ঢাকা ৯ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি


বাংলাদেশে ১/১১ এর মতো আরেকটি ৫/৮ এসেছে

redtimes.com,bd
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ০৯:০৭ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশে ১/১১ এর মতো আরেকটি ৫/৮ এসেছে

ফজলুল বারী 

বিএনপি ডক্টর ইউনুসকে সোজা সরল মানুষ মনে করে নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ চেয়েছিল। তারা মনে করে ডক্টর ইউনুস মাঝে মাঝে তাদের সাথে কথা বলবেন, পরামর্শ নেবেন। ডক্টর ইউনুসতো তাদের চেয়ে কম জানেন না বোঝেননা। তাই তাদের কাছে ঘন ঘন বৈঠক করা কথা শোনার প্রয়োজন মনে করেননা। তিনি নিজে কথা বলেন বেশি। শোনেন কম। তিনি শোনাউল্লাহ না। বকাউল্লাহ।

অতঃপর নির্বাচনের রোড ম্যাপ চেয়ে চেয়ে বিএনপি’র কান্না থামাতে সংস্কারের রূপরেখা প্রনয়নের জন্যে ডক্টর ইউনুস ছয়টি কমিটি করে দিয়েছেন। বিএনপির বুদ্ধিজীবীরা এই কমিটি প্রধানদের প্রথম আলোর বুদ্ধিজীবী মনে করেন। এরা এখন থেকে তারা ধীরে সুস্থে বসবেন চা খাবেন সংস্কার নিয়ে চিন্তা করবেন। এভাবে চিন্তা করতে করতে সময় কাটাবেন। এরপর কয়েকমাস পর খসড়া রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসবেন। আবার বসবেন। এভাবে বসতে বসতে সময় পার হবে। এই সময়ে বিএনপির চাঁদাবাজি, নতুন সরকারি দল গঠন নিয়ে প্রকট হবে দ্বন্দ্ব। বাংলাদেশে ১/১১ এর মতো আরেকটি ৫/৮ এসেছে। বিরাজনীতিকরনের ষড়যন্ত্র বুঝতে দেরি করে আওয়ামী লীগ পস্তাচ্ছে। এখন পস্তাবে বিএনপি।

জুলাই আন্দোলনের নেপথ্যের কারসাজি আওয়ামী লীগ সরকার বুঝতে দেরি করায় দেশের সর্বনাশ হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড ঘটিয়ে দেশজুড়ে একটি আবেগঘন বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অগ্রযাত্রার ধারবাহিকতা ক্ষতিগ্রস্ত ও অবসান ঘটানো হয়েছে একটি স্থিতিশীল উন্নয়নের রাজনৈতিক ধারা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ ও দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এরপর থেকে মনের মাধুরি মিশিয়ে নানান কাহিনী বলা হলেও দেশের আর নতুন দিশা মেলেনি। বাংলাদেশে নিশ্চয় একদিন সব ঘটনার সুষ্ঠু বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত হবে। প্রকাশিত হবে সব সত্য। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বাংলাদেশে আবার নিষিদ্ধ হয়ে গেছেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ আন্দোলনের সূতিকাগার ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বার সড়কের ঐতিহাসিক বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

ডক্টর ইউনুস যিনি ক্ষুদ্রঋনের সুদের ব্যবসা ভালো জানেন বোঝেন, কবিতা পড়ার স্টাইলে ভাষন দেন, হঠাৎ সুযোগে তিনি এখন দেশের দন্ডমুন্ডের কর্তা! ক্ষমতায় বসে নিজের সব মামলা বাতিল করতে দক্ষতা দেখালেও দেশ পরিচালনা যে ভিন্ন দক্ষতার বিষয়, তা এরমাঝে প্রকাশিত। নতুন দিশা দেবেন বলে ডক্টর ইউনুস এই বচন সেই বচন দিয়েছিলেন! মুরিদরা এরমাঝে তার বিরুদ্ধে বলা শুরু করেছেন। তার অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে হতাশার। কিছু জানতে চাইলে তারা বলা শুরু করে দেন সংস্কারের কল্পগল্প! কিন্তু এসব গল্পস্বল্পও এখন প্রশ্নের মুখে। আদতে আওয়ামী লীগের বিনাশ ছাড়া এই সরকারের কোন পরিকল্পনা কর্মসূচি নেই। ইউনুস সহ উপদেষ্টারা ঘুমের মধ্যেও যেন চিৎকার করে ওঠেন আওয়ামী লীগ আইলো! আন্দোলনে গড়া সরকার এখন আন্দোলন দেখলেই ভয় পায়! ষড়যন্ত্র দেখে!

