৩রা ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৭, ২০১৫
এসবিএন ডেস্ক:
জনমত জরিপের পূর্বাভাস যা দেয়া হয়েছিল ঠিক তা-ই ঘটতে যাচ্ছে। ফ্রান্সের আঞ্চলিক নির্বাচনে মুসলিমবিদ্বেষী উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল ফ্রন্ট-এর জয় জয়কার হতে চলেছে। রোববার অনুষ্ঠিত ফ্রান্সের ১৩টি আঞ্চলিক নির্বাচনে মারিন লো পুনের নেতৃত্বাধীন উগ্র ডানপন্থী দলটি শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (স্থানীয় সময় রাত ১১, বাংলাদেশ সময় রাত চারটা) ৬টিতে এগিয়ে আছে। আর ভরাডুবি হতে চলেচে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দের দল সোসালিস্ট পার্টির। কারণ এই দলটি এ পর্যন্ত মাত্র এগিয়ে আছে ২টিতে।
অন্যদিকে, সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি’র দল লে রিপাবলিক (যার সাথে আরো দুটি দক্ষিণপন্থীয় দল) এগিয়ে আছে মাত্র ৪ অঞ্চলে। আর একটি এগিয়ে আসে কট্টর বাম একটি দল। ফ্রান্সকে ১৩টি বিভাগীয় অঞ্চলে ভাগ করে এ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে মোট প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পরেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম খবর দিয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ফ্রান্সকে ২৩টি অঞ্চলে বিভক্ত করে এই নির্বাচন করা হতো। কিন্তু ফাঁসোয়া ওলান্দেঁর সরকার এই অঞ্চলের পরিধি কমিয়ে এনে ১৩টিতে নিয়ে আসে। তবে ২৩ অঞ্চলে বিভক্ত থাকায় অবস্থায় ফ্রাঁসোয়া ওলান্দেঁর দল ২২টি জয়ী হয়েছিল। আর একটি জয় পায় সারকোজির লে রিপাবলিক। এ সময় লোপেনের ন্যাশনালিষ্ট ফ্রন্টের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। অর্থাৎ কখনো নির্বচানে জয়ী হতে পারেনি। এমনকি দলে নেত্রী লোপেন বর্তমান পার্লামেন্টের সদস্যও নির্বাচিত হতে পারেনি। তিনি বিপুল এই নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিল।
দলীয় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট ভোটের ৩০ শতাংশ পেয়েছে উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল ফ্রন্ট। লে রিপাবলিক পেয়েছে ২৭ শতাংশ, সোসালিষ্ট ২৩ শতাংশ। পরিবেশবাদী দল হিসেবে বিবেচিত ইকোলজিষ্ট পেয়েছে সাড়ে ৬ শতাশ এবং কট্টর বাম দল হিসেবে পরিচিত এসটিএল পেয়েছে ৪ শতাংশ ভোট।
ফ্রান্সের এই আঞ্চলিক নির্বাচনে ফলাফলে মোটেও বিস্মিত হননি এখানকার বিশ্লেষকরা। তারা আগেই বলেছিলেন, প্যারিসে গত মাসে সন্ত্রাসী হামলার পর উগ্র ডানপন্থী দলটি ন্যাশনাল ফ্রন্ট বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। এর কারণ হিসেবে তারা দলটির মুসলিমবিদ্বেষী এবং অভিবাসন ঠেকাও মনোভাবকে চিহ্নিত করেছেন। প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পর পরই ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেত্রী সরাসরি এই হামলাম জন্য মুসলমানদের দায়ী করেছেন। তিনি আর বলেছিলেন, কোনো অবস্থায়ই সিরিয়ার শরনার্থীদের পশ্চিম দুনিয়ায় আশ্রয় দেয়া ঠিক হবে না।
ফ্রান্সের এই নির্বাচনে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, প্যারিসে ৩০ বছর ধরে বসবাসরত মোহাম্মদ হামিদুল আলমের কাছে। ফ্রান্সে বাস করেন এমন বাংলাদেশীর মধ্যে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ফরাসি সরকারি প্রশাসনে উচ্চপর্যায়ে রাষ্ট্রীয় অ্যাটাশে এডমিনেষ্ট্রেশন পদে চাকরি করছেন।
তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, অনেকটা সস্তা কথা বার্তা ওপর ভিত্তি করে লো পেনের ন্যাশনালিষ্ট পার্টি আঞ্চলিক নির্বাচনে ভালো করেছে। নির্বাচনে আগে তারা বলেছে, ফ্রান্সের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। তারা ক্ষমতা যেতে পারলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি ঘটাবেন। শুধু তাই নয়, অভিবাসন নীতি বিরোধী মনোভাবও তাদের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন, লো পেনের বাবা জ্যঁ মারি লোপেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য। ৮০ বছর বয়সী এই নেতা হরহামেশায় বলে চলেছেন তার দল ক্ষমতায় এলে ফ্রান্সকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে আনা হবে। যেসব অভিবাসী ফ্রান্সের নাগরিত্ব পেয়েছেন তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হবে। এই সবই কিন্তু সস্তা জনপ্রিয়তারই অংশ। যা এখন কাজে লাগাচ্ছে তার মেয়ে লো পেন। তবে তারে এই সস্তা কথা ২০১৭ সালে প্রসিডেন্ট নির্বাচনে কতখানি প্রভাব রাখবে তা এখন বলা সম্ভব নয়।
ন্যাশনাল ফ্রন্টের এই ভালো ফলাফল আগামী ২০১৭ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
এদিকে, বিবিসি জানায়, নির্বাচনের আগে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভালস সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ভোটাররা যেন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নেত্রী মারিন লু পেনের ‘কৌশলের ফাঁদে’ পা না দেন।
এখন এই দলে মাথা-কামানো (স্কিন হেড) লোক দেখা যায় না তবে অশ্বেতাঙ্গ লোকও দেখা যায় না। এরা ইহুদিবিদ্বেষী কথাবার্তা বলার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি থাকেন । তবে ইসলামবিরোধী কথাবার্তা এ দলের নেতানেত্রীদের মুখে হামেশাই শোনা যায়। দলটি মনে করে, ব্যাপক অভিবাসনের কারণেই ফ্রান্সে উগ্রপন্থী ইসলামের উত্থান ঘটেছে।
ফিলিপ ল্যানসেড নামের একজন ব্যবসায়ী বিবিসিকে বলছিলেন, আগে তিনি ন্যাশনাল ফ্রন্টে যোগ দেবার কথা ভাবতেই পারতেন না, কিন্তু ১৩ই নভেম্বরের আক্রমণের পর দিনই তিনি এই দলে যোগ দিয়েছেন।
ফ্রান্সের মার্সেই নগরীতে (যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা আড়াই লাখ) সেখানকার একটি মসজিদের ইমাম আবদেররহমান গুল বলছেন, ন্যাশনাল ফ্রন্ট সবক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
“শিক্ষা, চাকরি সব ক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন মুসলিমরা – যা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।” এর পরিণতিতে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে, বলেন তিনি।
এখানেই একটি নির্বাচনী সভায় মারিন লো পেন ফরাসি আত্মপরিচয়ের উল্লেখ করে বলেছেন, “আমরা জানি আমরা কী এবং কী নই। আমরা কোনো ইসলামিক জাতি নই।”
মার্সেই শহরে ফ্রন্ট ন্যাশনালের উত্থানের পর শহর যেন দু’ভাগ হয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বিবিসির গ্যাব্রিয়েল গেটহাউসকে বলছিলেন, আমরা তাদের এলাকায় যেতে ভয় পাই, তারা এখন আমাদের এলাকায় আসতে ভয় পায়। এই ‘তারা’ ‘আমরা’ কারা?
তিনি বুঝিয়ে দেন, ‘তারা’ মানে ‘ফরাসি’ আর ‘আমরা’ মানে ‘মুসলিম’।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com