টাইমস নিউজ
‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস এবং রাজপথে তারা বুধবার এ কর্মসূচি পালন করবে। মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা, মামলা, গুম এবং খুনের প্রতিবাদে ও জাতিসংঘ কর্তৃক তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস এবং রাজপথে আগামীকাল বুধবার ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করা হবে। আমরা সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, ছাত্র সমাজের বুকে গুলি চালিয়ে বাংলার ইতিহাসে কোনো আন্দোলন দমন করা যায়নি।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পুরো দেশে আজ ভয়, সন্ত্রাস ও ত্রাসের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার এই দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চালিয়েছে বর্বর গণহত্যা। রাষ্ট্রযন্ত্র স্বৈরাচারী কায়দায় তার সর্বোচ্চ সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেছে নিরস্ত্র শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দমন করতে। পুরো বাংলাদেশের কালো রাজপথগুলো আজ আমাদের ভাই-বোনদের রক্তে রঞ্জিত। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি উন্মুক্ত গুলি চালিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বুক ঝাঁঝরা করেছে। একটি বুকে দশ-বিশটি বুলেটের আঘাত।’
‘সরকার পুলিশ, র্যাব, বিজিবিকে গুলি চালানোর গ্যারান্টি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমন করতে রাম দা, অস্ত্র, রড ও লাঠি হাতে লেলিয়ে দিয়েছে সরকার দলের ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের। তাদের এই যৌথ সন্ত্রাসী হামলায় শাহাদতবরণ করেছেন শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক। ২৫ জুলাইয়ের প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী এ পর্যন্ত ২৬৬ জন শহিদের নাম তালিকা প্রকাশ করা হলেও এ সংখ্যা সহস্রাধিক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
নয় দফা দাবির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘অবিলম্বে ছাত্র সমাজের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়ে দেশকে স্থিতিশীল করুন’।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঘোষিত ৯ দফা হলো:
১। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
২। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় ক্যাডার এবং সন্ত্রাসী কর্তৃক ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেশে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে পদত্যাগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শহিদ শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে ড্রাগ অ্যাডিক্ট বলে কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে এবং আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে পদত্যাগ করতে হবে।
৩। ঢাকাসহ যত জায়গায় ছাত্র-নাগরিক শহিদ হয়েছে সেখানকার ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে।
৪। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা হয়েছে, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরদের পদত্যাগ করতে হবে।
৫। যে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সেনা সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করেছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ যেসব সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে এবং যেসব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের নিরস্ত্র ছাত্র-নাগরিকদের ওপর গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে তাদের আটক করে হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে।
৬। দেশব্যাপী যেসব ছাত্র-নাগরিক শহীদ এবং আহত হয়েছে তাদের পরিবারকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৭। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দ্রুততম সময়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে।
৮। অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হল খুলে দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিয়ে সারাদেশের সমস্ত ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সোয়াট এবং আর্মি তুলে নিতে হবে।
৯। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না এই মর্মে অঙ্গীকার করতে হবে। ইতোমধ্যে গণগ্রেপ্তার ও পুলিশি হয়রানির শিকার সমন্বয়ক ও ছাত্র-নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে ও সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: [email protected]
Web Design by: SuperSoftIT.com