এসবিএন ডেস্ক:
শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত দাবী-দাওয়া চলতি মাসের মধ্যে মেনে না নিলে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন শিক্ষকরা।
আগামী ২রা জানুয়ারী এই কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
অন্যদিকে পৃথক এক কর্মসূচির অংশ হিসাবে প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসক এবং ২৬টি ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তারা গতকাল দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মচারী বাদে সকলেই এখন দাবী দাওয়া আদায়ে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গতকাল একই সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
মূল সংবাদ সম্মেলন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে।
সেখানে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছিলাম।
এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। নিজেদের মর্যাদার প্রশ্নে এ অবস্থা থেকে ফিরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।
একই সঙ্গে তিনি বলেন, চলতি মাসের মধ্যে দাবী না মানলে আগামী ২রা জানুয়ারী ফেডারেশনের সভা থেকে একযোগে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সেটা কমপ্লিট শাটডাউনের (সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি বন্ধ) মতো কর্মসূচিও হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর মতোই সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল থাকবে।
এ ছাড়া অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে জ্যেষ্ঠ সচিবদের যে জায়গায় রাখা হয়েছে সেই জায়গায় গ্রেড-১ প্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করা হবে।
কিন্তু প্রকাশিত বেতন কাঠামোয় এর প্রতিফলন ঘটেনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।
তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থায় অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো বাস্তবায়িত হলে সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর তুলনায় গ্রেড-১ প্রাপ্ত শিক্ষকদের সংখ্যা অর্ধেক কিংবা তারও নিচে নেমে আসবে।
গ্রেড-১ প্রাপ্ত শিক্ষকদের থেকে সুপারগ্রেডের ২য় ধাপে যাওয়ার কোনো সুযোগ ও নির্দেশনা এই গেজেটে কিংবা অন্য কোনো পরিপত্রে এ পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি।
এমনকি শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে দেয়া সুস্পষ্ট তিনটি আশ্বাসের দুটির’ই বরখেলাপ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোর প্রকাশিত গেজেটের সংশোধন এবং প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ ও বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে গতকাল রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর প্রমুখ শিক্ষকবৃন্দ ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনে করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম শিক্ষক সমিতির দাবিগুলো তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাতিল সিরাজ, সমিতির সদস্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান, অধ্যাপক আনসার উদ্দীন, সৈয়দা নুসরাত জাহান ও আবদুল আলীম প্রমুখ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় এবং বেতন-বৈষম্য দূরীকরণ ও মর্যাদা রক্ষার দাবিতে ৫ দিনের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
২৮শে ডিসেম্বর থেকে এ কর্মবিরতি শুরু হবে, চলবে ২০১৬ সালের ২রা জানুয়ারী পর্যন্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষক সমিতি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি অর্থমন্ত্রী। বরং তাদের অমর্যাদা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার শরীফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, সোনালী দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়া শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
শিক্ষকদের দাবিগুলো : শিক্ষকদের প্রধান দাবি অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করা।
অন্যান্য দাবীগুলো হলো। শিক্ষকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যবর্তী সময়ে ঘোষিত বেতন কাঠামো পুনঃনির্ধারণ করে সকল বৈষম্য দূরীকরণপূর্বক সিলেকশন গ্রেড।
অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা সিনিয়র সচিবের সমতুল্য করা;
অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা পদায়িত সচিবের সমতুল্য করা;
সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের বেতন কাঠামো ক্রমানুসারে নির্ধারণ করাসহ শিক্ষকদের যৌক্তিক বেতন স্কেল নিশ্চিত করা।
রাষ্ট্রীয় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স-এ প্রত্যাশিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী পদমর্যাদাগত অবস্থান নিশ্চিত করা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তাদের অনুরূপ গাড়ী ও অন্যান্য সুবিধা শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত করা।
প্রকৃচি বিসিএস সমন্বয় কমিটি : বেতন স্কেলে সিলেকশ গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল;
চাকরির বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে গতকাল থেকে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করছে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি।
প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসক এবং ২৬টি ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের চাকরিজীবীদের এ কর্মসূচি ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হবে।
সরকারি প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে ক্যাডার-ননক্যাডার বৈষম্যের সিদ্ধান্ত ও ইউএনওকে কর্তৃত্ব প্রদানমূলক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস স্মারক বাতিল, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন এবং সব ক্যাডার ও সার্ভিসে পদোন্নতির সমান সুযোগ সৃষ্টিতে সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি;
নিজস্ব ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিস বহির্ভূত সব ধরনের প্রেষণ বাতিল এবং পেশাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে তোলার দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে এই কমিটি।
তবে নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারীরা এ কর্মসূচির বাইরে থাকবে। এরপরও দাবী মানা না হলে লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক অফিসারদের কাল ব্যাজ ধারণ : পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল থেকে কাল ব্যাজ ধারণ করা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের সদস্যরা।
তারা বলেছেন, নতুন অনুমোদিত অষ্টম পে-স্কেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মর্যাদার অবনমন করা হয়েছে।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবী জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
সংবাদটি শেয়ার করুন