দোয়েল) বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পুকুর খনন উৎসবে মেতে উঠেছে স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতা। দিনে কিংবা রাতে থেমে নেই তার পুকুর খননের কাজ।
সমতল ৫০ বিঘা কৃষি জমিতে প্রায়৭টি পুকুর খনন করা হচ্ছে। এর মধ্যে শেষ হয়েছে ৫টি। তার এই কাজ দেখভাল করেন উঠতি বয়সের কিছু সংখ্যক যুবক।
স্থানীয়রা জানান, বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহানুর রহমান সোহাগ,এই পুকুর খননের মূল হোতা। দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুকুর খনন উৎসবে মতে উঠেছেন এই নেতা। যাদের জমির পাশে পুকুর খনন করা হচ্ছে,তারাও নিরুপায় হয়ে তাদের কৃষি জমি গুলো এই নেতার কাছে লিজ দিতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও জমির অনেক মালিক বিনা অর্থায়নে পুকুর খননের লালসায় মাটি কাটতে দিচ্ছে। এর ফলে মাটি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে ওই নেতা। স্পষ্ট ভাষায় বলতে হয় জমি আপনার, মাটি নিবো আমি। এতে করে সমতল কৃষি জমির মাটি কাটলেই হয়ে যাচ্ছে পুকুর। আর সেই মাটি বিক্রি করে আয় করছে লক্ষ লক্ষ টাকা। প্রশাসনের নজরদারি এড়াতে দিনের চেয়ে রাতেই চলছে পুকুর খননের কাজ। শুধু তিনিই নন,উপজেলার বিভিন্ন স্থানেও থেমে নেই পুকুর খননের কাজ।
আর পুকুর খননের মাটি বিক্রির পর তা নেওয়া হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন যানবাহনে এসব মাটি পরিবহনের ফলে নষ্ট হচ্ছে চলাচলের রাস্তাগুলো। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। মাটি পরিবহনের যান চালকদের বেশির ভাগই অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ। এদের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স বা গাড়ি চালানোর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা । এই নৈরাজ্য চলতে থাকলে চাষবাদের জন্য কৃষি জমি সংকট হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। অপরদিকে অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খননের কারণে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ট্রাক্টর মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি গাড়ির মাটি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৭০০ টাকায়। এদের একজন আলমগীর হোসেন জানান,তারা মাটি কেনে বিক্রি করেন। এতে তাদেও কিছুটা লাভ হয়। তবে বেশিলভাগ লাভ ভোগ করেন,যাদের কাছ থেকে মাটি কিনে নেন। এসব মাটি কাটা হয় এসকোভেটর মেশিনে। ঘন্টা চুক্তিতে তারা মাটি কেটে দেওয়ার কাজ করেন।
বলিহার গ্রামের রিংকু বলেন এই পুকুর গুলো সব সোহাগ কাটছে।কয়েক মাস আগেও এই জমিতে ধান হতো। পাশের টাতে অনেক বড়বড় আম গাছ ছিল। কিন্তু এখন সে গুলো কেটে পুকুর কাটছেন। এতে এই দিকের জমিতে বর্ষার সময় পানি বেরুবে না তখন হাজার বিঘা জমি পানিতে ডুবে যাবে।
জমির মালিক ছোটন বলেন আমাদের জমিতেও আম গাছ ছিলো কিন্তু আম ভালো হতোনা। তাই পুকুর কাটতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখি হয়। পরে সোহাগ এর কাছে ১০ বছরের জন্য, লিজ দিই। সে এই থানার ছাত্রলীগ সভাপতি। তাই তাকে কেউ কিছু বলেনি। সে পুকুর কেটেছে এর বেশি বলতে পারবোনা বলে ফোন কেটে দেন। বলিহার গ্রামের দিলিপ ও সুমন জানান,তারাও তাদের জমি লিজ দিয়েছেন। সেই জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে।
এবিষয়ে অনেকেই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, যারা দেখভাল করবেন,তাদের সাথে ডাইরেক্ট কিংবা ইনডাইরেক্ট যোগাযোগ ব্যতি রেখে প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে এভাবে কাজ চলতে পারেনা। তাদের ভাষাঅভিমতয় সিন্ডিকেট চলমান রয়েছে। যার ফলে ভয়ে,অনেকেই প্রতিবাদ করতে চাননা।
স্থানীয় কৃষিবিদদের
অভিমত, পুকুর একটি কৃষি কিন্ত একটির জন্য অন্যটির ক্ষতি হোক এটা কাম্য নয়। মাছে ভাতে বাঙ্গালি এই প্রবাদ নিয়ে মৎস্য চাষে এই দেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। কিন্তু এক শ্রেনী অসাধু ব্যবসায়ীরা আবাদী জমি নষ্ট করে পুকুর খননে মেতে উঠেছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এর প্রতিরোধ করা সম্ভব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, রাতভর রাস্তা দিয়ে মাটি বোঝাই ট্রাক্টর চলে, ট্রাক্টরের বিকট শব্দে ঠিকভাবে পড়ালেখা করতে পারি না। মাটি খেকোদের কারণে আমার মা বাবা সারাদিন খাটাখাটনি করে রাতে একটু শান্তিতে ঘুমাবে, সে উপায় নেই।
বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাইনুল ইসলাম মুক্তা বলেন, মাঝে মধ্যে প্রশাসনের দু’একটি অভিযান চললেও কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না কৃষিজমিতে পুকুর খনন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহানুর রহমান সোহাগ জানান, আমি এলাকায় পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষের ব্যবসা করি। অনেক সময় লিজ নিয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করি। তবে যে পুকুরগুলো সংস্কার করার মতো, শুধু সেই পুকুরগুলো লিজ নিয়ে খনন করি। কোন আবাদী জমি লিজ নিয়ে পুকুর খনন করি নাই।
রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাকিবুল ইসলাম রানা বলেন, ছাত্রলীগের কোন নেতা কিংবা কর্মী পদ পদবি ব্যবহার করে অবৈধ কোন কর্মকান্ডে জড়িত থাকে, সেটা প্রমানিত হলে তাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
বাঘা উপজেলা নির্বাহি অফিসার পাপিয়া সুলতানা বলেন, কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে ভূমি আইন অপেক্ষা করে খনন করা হচ্ছে এমন খবর পেলে অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে অবৈধভাবে পুকুর খনন করা ব্যক্তির জরিমানা ও ভেকুর ব্যাটারি জব্দ করা হয়েছে।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, অবৈধ্য পুকুর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদটি শেয়ার করুন