৯ই মার্চ ২০২১ ইং | ২৪শে ফাল্গুন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৩০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০১৮
সাবিনা শারমিন
ও চোর,ও মাদক ব্যবসায়ী,ও ধর্ষক,ও নাস্তিক,ও পরকীয়া করে,ও বেপর্দা,ও নেশাখোর তাই সবাই মিলেমিশে এদেরকে নির্মমভাবে মারতে হবে, এই নিয়ে রাস্তায় বহুবার আমি হুজুগে মানুষ পেটাতে দেখেছি। মানসিক সমস্যার লোকগুলোকে পাগল বলে ঢিল ছুঁড়ে রক্তাক্ত করতে দেখেছি বহু,বহুবার। যে যতো জোরে মারবে সে ততো বড় বীর।
অনেক বছর আগের কথা। আমাদের কর্মস্থলে বিল্ডিং বেয়ে তিন তলা ছাঁদের উপরে কৃষ্ণচূড়া গাছ বেয়ে উঠেছিলো। সেই কৃষ্ণচূড়া গাছ বেয়ে এক মাদকাসক্ত কিশোর ছেলে ছাঁদে বেঁয়ে উঠেছিলো। সেই ছেলেকে গোটা কয়েজকজন যুবক কোনরকম বিবেচনা না করেই চোর বলে হুমড়ি খেয়ে গায়ের উপর উঠে এমন ভাবে মারছিলো যা চেয়ে চেয়ে দেখাও ভীষণ ভয়ংকর ছিলো।
চিৎকার শুনে আমি এগিয়ে গিয়ে দেখি বিশ বাইশ বছরের এক যুবক অন্যের কথা শুনে শুনেই প্রথমে উপরে দিকে লাফ দিয়ে দিয়ে রেসলিং এর মতো এক রকম জাম্প করে ছেলেটির গায়ে আছড়ে পরে মারছে। আর সেটি দেখে সবাই দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ স্টাইলে ‘হেইয়ো’ বলে মোটিভেশন দিচ্ছে আর মজা নিচ্ছে ।এ দৃশ্য দেখে মুহূর্তেই আমি অনেক জোড়ে চিৎকার করে রিএক্ট করি। হঠাত আমার হুংকার শুনে সবাই যেন চারদিকে ছিটকে গেলো। সবাই বীরের মতো করে বল্লো আপা চোর। আমি লোকটির কাছে হাঁটু গেড়ে বসলে সে আমাকে বলল ‘আপা ক্ষুধা লাগসে তাই ছাঁদের তার চুরি করেছি, ভাত খামু ।” এরপর ওই যুবকরাই আবার তাকে নিয়ে গিয়ে কেন্টিন থেকে ভাত খেতে দিলো । — কথাটি হচ্ছে বিবেক বিবেচনা জাগিয়ে তোলা যারা সেখেনি , সেটি না হয় আমরাই করে দেখাই তাইনা ? এভাবেও একটি দু’টি জীবন রক্ষা করা সম্ভব । এর জন্য কোন প্রশিক্ষণ লাগেনা । লাগে কাউকে জাগিয়ে তোলা
।
আমাদের দেশের অনেক মানুষ কাজে রাখা ছোট বাচ্চা শিশুদের খাবার চুরি করে খাওয়াকে চুরির অপরাধ দিয়ে খুন্তি ছ্যাকা দেয়। অথচ ‘খাবার ‘প্রতিটি মানুষের প্রধাণ চাহিদা। খাবার চোরকে একটি সভ্য দেশ চুরির অপবাদ দিতে পারেনা। শিশুরা বড়দের দেখে শেখে। আমাদের শিশুরাও বড়দের পেটাতে দেখে হুজুগে অগোচরে পেটানো শিখে ফেলে আনন্দ উপভোগ করার জন্য একটু মেরে এসে বীর হয়। অথচ এই বাচ্চারাই আবার পিতজা খেতে গিয়ে ভিক্টর সাইন দেখিয়ে ফেইসবুকে ছবি লোড করে।এরকম বাব-মায়ের বাচ্চারাই বড়দের মানসিকতা দেখে দেখে অন্যের গায়ে হাত তোলা শেখে। অন্যেকে দোষের অনুভুতিতে ভোগাতে চেষ্টা করে । অথচ বাবা মা বোঝেনা যে নিজেদের শিশুদের নিজেরাই এক একটি ভয়ংকর দানব বানিয়ে ফেলছেন। যে দানবেরা সুযোগ পেলেই অন্যের উপর দোষের অভিযোগ এনে ঝাঁপিয়ে পরে। এখনকার মায়েরা ‘জীবে দয়া করে যে জন সে জন সেবিছে ঈশ্বর ‘ না শিখিয়ে এখন শেখায় ও নাস্তিক, ও হিন্দু ,ও হিজড়া, চোর। পরিবারগুলো আপনজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াতে এখন পারিবারিক শিক্ষাগুলো, অন্যকে কন্সিডার করার রেওয়াজ উঠে গিয়ে পোশাকী ধর্মে সকলে ঝুঁকে পড়ছে। ভয় হচ্ছে সামনের সময় গুলোতে এই অবস্থা কোন দিকে যাবে ! তাই এখনি সময় ।
অন্যের কথায় বা প্ররোচনায় মানুষের উপর অন্যায় আচরণ না করে নিজের বিবেচনা বোধের প্রয়োগ শেখানো খুবই জরুরী। আর এ কাজটি পরিবারই সবচেয়ে আগে করতে পারে।
Corporate Office:
6/A Eskatan Garden
Dhaka, Bangladesh.
Mobile: 017111-66826
Email: mansoumit@yahoo.com
Helpline - +88 01719305766