ঢাকা ১৩ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি


প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতু করতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের তুলনায় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন : তথ্যমন্ত্রী

sumon
প্রকাশিত জুন ২৮, ২০২২, ০২:১৫ অপরাহ্ণ
প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতু করতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের তুলনায় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন : তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করতে গিয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন।
তিনি আজ সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘১৯১০ সালে পদ্মা নদীর উপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল যেটি শেষ হয়েছিল ১৯১৫ সালে। পৃথিবীতে কোন কিছুর মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় স্বর্ণের মূল্যের ভিত্তিতে আর তখন ডলারও ছিলনা।  হার্ডিঞ্জ ব্রিজের জন্য খরচ হয়েছিল ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার রুপি আর স্বর্ণের মূল্য ছিল তখন প্রতি ১০ গ্রাম ১৮.৯৮ রুপি।  আজকে যার মূল্যমান ৬৮ হাজার টাকা। এই হিসেবে যদি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হিসেবে ধরা হয় তাহলে এতে খরচ হতো ১৭ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। আর এর দৈর্ঘ্য হল ১.৮ কিলোমিটার আর পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য হল ৬.১৫ কিলোমিটার। অর্থাৎ সাড়ে তিন গুণ বেশি লম্বা। যদি আজকে পদ্মাসেতুর সমান  হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ করা হতো তাহলে খরচ হতো ৯৮ হাজার কোটি টাকা স্বর্ণের মূল্যবান হিসেবে।’
তিনি বলেন, ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হচ্ছে একটি রেল সেতু আর পদ্মা সেতু হলো একটি বহুমুখী সেতু যেখানে রয়েছে রেললাইন, চার লেনের রাস্তা। আর এই দোতালা সেতুতে যে শুধু  ট্রেন এবং গাড়ি চলবে তা নয় বরং সেতুতে আরো রয়েছে গ্যাস লাইন এবং ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল। সেই হিসেবে পদ্মা সেতুর সমান হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বানাতে খরচ হতো এক লাখ হাজার কোটি টাকা।’ তিনি তার বক্তব্যকে যুক্তি দিয়ে খন্ডানোর জন্য বিরোধীদলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করতে গিয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এর তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দুদিন আগে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। এটি এদেশের মানুষের আবেগ ভালোবাসা এবং সক্ষমতার প্রতীক। জাতির সক্ষমতার প্রতীক। পদ্মা সেতু হচ্ছে শেখ হাসিনার বিশ্ব বেনিয়াদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রজেক্ট বাস্তবায়নের প্রতীক।
তিনি বলেন, ‘এই পদ্মাসেতু কখনো হতো না যদি আমাদের একজন প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা না থাকতো। কারণ যখনই এ প্রকল্প নেয়া হয় তখন আমরা বিশ্বব্যাংকের দুয়ারে গিয়েছিলাম বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপস্থাপন করে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু পরে কানাডার আদালতে এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ২০১১ সালে যখন পদ্মা সেতু প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা হয় তখন প্রায় পৌনে তিন কোটি বিলিয়ন ডলার খরচ হবে ধরা হয়েছিল তার মধ্যে ১.২ বিলিয়ন ডলার আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছে চেয়েছিলাম আর অন্যান্য দাতা সংস্থার কাছে বাকিটা। এবং আজকে যখন এটি বাস্তবায়িত হলো তখন ৩.২৫ বিলিয়ন ডলারে শেষ হয়েছে আজকের ডলারের মূল্যমান অনুযায়ী। তখনকার ডলারের মূল্য মান অনুযায়ী এটি পৌনে তিন বিলিয়ন ডলার ছিল আর আজকের মান অনুযায়ী এটি ৩.২৫ বিলিয়ন ডলারে কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিস্কো অকল্যান্ড ব্রিজের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৭.১৮ কিলোমিটার। ১৯৯৯ সালে শুরু হয় ২০১৩ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৯৯৯ সালে খরচ ধরা হয়েছিল ১ বিলিয়ন ডলার অথচ ২০১৩ সালে ১৪ বছর পর খরচ হয়েছিল ৬.৫ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ছয় গুণ বেশি খরচ হয়েছিল। আর ২০২২ সালে শেষ হলে খরচ হতো ১২ বিলিয়ন ডলার। কত টাকায় পদ্মা সেতুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাশ্রয় করেছেন সেটা সহজেই অনুমেয়।
আজকে সমগ্র পৃথিবী পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় প্রশংসা করছেন ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান থেকে সিঙ্গাপুর ব্রুনাই থেকে উত্তর আমেরিকা সব জায়গায় আজকে প্রশংসা। পৃথিবীর সমস্ত পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রশংসা করছে। সমগ্র পৃথিবী আজকে অভিনন্দন জানিয়েছে কিন্তু বিএনপি অভিনন্দন জানায়নি, বলেন তিনি।
