ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহত ।
রংপুর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান জানান, শুক্রবার বিকালে সদর উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া গ্রামে কয়েক হাজার মানুষ হিন্দু বাড়িতে হামলা চালাতে গেলে তাদের সঙ্গে পুলিশের এই সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষের সময় পুলিশের ছররা গুলি ও রাবার বুলেটে আহত ১১ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে হাবিবুর রহমান (৩০) নামে একজন সন্ধ্যায় মারা যান বলে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান।
নিহত হাবিব শলেয়াশাহ এলাকার একরামুল হকের ছেলে। আহতদের মধ্যে ছয়জনের ছররা গুলি এবং অন্যদের হাত ও পায়ে রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়েছে বলে ডা. শফিকুল জানান।
গঙ্গাচড়া থানার ওসি জিন্নাত আলী বলেন, ঠাকুরপাড়ার এক যুবক গত সপ্তাহে তার ফেইসবুক পেইজ ধর্ম অবমাননামূলক ছবি পোস্ট করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেলা ৩টা থেকে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে খলেয়া ইউনিয়নের শলেয়াশাহ ও বালাবাড়ি গ্রাম এবং পাশের মমিনপুর গ্রামের ৮ থেকে ১০ হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। বাধা দিলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ও লাঠি ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ছররা গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের মধ্যেই হামলাকারীদের একদল গিয়ে ঠাকুরপাড়া গ্রামে কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বলে ওসি জানান।
আগুনে টিটু রায়ের তিনটি, সুধীর রায়ের ছয়টি, অমূল্য রায়, বিধান রায় ও কৌশল্য রায়ের দুটি করে ৬টি, কুলীন রায়, ক্ষিরোদ রায় ও দীনেশ রায়ের একটি করে তিনটি ঘর ভস্মীভূত হয়।
হামলাকারীদের ছোড়া ইট ও লাঠির আঘাতে সাতজন পুলিশ সদস্য আহত হন বলে সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুর জানান। আহত পুলিশ সদস্যদের জেলা পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত টিটু রায়ের মা জীতেন বালা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, শত শত মানুষ আসি তিনটা ঘরোত আগুন নাগে দেলে। চৌকের পলোকে ঘরগুল্যা পুড়ি ছাই হয়া গেলো। ঘরের কিছুই রক্ষা করব্যার পারি নাই।
সুধীর রায় বলেন, “চার থেকে পাঁচজন মানুষ আসি পেট্রোল ঢালি মোর একটা ঘরোত আগুন নাগে দেয়। ওই আগুনোত মোর ছয়টা ঘরের সউগ পুড়ি যায়।”
ওসি জিন্নাত আলী জানান, এই এলাকার লালচাঁদপুর গ্রামের মুদি দোকানী আলমগীর হোসেন ওই হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ২৯ অক্টোবর থানায় মামলা করেন।
এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত মঙ্গলবার ওই যুবককে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ হয়।
সেদিন বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া পাগলাপীর জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মাস্টার বলেন, ওই দিন দুপুরে পাগলাপীর এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশে কয়েকশ মানুষ ছিলেন। বিক্ষোভের পর তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।পরে পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এরপরেও সে গ্রেপ্তার না হওয়ায় দুপুরে আবার বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।ওসি জিন্নাত বলেন, পরিকল্পিতভাবে হিন্দু বাড়িতে এ হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: [email protected]
Web Design by: SuperSoftIT.com