১৩ই এপ্রিল ২০২১ ইং | ৩০শে চৈত্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১
নির্মলেন্দু গুণ
কামরাঙ্গীর চরের নয়াগাঁও এলাকায় তৈরিকৃত শিমুলতলা মসজিদ সংলগ্ন আমার বাড়ির নাম হলো “বুড়িগঙ্গা”।
২০১৫ সালে, পৌণে এক কাঠা ক্রয়কৃত জমির ওপর আমি এই তিনতলা বাড়িটি তৈরি করি।
এই বাড়ির দোতলা থেকেই বুড়িগঙ্গার জলরেখা দেখা যায়।
তিনতলায় উঠলে তো কথাই নেই।
পাঁচ বছর আগে যখন বাড়িটি তৈরি হয়– তখন দোতলায় অবস্থিত আমার কক্ষটিতে বসে দক্ষিণের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে নদী ছাড়া আর কিছুই দেখা যেতো না।
গত কিছুদিন ধরে আমার পাশের একতলা বাড়িটিকে দোতলায় পরিণত করা হয়েছে। ঐ দোতলা ভবনটি এখন আমার বাড়ি ও বুড়িগঙ্গার মাঝখানে একটা দেয়াল তুলে দিয়েছে।
এখন নদী দেখতে হলে দোতলার পূর্বের দিকের জানালাটিতে যেতে হয়, বা উঠতে হয় তৃতীয় তলায়। তৃতীয়তলা ও বুড়িগঙ্গার মাঝে কোনো দেয়াল নেই।
নদীর এই পার ঘেঁষে একটা বিশাল অপরূপা কৃষ্ণচূড়া ও খুব পুরনো শিমুল গাছ আছে।টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে গাছটি যখন ফুলভারে নদীর জলের ওপরে নত হয়, তখন ঐ দৃশ্যটি থেকে চোখ ফেরানো যায় না।
করোনার অবসান হলে একবার আমার বাড়ির ছাদ থেকে বুড়িগঙ্গা নদী, নদীর ওপারের ক্রমসম্প্রসরমাণ খোলা মোড়া নদীঘাট, কেরানীগঞ্জের আলোকোজ্জ্বল বাড়িঘর, দেকানপাট, হাট বাজার, শপিং মল এবং বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী ভবন মিলে নদীর ওপারে রাতের বেলায় যে একটা অপরূপ সৌন্দর্য তৈরি করে– তা একবার নিজচোখে দেখে যাবেন।
২
আমি না থাকলেও আমার এই বাড়িটি তো থাকবে। তখন কী হবে? এইটা একটা বড় প্রশ্নই বটে।
আমি স্থির করেছি, এই বাড়িটি আমার স্মৃতিরক্ষার্থে সংরক্ষিত হবে। একটা ট্রাস্টমতো করে দিয়ে যাবো। বা আমার এই লেখাটাকেই আমার অভিপ্রায় বা ঘোষিত দলিল হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে– যদি আইনগত দিক থেকে তা একেবারেই অসম্ভব না হয়।
“কবি নির্মলেন্দু স্মৃতিভবন” এর নাম হতে পারে। এখনও চূড়ান্ত করিনি নামটা কী হবে। নামে কী বা আসা যায়?
বর্তমানে এই বাড়িটিতে যে যেখানে, যেভাবে বসবাস করে চলেছে– আমার অর্তমানেও সে সেখানে, সেভাবেই বসবাস করবে। এর একচুলও অন্যথা হবে না।
এই বাড়িটি বা বাড়ির কোনো রুম বা ফ্লোর বা ছাদ– কখনও ভাড়া দেয়া যাবে না, কখনও কারও কাছে বিক্রি করা যাবে না।
যারা বুড়িগঙ্গায় বর্তমানে বসবাস করছে, তারা পুরুষাণুক্রমে এই বাড়িটিতে বসবাস করতে পারবে।
আমি যে রুমটিতে বাস করি, সেটিকে আগ্রহী দর্শকদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। আমার কন্যা মৃত্তিকা, জামাতা আশুতোষ এবং আমার দৌহিত্র-দৌহিত্রী (পাবলো এবং বর্ণমালা) যখন খুশি এই বাড়িতে আসতে পারবে, বিশ্রাম করতে পারবে এবং মন চাইলে আমার “সংরক্ষিত রুমটি”তে অস্থায়ীভাবে থাকতে পারবে।
আশা করি, বাংলাদেশ সরকার এবং আমার রক্তবন্ধনে আবদ্ধ আপনজনেরা আমার এই সিদ্ধান্তকে অনতিক্রম্য বলে বিবেচনা করবেন।
Corporate Office:
6/A Eskatan Garden
Dhaka, Bangladesh.
Mobile: 017111-66826
Email: mansoumit@yahoo.com
Helpline - +88 01719305766