ইউনুস সরকার দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারেননি। একমাস ধরে দেশে এক অরাজক অবস্থা চলছে। সেনাবাহিনী দেখছে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি! তাদের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ আসা শুরু হয়েছে। ছাত্ররা ভয় দেখিয়ে অটোপাশ আদায় করেছে! এমনকি ডিসি নিয়োগ নিয়েও কর্মকর্তা অসন্তোষ হয়েছে সচিবালয়ে! এখানেও ষড়যন্ত্র খুঁজতে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মানুষের বাসাবাড়ি, শিল্পকারখানা, মন্দিরে হামলা ভাংচুরের শুরু হয়েছে মাজার ধংস! দেশের প্রাচীন অনেক প্রাচীন মাজার এরমাঝে ভেঙ্গে ফেলেছে মাজার বিরোধী জামায়াত শিবির। এরা এখন সরকারের অংশ। এসব সামাল দিতে ব্যর্থ সরকার সারা সময় খোঁজে ষড়যন্ত্র! যার যা স্বভাব! আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললে, প্রশ্ন করলে ক্ষেপে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা! তাহলে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি কে দেখবেন? কে বলবেন? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে কী সেখানে কবিতা পড়তে বসানো হয়েছে? তাহলে একটি কবিতা বলেন শুনি!

দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন অবস্থায় দেশের মানুষ দিশেহারা। বলা হচ্ছে ফেসবুকে একদাম, বাজারে একদাম। ফেসবুকের মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশের মানুষের গৃহস্থালির বাজার করার ব্যবস্থা নেই। দেশের মানুষকে সস্তায় ইলিশ খাওয়ানোর কথা বলে ভারতে রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তে অনেকে খুশি হয়েছিলেন। তবু ইলিশের দাম কমলোনা! মৎস উপদেষ্টা এনজিও কর্মকর্তা ফরিদা আখতারের স্বামী ফরহাদ মজহারের এক কবিতার বই’র নাম ‘তুমি আমাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছো বিপ্লবের সামনে। ফরিদাদের ইউনুস সরকারের এখন কবিতার নাম, তুমি আমাদের ব্যর্থতার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছো ইলিশ! তুমি পচা। তুমি কচু খাও।

পয়ষট্টি টাকার নীচে কোন মোটা চাল নেই বাজারে। ডিম, কাঁচা মরিচ ভারত থেকে এনেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছেনা। ভারতের সাথে সম্পর্কও টালমাটাল অবস্থায়। এক শিশু উপদেষ্টা ভারতের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে বলেছেন! অন্য বিদেশিদের সাথেও চোখে চোখ রেখে কথা বলার অবস্থা নেই! কারন তারা ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। এসবের ভিডিও ক্লিপিংসও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে আসে! পিতার এক ভিডিও ক্লিপিংস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরানো হয়েছে! এখন চলে এসেছে বোনের ভিডিও ক্লিপিংস! অস্বীকার করা হয়েছে যে বোনকে!

দেশের টেলিভিশনগুলো দেখতে অরূচি আসবেই। এদের ডিগবাজি শিল্পের কোন সীমা পরিসীমা নেই। কয়েকদিন আগে শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা তেলবাজিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও লজ্জা পেতেন। এখন তাদের নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে শেখ হাসিনা স্বৈরাচার! শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের বিন্দুমাত্র পজিটিভ কিছু আর নেই! পদ্মা সেতু মেট্রোরেল এসব কাল্পনিক বিষয় মিডিয়ার সৃষ্টি!

দেশে যে এত টিভি, মিডিয়া, এত সাংবাদিক কলাকুশলী এদের চাকরি সব দিয়েছেন খালেদা জিয়া তারেক জিয়া! তারাই নতুন মা। নতুন বাপ! নওমুসলিম মিডিয়া আগষ্ট মাসেই অতিদ্রুত তাদের পর্দা থেকে শোকের মাসের লগো নামিয়ে লুকিয়ে ফেলে! পনের আগষ্ট, একুশ আগষ্টে তারা কোনদিন কোন রিপোর্ট আলোচনা অনুষ্ঠান করেনি। এসব গুজব।

পরিবর্তনের একমাসেও দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। আইনশৃংখলা বলতে কিছু নেই। সবকিছুতে অরাজক অবস্থা চলছে। পুলিশ কাজ করছেনা। এরজন্যেও মুখস্ত দায় শেখ হাসিনার! পুলিশ দলীয় হয়ে ভেঙ্গে পড়েছে! আন্দোলনের সময় পাঁচশ’র বেশি থানা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বেশিরভাগ থানার এখন কোন টহল গাড়ি পর্যন্ত নেই। পুলিশের বেশিরভাগ গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

চেচল্লিশ জন পুলিশ হত্যার কথা স্বীকার হলেও পুলিশের হতাহতের সংখ্যা অনেক। যমুনা টিভির চব্বিশ ঘন্টা’ টকশোয় এক আলোচক বললেন, পুলিশ মারা হয়েছে আসলে হাজারের বেশি। পুলিশ সদস্যদের জবাই করা হয়েছে! ওই আলোচক বললেন, পুলিশ জবাই’র ভিডিও ক্লিপ তার কাছে আছে।

