৭ই মার্চ ২০২১ ইং | ২২শে ফাল্গুন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৪৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২১
মীরা মেহেরুন
পদ্মা সেতু আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। স্বপ্নটি বাস্তবায়নের পথে ছিল নানা প্রতিবন্ধকতা। ৯ জুলাই ২০১২ তারিখে বিশ্বব্যাংক যখন পদ্ম সেতুর জন্য তার প্রতিশ্রুত ১৯২ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি বাতিল করলো তখন এই সেতু নির্মাণের স্বপ্ন যেনো খানিকটা স্তব্ধতার ঘেরাটোপে আবদ্ধ হলো। যেহেতু স্বপ্নটি ছিলো সর্বজনীন তাই অভিঘাতটি এসে পড়লো সমগ্র দেশবাসীর ওপর।
গণপ্রজাতন্ত্রী বংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবদমিত হওয়ার পাত্র নন। স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত যখন চূড়ান্ত তখন তিনি জাতির স্বপ্নকে সম্মানসূচক বাস্তবায়নের জন্য ভাবলেন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা। বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত এহেন আঘাতকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে অদম্য মনোবল নিয়ে ২টি ব্যাংক একাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নিলেন যাতে অভ্যন্তরীণ ও প্রবাসী বাঙালী অর্থ সাহায্য করতে পারেন।
এরূপ একটি জটিল ও ব্যয়বহুল প্রকল্প প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া অথবা সম্পন্ন করা আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে সকল মহলে বহুবিধ বিতর্কের সূচনা ঘটে।
এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর পদযাত্রায় সামিল হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বরকত সর্বপ্রথম দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করেন যে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব।
গত ১০ ডিসেম্বর ২০২০ পদ্মাসেতুর ৪১তম (সর্বশেষ) স্প্যানটি বসানোর পর গোটা দেশবাসী উল্লাসে ফেটে পড়েছে। বিশেষত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চালের সঙ্গে রাজধানীসহ অন্যান্য জেলাগুলোর সঙ্গে যে সংযোগ তৈরি হবে তাতে উক্ত অঞ্চলের চিকিৎসা, বাণিজ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আন্তঃযোগাযোগের মাধ্যমে বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থায় উন্নীত হবে।
১৯ জুলাই ২০১২ তারিখে বাংলদেশ অর্থনীতি সমিতি কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে ড. আবুল বারকাত ‘‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু: জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সুযোগ’’ প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন। এতে তিনি একটি সহজিয়া উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে দেখিয়েছেন পদ্মা সেতু নির্মাণের আনুমানিক ব্যয় হতে পারে ২৪ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং তা নিজস্ব অর্থায়নেই নির্মাণ করা সম্ভব। প্রবন্ধটিতে তিনি বিভিন্ন মাত্রায় বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন ১৪টি সম্ভাব্য উৎস থেকে অর্থ সংস্থান হতে পারে ৯৮ হাজার ৮ শত ২৫ কোটি টাকা।তাঁর সুপারিশমালায় উল্লেখিত উৎসগুলো হচ্ছে: ১. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ২. প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ (অফিসিয়াল চ্যানেলে আসা এবং হুন্ডি), ৩. পেনশান ফান্ড, ৪. দেশজ ব্যাংক ব্যবস্থা, ৫. দেশজ বীমা কোম্পানি, ৬. প্রবাসে বাংলাদেশিদের সঞ্চয়, ৭. দেশের মধ্যে অপ্রদর্শিত আয়, ৮. বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) অব্যয়িত অর্থ এবং স্বল্প গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প স্থগিত করে তার বরাদ্দ অর্থ, ৯. স্বাস্থ্যহানিকর তামাক জাত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক, ১০. ব্যক্তি পর্যায়ে বছরে ১ কোটি বা তদ্দুর্ধ আয়করদাতাদের সংখ্যা বৃদ্ধি, ১১. লেভি/সারচার্জ, ১২. আইপিও, ১৩. কৃচ্ছতা সাধন, এবং ১৪. অনুদান। উক্ত প্রবন্ধে তিনি চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে আরো দেখিয়েছেন সুদবিহীন উৎসের উৎস থেকেসম্ভাব্য আহরণ হতে পারে ৪৯ হাজার ১শত পঞ্চাশ কোটি টাকা। অর্থাৎ যা ২টি পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয়ের সমপরিমাণ অর্থ।
বিশ্ব ব্যাংকের হঠকারিতার কারণে আমাদের যে মানহানি এবং অর্থনৈতিক সফলতা থেকে বঞ্চনা তা থেকে বেরিয়ে আসা বেশ কঠিন ব্যাপার। তাদের গড়িমসি ও উন্নাসিকতার কারণে ১৮ মাস পিছিয়ে পড়ার খেসারত (টোল বাবদ) হিসেবে ৫৮৪ কোটি টাকা যে ক্ষতি তিনি দেখিয়েছেন, তা ক্ষতি পূরণ হিসেবে বিশ্ব ব্যাংকের কাছে দাবী ন্যায়সংগত।
পদ্ম সেতু বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ে তোলার আকাঙ্খা ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গণমানুষের এক ও অদ্বিতীয় স্বপ্ন। গণতন্ত্রের মানস কন্যা শেখ হাসিনা সসম্মানে সে স্বপ্নকে ধারণ ও লালন করে শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়েছেন। সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর পর গণমানুষের স্বপ্ন আরো উজ্জীবিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মানুষের গভীর আস্থার জায়গাটি তৈরি হওয়ায় এখন সুফলের প্রতীক্ষায় বাংলাদেশ।
লেখকঃ সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি
Corporate Office:
6/A Eskatan Garden
Dhaka, Bangladesh.
Mobile: 017111-66826
Email: mansoumit@yahoo.com
Helpline - +88 01719305766