটা আবেগঘন উপহার দেয়ার জন্য একজন শেখ হাসিনাকে কীভাবে ধন্যবাদ জানালে তা যথেষ্ট হবে, তা আমার জানা নেই। কদিন আগে একটা টকশোতে সুভাষ সিংহ রায় দাদার সাথে ছিলাম। দাদা বলছিলেন, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় পদ্মা সেতু নিয়ে মোট কনটেন্টের সংখ্যা ২৫ জুনের আগেই আড়াই কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এখন যে কী অবস্থা, তা কে জানে! তবে আমি খুবই সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রীকে কোনোদিনও যথেষ্ট ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ বা যোগ্যতা কোনোটাই যে আমার হবে না, সে আমি ভালোই বুঝি। আমার সন্তুষ্টি এই যে ওই আড়ার কোটির সাথে এই আরো একটি অন্তত আমি যোগ করতে পারলাম।

 

লেখক: ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বিএসএমএমইউ। সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

October 2024
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031