ঢাকা ১৩ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি


ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই বহন করতে হবে

redtimes.com,bd
প্রকাশিত জানুয়ারি ১, ২০১৮, ০২:৪২ পূর্বাহ্ণ
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই বহন করতে হবে

সৌমিত্র দেব

মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা চেয়েছে তার পরিবার। সংবাদটি পড়ে আমি বিস্মিত হলাম । স্বাধীনতার এতো বছর পরেও যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই রাষ্ট্র পেয়েছি তাদের একজন হাসপাতালে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন, আর তার জন্য সহযোগিতা চাইতে হচ্ছে তার পরিবারকেই ! রাস্ট্রযন্ত্র যারা চালান, তারা কি জানেন না ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী এ দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন । তার প্রতি কি আমাদের কোন দায়িত্ব নেই ? আমি সামান্য একজন কলম সৈনিক । আমার অবস্থান থেকেই জোর গলায় দাবি জানাচ্ছি,ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই বহন করতে হবে ।

ডায়াবেটিকস, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা নিয়ে ৭০ বছর বয়সী একাত্তরের এই সৈনিক এখন রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রোববার সকালে তার মেয়ে ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী মায়ের সুচিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার প্রার্থনা জানিয়ে বলেন, “আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে দেশের বাইরে কোথাও নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এখন রাষ্ট্রের সহযোগিতা তার জন্য প্রয়োজন। যদি রাষ্ট্র মনে করে তার পাশে থাকবে…।”

শুক্রবার তাকে প্রথমে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগে নেওয়া হয়। পরে তার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমতে থাকায় তাকে হেপাটোলজি বিভাগে আনা হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েক দফায় রক্ত দেওয়া হয়েছে।

ফুলেশ্বরী জানান, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সারা শরীরে পানি চলে এসেছে, ফুসফুসেও পানি জমেছে। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় নেবুলাইজার দিতে হচ্ছে দফায় দফায়।

এর আগে চলতি বছর নভেম্বর মাসে নিজের বাসায় বাথরুমে পড়ে গোড়ালিতে চোট পান ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। গোড়ালির একটি হাড় স্থানচ্যুত হওয়ায় ১৩ ডিসেম্বর সেখানে অস্ত্রোপচারের পর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে হয় এই মুক্তিযোদ্ধাকে।

পরে গত বুধবার ফের ‘গুরুতর’ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফের ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর কাছে আমি তার পুত্রসম । মা বলেই ডাকি তাকে । তার জ্যেষ্ঠ কন্যা রাজেশ্বরী প্রিয়রঞ্জিনী ছিল আমার বন্ধু । ছবি আঁকত । আমার দুটি কাব্যগ্রন্থ ‘ভালবাসার কবিতা’ ও ‘নীল কৃষ্ণচূড়া’ র প্রচ্ছদ এঁকেছিল সে । তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলাম ভারতে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় অসম রাজ্যের শিলচর শহরে । এ জন্য সে আমার প্রতি খুব কৃতজ্ঞ ছিল । তবে পরবর্তীকালে ভারতে দিল্লী ও পাঞ্জাবে তার আরো প্রদর্শনী হয়েছিল । ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে এই প্রতিভা অকালে চলে গেল আমাদের ছেড়ে ।রাজেশ্বরীর মাধ্যমেই আমি খুব কাছে চলে গেছিলাম ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর । পেয়েছি তার স্নেহ সান্নিধ্য । দেখেছি কত বড় মনের অধিকারী এই শিল্পী ।

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনায় । ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হন।

মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা-বিরোধীদের বিচারের দাবিতে তিনি সবসময়ই ছিলেন সোচ্চার। একাত্তরে নির্যাতিতা নারীদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ খেতাব প্রদানের দাবিও জানিয়েছিলেন তিনি।

স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। এর আগে ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক পান।

২০১৪ সালে একুশের বইমেলায় তার আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘নিন্দিত নন্দন’ প্রকাশিত হয়। আমি তার একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম । সেটি প্রকাশিত হয়েছিল চারবেলা চারদিকে । আমি তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি ।

সৌমিত্র দেব ; বাংলাদেশ অনলাইন মিডিয়া এসোসিয়েশন বিওএমএ-র সাধারন সম্পাদক

সংবাদটি শেয়ার করুন

October 2024
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031