গতকাল সংসদে বিএনপি দলীয় সদস্য হারুনুর রশীদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল হারুন সাহেবের বক্তব্য শুনছিলাম, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কিন্তু অভিনন্দন জানাননি। আসলে এ পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় তাদের গায়ে জ্বালা ধরে গেছে। কারণ গতকাল যখন পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হলো পদ্মাসেতুর নাট বল্টু খুলে যে ছেলেটি টিকটক বানিয়েছিল সে আগে ছাত্রদল করতো। পত্রিকায় আজকে এ বিষয়ে খবর বেরিয়েছে এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের মুখে কোন কথা নেই।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরের তুলনায় এবারের বাজেট ৮.৭ গুণ বড় এবং বাজেট বাস্তবায়নের হার গত কয়েক বছর ধরে ৯৫-৯৭ শতাংশ। কিছু সংগঠন যেমন টিআইবি, পলিসি ডায়ালগ এবং বিএনপি, এরা প্রত্যেক বছরই বলবে যে এই বাজেট বাস্তবায়ন যোগ্য নয় এবং এই বাজেট গরিবের কল্যাণে আসবে না।  গত ১০ বছর ধরে একই ধরনের বক্তব্য তারা দিয়েছেন এবং বক্তব্যের মধ্যে কোন ভিন্নতা নেই। অথচ প্রত্যেক বছর বাজেট ৯৫-৯৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের দারিদ্রতা ইতিমধ্যেই ৪২ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে যেখানে অতি দারিদ্রের হার ১০ শতাংশের নিচে চলে এসেছে। মাথাপিছু আয় ৬০০ থেকে ২৮২৪  ডলারে উন্নীত হয়েছে। এভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজকে পৃথিবীর ৩১তম অর্থনৈতিক দেশ। কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক এটাই বাস্তবতা।
সংসদে বিএনপি দলীয় এক সদস্যের মানবাধিকার বিষয়ে দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে ড. হাছান মাহমুদ দৃঢ়তার সাথে বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো। আমাদের দেশে কোন কারাগার নেই, যেখানে বন্দীদের অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। আমাদের দেশে মা-বাবা থেকে শিশুদের আলাদা করে দিনের পর দিন বছরের পর বছর কোথাও রাখা হয়না। যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যায়। যখন শিশুরা বড় হয়, তখন তারা তাদের বাবা-মাকে আর চিনতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের জর্জ ফ্লয়েডের মত কিলিং কখনো হয়নি। কাস্টডিতে হত্যা নিয়ে তারা কথা বলে। আমি এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে ৭ হাজারের বেশি মানুষকে পুলিশের গুলিতে নিহত হতে হয়েছে। আর বৈষম্যের কথা বলতে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের কাস্টডিতে কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু হচ্ছে প্রতি মিলিয়নে ৪০ জন। আর স্প্যানিশদের ক্ষেত্রে ২৮ জন যেটা শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে মাত্র ৭ জন। এখানেই তো বুঝা যায় সেখানে বর্ণবৈষম্য কতটা ভয়াবহ। ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত ২৫০টি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আর ইউরোপের ব্রাসেলসের রাস্তায় গুলি করে বোমাবাজদের হত্যা করা হয়। আর আমাদের দেশে যখন এ ধরনের এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে তখন নানাবিধ কথা উঠে আসে। সুতরাং আমাদের দেশের অবস্থা আমাদের দেশের মানবাধিকার অবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ভালো।’
তিনি বলেন, মূল্যাস্ফীতি নিয়ে ইদানিং অনেক কথা হচ্ছে এবং বিশেষ করে সংসদে বিরোধীদলের পক্ষ থেকে। ২০২২ সালে ভারতের মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে ৭.৭৯ শতাংশ। নেপালে হচ্ছে ৭.৮৭ শতাংশ। পাকিস্তানের হচ্ছে ১৩.৮ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮.৬ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে ৯.১ শতাংশ।  জার্মানিতে ৭.৯ শতাংশ, রাশিয়ায় ১৭.১ শতাংশ। তুরস্কে ৭৩.৫ শতাংশ।  নেদারল্যান্ডসে ৯.৬ শতাংশ। আর মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে সেটি হচ্ছে ৫.৯৯ শতাংশ। এইসব দেশের চেয়ে আমাদের দেশে মূল্যাস্ফীতি কম। আর নিত্যপণের দাম সমস্ত পৃথিবীতেই বাড়ছে করোনা এবং  ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে।
সম্প্রচার মন্ত্রী আশপাশের কয়েকটি দেশের সাথে বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্যের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ মোটা চালের দাম হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা যেখানে ভারতে হচ্ছে  থেকে ৪৯ থেকে ৬৫ রুপি, পাকিস্তানে ৭৭ থেকে ১২৫ রুপি, নেপালে ১০৫ থেকে ১২৫ রুপি, শ্রীলংকায় ২১৬ রুপি৷-বাসস।

সংবাদটি শেয়ার করুন

October 2024
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031