সদরুল আইনঃ
সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া, বিতর্কিত, অজনপ্রিয় প্রার্থীদের বাদ দেয়া- এটাই হলো মনোনয়নের ফর্মুলা।
এই বার্তাটি বরিশাল এবং খুলনায় পেল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ এ দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে।
গাজীপুরের মতো কোনো অঘটন ঘটেনি বরিশালে। আর এর ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ স্বস্তি পেতেই পারে।
যদিও এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু তারপরও নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশের কমতি ছিল না।
নির্বাচনের সময় ছোটখাটো যে সমস্ত উত্তেজনাগুলো সৃষ্টি হয়, সেই উত্তেজনাও দৃশ্যমান ছিল। তবে বড় ধরনের কোনো গোলযোগ ঘটেনি। নির্বাচন পক্ষপাত দোষে দুষ্ট নয়।
নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করেছে। প্রশাসন ছিল নিরপেক্ষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কারো পক্ষ অবলম্বন করেনি। ফলে বিএনপিকে ছাড়াই যে অবাধ, সুষ্ঠু এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করা যায়- বরিশাল এবং খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেটি আবার প্রমাণিত হলো।
এই জয়ের ফলে আওয়ামী লীগ তার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছক সহজেই কষতে পারবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এ দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই ধরনের মনোনয়ন দিয়েছিল।
বরিশালে সাদিক আব্দুল্লাহকে বাদ দিয়ে খোকন সেরিনিয়াবাত বা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। যদিও সম্পর্কে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ সাদিক আব্দুল্লাহর চাচা। কিন্তু এই মনোনয়নে সাদিক আব্দুল্লাহ মেনে নেননি। তিনি ভোটের দিন ভোটটি পর্যন্ত দিতে যাননি।
কিন্তু এই নির্বাচনে তিনি যতই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধাচারণ করুন না কেন- নির্বাচনের ফলাফলের পর এই নির্বাচন সাদিক আব্দুল্লাহর রাজনীতিকে সঙ্কটাপন্ন করে দিয়েছে।
শুধু সাদিক আব্দুল্লাহ নয়, এই নির্বাচনে খোকন সেরনিয়াবাতের বিজয় বরিশালের আওয়ামী লীগের এক সময়কার কিং মেকার আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহকেও কোণঠাসা করে ফেলেছে।
বরিশালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০১৮ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাদিক আব্দুল্লাহ। তিনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর, নানা রকম বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে অনেকে অভিযোগ করেন।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মধ্যেই তাকে নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল। বরিশালের সাধারণ জনগণ সাদিক আব্দুল্লাহর কাছে জিম্মি হয়েছিলেন- এমন অভিযোগও করা হয়। এরকম পরিস্থিতিতে সাদিক আব্দুল্লাহকে আর মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
এটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও শেখ হাসিনার একটি বার্তা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যে সমস্ত সংসদ সদস্যরা এলাকায় সাদিক আব্দুল্লাহর মতো আচরণ করেছেন, এলাকায় তান্ডব করেছেন, বিতর্কিত কর্মকান্ড করেছেন, জনগণের উপর কর্তৃত্ব করেছেন, তারা যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না, সেটি এবারে বরিশালে শেখ হাসিনা জানান দিয়েছেন।
অন্যদিকে তালুকদার আব্দুল খালেক নির্লোভ, দুর্নীতি থেকে মুক্ত এবং সৎ একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরীক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত। এ ধরনের প্রার্থীরা যে আবার মনোনয়ন পাবেন এবং তাদের উপর যে শেখ হাসিনা আস্থা রাখবেন- এ বার্তাটি তিনি খুলনায় দিয়েছেন।
আর এ দুটি মনোনয়ন থেকে জয়লাভের পরে আওয়ামী লীগের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে- এটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই এবং এর ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সমস্ত আসনে আওয়ামী লীগের এমপিরা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়াচ্ছেন- তারা যে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না- এটা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে।
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আরেকটি অর্জন হলো বিএনপিকে ছাড়াও যে উৎসবমুখর নির্বাচন করা যায়- সেই ব্যাপারে আওয়ামী লীগ একটি মিনি পরীক্ষা করে ফেললো। যার ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকবে এবং বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা করা, বিএনপি নির্বাচন করবে না- এমন ভয়ে তটস্থ থাকা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে পারবে।
সংবাদটি শেয়ার করুন