সরদার আমিন
ষাটের দশকের গোড়ার দিক।
অামার মা বরাবর খুব ধার্মিক। তখন চাঁদপুর থেকে হাইমচর যাওয়া অাসা ছিল নৌকায়, সুদিনে হেঁটে । রিকসা ৬৩ সালের অাগে দেখিনি, যায়নি। ৬৪ সালে প্রথম এলাকায় রেডিও অানে মামা সালাম ডাক্তার।
পহেলা বৈশাখ অাসলে মা বলে দিতেন, এদিন ভাল থাকতে হবে, ভাল খেতে হবে, ভাল ব্যবহার করতে হবে। সারাদিন ‘অাল্লাহু অাল্লাহু’ করতে হবে। তাইলে সারা বছর ভাল কাটবে ঠিক এদিন যা করেছি। এদিন নামায বাদ দেয়া যাবে না, মসজিদে যেতে হবে। অামরা শিশুরাও তা করতাম।
অাধুনিক দুনিয়া, হিন্দু মুসলিম দ্বন্দ্ব, সংস্কৃতি এসব কোন বিরোধ, পলিটিক্স ছিল না। এদিন ঠিক করতেন ফসলের দিনক্ষণ। মা কোন হিসেব নিকেশ না রাখলেও বাংলা মাসের হিসেব রাখতেন – কি বারের মাস, সোমবার হলে সোমে সোমে অাষ্ট, তিন সোমে পনের – এভাবে। এখনো রাখেন। মা লেখাপড়া জানেন না। ফসলের পরিবার বলে বাংলার সব জানা থাকতো। বাংলা মাস এ অঞ্চলের অাবহাওয়া ও ফসলের সাথে তৈরী, পার্বনগুলোও। মজপুর তখন মেলা বসতো যেন বাঙালীর মিলন মেলা। প্রাচীনত্বে হিন্দুরা বেশি খাটি বলে তাদের ভুমিকা বেশি ছিল। ফলের সময় গুনে পার্বন পালন করতে, জামাই দাওয়াত করতেন পর্বিয়া খাওয়াতে। অারবির বা ইংরেজীর কিছু এখানে চলতো না রোজা রাখা ঈদ করা ছাড়া। ওসব পার্বন /উৎসব এ অঞ্চলের না।
তাইলে কে বলে বাঙালি সংস্কৃতি হিন্দুর? এ সংস্কৃতি এ অঞ্চলের মানুষ যে ধর্মের হোক তার। তাকে ফসলের জীবনের জন্য এ সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হতে হয়।
সংবাদটি শেয়ার করুন