বহ্নি চক্রবর্তীঃ
গীতার পটভূমিকা হিসাবে বৈদিক ধর্মের শাস্ত্রগ্রন্থসমূহ এবং সেই শাস্ত্রগ্রন্থসমূহের স্থান না জানলে গীতা সম্যক্রূপে বোঝা যায় না । আপনারা সকলে ধর্মপরায়ণ । আপনাদের যে ধর্ম তা হচ্ছে হিন্দুধর্ম – স্বামীজীর কথায় বৈদিক বা বৈদান্তিক ধর্ম । তার ভেতরে কি রয়েছে তা জানা আপনাদের অবশ্য কর্তব্য । একজন মুসলমানকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তাঁর ধর্ম কি, তিনি বলবেন, ‘আমি মুসলমান’ এবং হয় তো কোরান থেকে কিছু উদ্ধৃতিও দেবেন । হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ঐ প্রশ্ন করা হলে অনেকেই পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারবেন না । কেউ কেউ কিছু পুরাণকাহিনী, কিছু রামায়ণ-মহাভারতের কথা, অথবা গীতার অস্পষ্ট ধারণা নিয়ে কিছু হয়তো বলতে পারবেন । আমরা হিন্দু । আমাদের নিজেদের ধর্মের ওপর ততটা টান নেই, যতটা আছে খৃষ্টান বা মুসলমানদের তাদের নিজেদের ধর্মের ওপর । স্বামীজী একবার কাশ্মীরে গিয়ে একজন দরিদ্রা মুসলমান বৃদ্ধা রমণীকে প্রশ্ন করেছিলেন – ‘মা তোমার ধর্ম কি ?’ তাতে সে রমণীটি বলেছিলেন, ‘খুদা কী মেহরবানীসে মৈ তো মুসলমানী হূ ।’ – ‘ঈশ্বরের দয়ায় আমি মুসলমানী’ । আমরা কিন্তু ঠিক এইভাবে অনুভব করি না যে, ভগবানের অপার করূণায় আমরা হিন্দু । এই হিন্দুধর্মের ভেতর ধর্মের যা কিছু উৎকৃষ্ট ভাব সবই নিহিত রয়েছে, এ কথা আমরা অনুভব করি না । আচারগতভাবে আমরা হিন্দুধর্মকে গ্রহণ করেছি এবং আমাদের অধিকাংশ ধর্মীয় অনুষ্ঠানই হচ্ছে আচারগত । সেইটাকেই আমরা হিন্দুধর্ম বলে মনে করেছি । কিন্তু বৈদিক যে ধর্ম সেটাকে আমরা বুঝতে পারি না । সেটা বোঝা কঠিনও কেন না বেদের ভাষা প্রচলিত সংস্কৃত ভাষা থেকে পৃথক এবং সেটা বোঝা সহজ নয় ।
সেই জন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতামুখে বেদান্তের তত্ত্ব উপস্থাপিত করেছেন, যাতে আমরা আমাদের বৈদিক ধর্মের যে শিক্ষা, সেই শিক্ষা লাভ করতে পারি । তাই গীতা হচ্ছে হিন্দুর অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ । তবে গীতা পাঠ করলেই গীতার অর্থবোধ হয় না । ভগবান শঙ্করাচার্য বলেছেন, এটি ‘দুর্বিজ্ঞেয়ার্থ’ – এই শাস্ত্রের অর্থ বোঝা অত্যন্ত কঠিন । গীতাশাস্ত্র শুনতে হয় উত্তম শিক্ষকের কাছে, জানতে হয় তার তত্ত্ব কি । তবেই গীতার সম্বন্ধে জ্ঞান জন্মে । গীতার যে শ্লোকগুলি আছে সেগুলি কেবল-মাত্র পাঠ করে আমাদের পিপাসা নিবারিত হতে পারে না । অর্থ-নির্ণয় ব্যতিরেকে গীতাপাঠ সম্পূর্ণ সার্থক হয় না ।
সে জন্য দক্ষ উওম শিক্ষক প্রয়োজন আমাদের প্রজন্মে র জন্য, অনেক কে দেখে থাকবেন গীতা সেমিনার বা গীতা র উপর ভিত্তি করে কথা বলতে। একবার ও কি উনাদের মনে প্রশ্ন জাগে আমাদের ধর্ম কে আমাদের ই বাঁচাতে হবে আমাদের কে ধরে রাখতে হবে, পরের ধর্ম যতই সুন্দর হোক না কেন নিজ ও ধর্ম শ্রেয়। সেজন্য আমরা কি একত্র হতে পারি না, পারি না সপ্তাহে একদিন গীতা র উপর শিক্ষা চালু করতে প্রতিটি শহরে, প্রতি টি গ্রামে, এখানে সব চাইতে বড় সমস্যা আমরা গ্রুপিং করতে শুরু করি।
তাই আমাদের কোন শিক্ষা ভিতরে গিয়ে পৌঁছায় না। নিজের ধর্ম কে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। তবে অবশ্যই শুদ্ধ উচ্চারনের মাধ্যমে। যাতে আজ যে শিশু জন্ম নিয়েছে এ পৃথিবীতে সে তার অনুজ কে যেন দেখতে পায় আগামীতে ধর্মের পথে চলতে। ধর্ম যদি অস্তিত্ব হয় সহজ ভাবে ধর্ম কে উপস্হাপন করা আমাদের কর্তব্য । আমরা দায় বদ্ধ ভগবানের কাছে ভুললে তো চলবে না ।
সংবাদটি শেয়ার করুন