১৬ই জানুয়ারি ২০২১ ইং | ২রা মাঘ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১, ২০১৫
এসএনবিডেস্কঃসোমবার মধ্যরাতের আগেই পুরো আর্মি স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ, বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উসবের চতুর্থ দিনে মঞ্চ অলঙ্কৃত করেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা, ওস্তাদ জাকির হোসেন, পণ্ডিত উলহাস কাশলকর প্রমুখ। দক্ষিণী শিল্পীর কুচিপুরী নাচও দেখা গেলো প্রথমবার।
বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ উৎসবের শিরোমনিদের একজন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা এদিন ছিলেন আপন মেজাজে। মঞ্চে উঠেই উচ্চাঙ্গ সংগীতের তাত্ত্বিক দিক নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে তিনি শোনান রাগ যোগ কোষ। রাগ পরিবেশনার সময়টি শ্রোতার জন্য ছিল অনন্য অভিজ্ঞতা। আলাপের শুরুটা মৃদুমন্দ বাতাসে শান্ত সমুদ্রের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, ধীরে ধীরে তাই যেনো জোড়, ঝালায় পৌছে ক্রমান্বয়ে হয়ে ওঠে ঝড়-বৃষ্টিতে তুমুল উত্তাল সমুদ্রের তরঙ্গ। আলাপ, জোড় ও ঝালার মাধ্যমে পরিবেশনায় ছিল বর্ষীয়ানের অভিজ্ঞতার ছাপ। দীর্ঘদিনের অভ্যস্ত হাতের নিয়ন্ত্রিত টোকাগুলোর প্রতিটিই যেনো আলাদা আলাদা সুর শোনায়। পরে তিনি রূপক ও ত্রিতালে নিজের সৃষ্ট সুর বাজিয়ে শোনান। শিল্পীকে তবলায় সঙ্গত দেন পণ্ডিত যোগেশ সামসি।
জনপ্রিয় সরোদিয়া পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার আবারও সমৃদ্ধ করলেন ঢাকাবাসীকে। রাগ হেমন্ত পরিবেশনার সময় তিনি তবলিয়া পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজে যেমন মেতে ওঠেন দারুণ এক সওয়াল-জবাব পর্বে, দর্শক-শ্রোতাকেও তার স্বাদ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত করেননি। পরিবেশনায় ঝালা অংশটি ছিল সর্বাংশেই পরিণত এক বাদকের উপস্থাপনা। পরে মাঝ খাম্বাজে ঠুমরিও শোনান এই গুণী সরোদিয়া।
এবারের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হলেন কিংবদন্তী তবলিয়া আল্লারাখার ছেলে তবলিয়া ওস্তাদ জাকির হোসেন। শিল্পী এর আগে ঢাকা এলেও এই প্রথম বেঙ্গলের উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবের মঞ্চে পা রাখলেন। নাম শুনেই মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতাদের আরও বেশি ভক্তিতে ভেসে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন ত্রিতালে। লক্ষ্যণীয় বিষয়, তিনি যখন তবলায় টোকা দিয়ে আলাপ শুরু করেন তখন পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছিল স্টেডিয়াম জুড়ে। রুদ্ধশ্বাসে সবাই যেন বুঝতে চাইছিল কী যাদু দেখাবেন এই শিল্পী! পরে তিনি রেলা, কায়দা এবং ডমরুর ধ্বনি, লাহোরি গৎ, দুই বন্ধুর কথোপকথন, ট্রেনের শব্দ, বৃষ্টির শব্দ, মেঘের গর্জন, ঘোড়দৌড়ের শব্দ শোনান তার তবলায়। ফাঁকে ফাঁকে শব্দের পেছনের দৃশ্যকল্প বলতে গিয়ে নানা অঙ্গভঙ্গী করে দেখান যার ফলে হাসির ঝলকে কেঁপে ওঠে স্টেডিয়াম। তাকে সারেঙ্গীতে সঙ্গত করেন সাবির খান।
গতদিনে ড. রাজমের বেহালা চতুষ্ঠয়ীর পরিবেশনার সাক্ষী যারা হছেছেন, তারা চতুর্থ দিনে গণেশ রাজাগোপালান ও কুমারেশ রাজাগোপালানের পরিবেশনায় ভিন্নতর স্বাদ পেয়েছেন নিশ্চিত। সেটা তাদের বাদনভঙ্গী থেকে শুরু করে পরিবেশনার নানা আঙ্গিকের কারণে। তাদের প্রথম পরিবেশনা রাগ মায়ামালবভগৌল, পরবর্তীতে রাগ শ্রীরঞ্জনী পরিবেশনা বিশেষ আঙ্গিক সাগাসুগা মৃদঙ্গম তালম, রাগম থানাম পল্লবী ও রাগ সুচরিত্র বাজিয়ে শোনান শিল্পীদ্বয়। তাদের সঙ্গত করেন আর শঙ্কর নারায়ণন, এস কৃষ্ণকস্বামী ও উৎপল রায়।
চতুর্থ দিনের সূচনা হয় দক্ষিণী ধারার কৃচিপুরি নৃত্যশিল্পী দম্পতি গুরু রাজা রেড্ডি ও রাধা রেড্ডির পরিবেশনার মাধ্যমে। তাদের সঙ্গ দিয়েছেন ভাবনা রেড্ডি, কৌশল্য ও ইয়ামিনি রেড্ডি সঙ্গ। তাদের পরিবেশনার শুরুটা ‘গণপতি বন্দনা’ দিয়ে, এরপর শিবের তান্ডবনৃত্য, এবং সবশেষটা কৃষ্ণলীলা বর্ণনার মাধ্যমে। তাদের সঙ্গে যন্ত্র সঙ্গত করেন কিরণ কুমার, লাবণ্য সুন্দরম ও বান্না ভাস্কর রাও।
দিনের শেষ শিল্পী হিসেবে মঞ্চে ওঠেন পণ্ডিত উলহাস কাশলকর। বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের প্রধান গুরু রাগ কোমল ঋষভ আশাবরী ও ভৈরব বাহার পরিবেশনা করেন তিনি। রাগ ভৈরবীতে ঠুমরিও শোনান সবশেষে। তাকে সঙ্গত দেন পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকর, সুধীর নায়েক, তালহা বিন আলী ও সামিহান কাশলকর।
Corporate Office:
6/A Eskatan Garden
Dhaka, Bangladesh.
Mobile: 017111-66826
Email: mansoumit@yahoo.com
Helpline - +88 01719305766