পুলিশ নিয়ে আজকের পরি্স্থিতির গোড়া সেখানেই। আন্দোলনের নেতৃত্ব-কর্তৃ্ত্ব নিতে জামায়াত শিবির হিজবুত তাহরির জঙ্গিদের প্রথম টার্গেট ছিল পুলিশ। পরিকল্পনা ছিল পুলিশের ওপর আক্রমন চালিয়ে ব্যতিব্যস্ত করে দিতে হবে যাতে তারা বেপরোয়া হয়ে গুলি চালায়। গুলিতে যাতে বেশি করে মানুষ মারা যায়। আন্দোলন জমাতে লাশ সংগ্রহ কর্মসূচি নেয়া হয় সবার আগে। কর্মসূচির সুচারু বাস্তবায়ন করা হয়।

এই আন্দোলন জামায়াতের ঘাঁটি রাজশাহী এলাকায় সেভাবে ছিলোনা। কারন সংগঠনটির রাজশাহী এলাকার ক্যাডারদের ঢাকার আশেপাশে এনে রাখা হয়। এরাই টেলিভিশন ভবন, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস এর টোলপ্লাজা সহ গুরুত্বপূর্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। নরসিংদী কারাগারে হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুটপাট চালিয়ে জঙ্গি সহ সব বন্দিদের ছিনিয়ে নেয়। তাদের পালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। আওয়ামী লীগ সরকার এসব বুঝতে বুঝতে পরি স্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রনের বাইরে। আক্রান্ত পুলিশ হতভম্ব হয়। বাঁচতে তারাও বেপরোয়া গুলি চালিয়েছে।

রংপুরের আবু সাঈদ, ঢাকার মুগ্ধ’র হত্যাকান্ডে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। ছাত্রশিবিরের স্থানীয় নেতা আবু সাঈদ ঘটনার আগের দিন পুলিশ পিটিয়েছে। এমন ভিডিও ক্লিপ বেরিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পুলিশ তাদেরকে নিয়ে জঙ্গিদের পরিকল্পনা জানতোনা বলে পা দিয়েছে তাদের ফাঁদে। আবু সাঈদকে গুলি যে করেছে পরে সেই পুলিশেরও জামায়াত সংশ্লিষ্টতা বেরিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুগ্ধকে কে গুলি করেছে তা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রত্যক্ষদর্শীদের তাৎক্ষনিক নানান বক্তব্য আসছিল। চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক মৃত্যু নিয়ে অনেক ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে অনেক তথ্য এলেও বাংলাদেশের ডিগবাজি বিশারদ নওমুসলিম মিডিয়ায় এসব নিয়ে কোন অনুসন্ধানী রিপোর্ট হয়নি। আন্দোলনে গাড়িতে করে পথশিশুদের আনা হয়। জড়ানো হয় এলাকাগুলোর কিশোরগ্যাং, শ্রমজীবী মানুষজনকেও। তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যককে হত্যা বা আহত করা হয়েছে। বাংলাদেশের জুলাই আগষ্ট মাসের ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত দরকার। একদিন তা হবেই। জামায়াত শিবির জঙ্গিরা যত মানুষ হত্যা করেছে, করিয়েছে এসবের দায়িত্ব শেখ হাসিনাকে দিতে চীফ প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের উকিলকে!

সেনাবাহিনীর উদ্যোগে প্রথম রাজনৈতিক বৈঠকে বিএনপির আগে ডাক পেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এটা নিয়ে বিএনপির সাথে জামায়াতের এবং ইউনুস সরকারের সন্দেহ ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রদের রাজনৈতিক উদ্যোগেও বিএনপি বিরক্ত। রাজনৈতিক দলগঠনের প্রথম উদ্যোগ হিসাবে গঠন করা হয়েছে নাগরিক কমিটি। জেনারেল জিয়া যেমন বিএনপির আগে উনিশ দফা বাস্তবায়ন পরিষদ, জাগোদল গঠন করেন। জাতীয় পার্টির আগে এরশাদ গঠন করেন আঠারো দফা বাস্তবায়ন পরিষদ ও জনদল। মোটকথা ছাত্রদের এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাতে আগামী নির্বাচনে তাদের রাজনৈতিক উদ্যোগকে ক্ষমতায় আনা হয়। বিএনপি নয়।

আবার ইউনুস সরকার, বিএনপি জামায়াত সবার আবদার আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যাতে অংশ নিতে না পারে! বিরোধীদলের ভূমিকা আওয়ামী লীগ কিভাবে ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়ায় সাফল্য পায় এটা বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক পন্ডিত জানেন বলেই তাদের যত ভয়। দেশের কোটি কোটি তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ আমলে নানাভাবে উপকৃত। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসমূহ মাসে এখন কুড়ি হাজার টাকা করে ভাতা পান। শাসন সময়কালের পাপ তাপ ধারন করে তাদের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের নতুন পুনরুত্থান ঘটবে।

সূত্র ঃ প্রিয় প্রজন্ম 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

October 2024
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031