বাঙালির ঐতিহ্য পান্তা

প্রকাশিত: ১২:০১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০১৬

বাঙালির ঐতিহ্য পান্তা

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পান্তা ভাত। গ্রামের বড় একটা অংশ এই গরমে পান্তা ভাত খেয়ে কাজে বেরিয়ে পড়ে। তীব্র গরমে মাঠে কৃষিকাজ করতে এখনও গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পান্তার জুড়ি নেই।

শুকনো পোড়া মরিচ, কাঁচা পেঁয়াজ আর লবন দিয়ে পান্তা খেয়ে গ্রামের গেরস্তীদের কী আনন্দ।’ শুধু গ্রীষ্ম কেন সারাবছরই গ্রামঞ্চলে নিম্ব বিত্ত মানুষ পান্তা খেয়েই সকালের নাশতা সারেন। কিন্তু এই ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ইদানিং আর সনাতন বাঙালি রান্নার মেনুতে পান্তা ভাতের নাম ওঠে না। শুধুমাত্র পহেলা বৈশাখ এলেই আমাদের শহুরে মানুষজন পান্তা-ইলিশ খান। সারাবছর আর পান্তা খাওয়ার নাম নেন না কেউ।

সাধারনত রাতে ভাত খাওয়ার পর বেঁচে যাওয়া ভাতগুলোতে অতিরিক্ত জল ঢেলে মাটির পাতিলে সারারাত সংরক্ষণ করতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে পুরোটা ভাত যেন পানির নিচে থাকে। তবে, খুব বেশি পানি নয়। উপরে ঢাকনা দিয়ে রাখতে হবে।

পরদিন সকালে তৈরি পান্তা। এর অনেক রকমফেরও আছে। যেমন, পান্তার ভাতটা একটু শক্ত ও অবিকৃত যারা পছন্দ করেন, তারা রাতে ভাতটা একটু শক্ত অবস্থায় নামিয়ে নেন। জুড়িয়ে যাওয়ার পর পানি ঢালেন।

কেউ কেউ আবার ভাতটা একটু নরম করে নেন। এর জন্য রাতের ভাতটা একটু বেশি সিদ্ধ করতে পারলে ভাল। অল্প গরম থাকতে থাকতে পানি ঢেলে দিতে হবে। পান্তার সঙ্গে যে অনুসঙ্গগুলো ভাল যায়, তার মধ্যে প্রথম দিকে রয়েছে আলুর ভর্তা। সর্ষের তেলে শুকনো লঙ্কা আর পেঁয়াজ ভেজে সিদ্ধ আলুর সঙ্গে ভাল করে মেখে নিলেই তৈরি আলু ভর্তা। এর সঙ্গে যদি সামান্য লবন আর একটা কাঁচা মরিচ পাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই।

কিন্তু যান্ত্রিক সমাজের ডামাডোলে বাঙালির এই চিরপরিচিত পান্তাও এখন বিলুপ্তির পথে। কিষাণ-কিষাণী এখন আগের মত পান্তা খেতে ভুলে যাচ্ছেন। এর বদলে এসে গেছে তৈরি হালুয়া পরোটা, সবজি ভাজি। গ্রামের মানুষও ইদানিং পান্তা ছেড়ে এসবের দিকে ঝুঁকেছে।

অথচ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত, গরম ভাতের তুলনায় পান্তা অনেক বেশি উপকারি। পুষ্টিবিদরাও বলছেন পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এতে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে। সবচেয়ে বড় কথা পান্তা ভাত শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এই গরমে।

বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, গরম ভাতে যেখানে মাত্র ২১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে, সেখানে পান্তায় থাকে ৮৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। এছাড়াও ১০০ গ্রাম পান্তাভাতে ৩০৩ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৮৩৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে।

১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, গরম ভাতে সেখানে মাত্র ৩.৪ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পানিতে রাখা হয় বলে স্বল্প অ্যালকোহলের উপস্থিতির জন্য পান্তা ভাত খেয়ে অনেকের ঝিমুনি ভাবও আসে।

তাই বিলুপ্তির পথে থাকা বাঙালির ঐতিহ্য পান্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। শুধু পয়লা বৈশাখের সকালে রমনার বটমূলে পান্তা-ইলিশ না খেয়ে অন্যান্য সময়েও খেতে পারেন পান্তাভাত। যা স্বাস্থ্যের জন্যও বেশ উপকারি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

December 2023
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31